স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য গুলি আলোচনা করো | Discuss the Sustainable Development Goals

Photo of author

Follow G-News

অন্যদের শেয়ার করুন

স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে United Nations General Assembly ২০১৫ সালে যে ১৭টি সংকল্পকে গ্রহণ করেছিল সেগুলিকে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য (Sustainable Development Goals/SDGs) বলে মূলত ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যকে পূরণ করাই হল এর উদ্দেশ্য। তাই একে অনেক সময় ‘এজেন্ডা ২০৩০’ নামেও অভিহিত করা হয়। স্থিতিশীল উন্নয়নের এই ১৭টি লক্ষ্য হল-

(১) দারিদ্রতা নির্মূলকরণ (No Poverty): স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হল সমগ্র বিশ্ব থেকে সমস্ত ধরনের দারিদ্রতার অবসান ঘটানো। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। মূলত ২০৩০ সালের মধ্যে সমগ্র বিশ্বের অন্তত ৫০ শতাংশ দারিদ্রতা দূরীকরণ হল এর উদ্দেশ্য।

(২) ক্ষুধার্তের সংখ্যা শূন্যে নামানো (Zero Hunger): SDGs-এর দ্বিতীয় লক্ষ্য হল সমগ্র বিশ্বে ক্ষুধার্তের সংখ্যা শূন্যে নামানো। এই উদ্দেশ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির ব্যবস্থা, দীর্ঘমেয়াদী কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

(৩) সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল সাধন (Good Health and Well-being): SDGs এর তৃতীয় লক্ষ্য হল সমগ্র বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো ও তাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল সাধন করা। এই উদ্দেশ্যে শিশু মৃত্যুর হার কমানো, মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার কমানো, ছোঁয়াচে রোগকে প্রতিরোধ করা, স্বাস্থ্যকর মাতৃত্বের ব্যবস্থা করা, পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ, পথ দুর্ঘটনা রোধ করা, টীকাকরণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

(৪) গুণগত শিক্ষার ব্যবস্থা করা (Quality Education): SDGs-এর চতুর্থ লক্ষ্য হল প্রত্যেকের কাছে গুণগতভাবে উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করা। যাতে করে প্রত্যেকটি মানুষ জীবনবাদী শিক্ষার সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা করা হল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এই কারণে বিনা মূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, উন্নত মানের কারিগরি ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা ইত্যাদির ওপর জোর দেওয়া হয়।

(৫) লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠা করা (Gender Equality): SDGs-এ পঞ্চম লক্ষ্য হল সমগ্র বিশ্বে লিঙ্গ সাম্য প্রতিষ্ঠা করা এবং সমস্ত নারী ও কন্যাদের ক্ষমতায়ন ঘটানো। এই উদ্দেশ্যে নারীদের শিক্ষার উন্নতি সাধন, সমস্ত ধরনের শোষণ বঞ্চনা ও নির্যাতনের অবসান ঘটানো, মজুরি প্রদান, সাম্য প্রতিষ্ঠা করা,আইনগত সুরক্ষা প্রদান করা ইত্যাদির উপর জোর দেওয়া হয়।

(৬) বিশুদ্ধ জলের স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা (Clean Water and Sanitation): SDGs এর ষষ্ঠ লক্ষ্য হল প্রত্যেকের জন্য বিশুদ্ধ জল এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা। এই উদ্দেশ্যে পানীয় জলের বিশুদ্ধকরণ, পানীয় জল সংরক্ষণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, নিরাপদ স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

(৭) সাশ্রয়ী মূল্যের এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির ব্যবস্থা করা (Affordable and Clean Energy): বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে সাশ্রয়ী এবং আধুনিক শক্তি বিশেষ করে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রদান করা SDGs-এর অন্যতম লক্ষ্য।

(৮) শালীন কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Decent Work and Economic Growth): প্রত্যেকের কাজের ব্যবস্থা করা তথা বেকারত্ব দূর করা, উন্নত কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা, উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি করা, শিশুশ্রম রোধ করা ইত্যাদি SDGs-এর অন্যতম লক্ষ্য।

(৯) শিল্প উদ্ভাবন এবং পরিকাঠামোর উন্নতি সাধন (Industry Innovation and Infrastructure): দীর্ঘমেয়াদী শিল্পায়ন ঘটানো, শিল্পের জন্য উন্নত পরিকাঠামো তৈরি করা, নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপন করা, বাজারের বিস্তার ঘটানো ইত্যাদিও SDGs-এর লক্ষ্য।

(১০) অসাম্য হ্রাস করা (Reducing Inequality): বিশ্ব থেকে অর্থনৈতিক সামাজিক, ধর্মীয় অসাম্যগুলিকে দূরীকরণ করা এবং সার্বজনীন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা SDGs-এর আরেকটি লক্ষ্য।

(১১) স্থিতিশীল শহর ও সম্প্রদায় গঠন (Sustainable Cities and Communities): প্রত্যেকের জন্য বসবাসযোগ্য ও সুরক্ষিত এবং দূষণমুক্ত শহর স্থাপন ও সহযোগিতামূলক সম্প্রদায় গঠন SDGs-এর অন্যতম লক্ষ্য।

(১২) সঠিক উৎপাদন ও ভোগ (Responsible Consumption and Production): প্রত্যেকটি মানুষ যাতে সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারে সেই অনুযায়ী উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ বর্তমান প্রজন্ম এমনভাবে সম্পদের ভোগ করবে যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষেত্রে সম্পদের ঘাটতি না ঘটে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা SDGs-এর বিশেষ আরেকটি লক্ষ্য ।

(১৩) জলবায়ুগত ক্রিয়াকলাপ গ্রহণ (Climate Action): দ্রুত যে পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে তার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা SDGs-এর অন্যতম লক্ষ্য।

(১৪) জলের নীচের জীবনের সুরক্ষা গ্রহণ (Life below Water): সমুদ্র, সাগর, উপসাগর প্রভৃতির নীচে যে সম্পদ এবং প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলির দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষার ব্যবস্থা করা SDGs-এর লক্ষ্য।

(১৫) ভূস্থলের জীবনের সুরক্ষা গ্রহণ (Life on Land): ভূমণ্ডলে যে সম্পদ, অরণ্য ও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলিকে সুরক্ষা প্রদানকরণ SDGs-এর আরেকটি লক্ষ্য।

১৬) শান্তি, ন্যায় ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান স্থাপন (Peace, Justice and StrongInstitutions): ন্যায়, শান্তিপূর্ণ সমাজ ও বিশ্ব গড়ে তোলা SDGs-এর অন্যতম লক্ষ্য।

(১৭) লক্ষ্য পূরণের জন্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা (Partnerships for the goals): SDGs-এর সমস্ত লক্ষ্যগুলি পুরণ করার জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত, ব্যবসা বাণিজ্যগত অংশিদারিত্ব ও যৌথ প্রচেষ্টা গড়ে তোলা এর একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

Leave a Comment