হেলেন লেপচা সম্পর্কে টীকা লেখো।

By

টীকা লেখো : হেলেন লেপচা আথবা সাবিত্রী দেবী। 

ভূমিকা : সিকিম কন্যা হেলেন লেপচা ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি 1902 সালে সিকিম হিমালয়ের দক্ষিণ প্রান্তের ছোট গ্রাম সাংমুতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আচুং লেপচা হলেন একজন লেপচা নেতা এবং তার মাতা ছিলেন একজন নেপালি। হেলেন লেপচার পিতা তাকে ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উদ্দ্যেশ্যে দার্জিলিং এর কার্শিয়ার শহরের স্কটস মিশনারী স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে তার আগ্রহ না থাকায় তিনি পরিবারের অমত থাকার সত্বেও ইংরেজি স্কুল থেকে বেরিয়ে আসেন। 

স্বাধীনতা আন্দোলনে হেলেন লেপচা : হেলেন লেপচা পাহাড়ী অঞ্চলে ঘুরতে বেশ ভালোবাসতেন, পড়ে  দার্জিলিং এর মধ্যে তারা বসবাস শুরু করলে দার্জিলিং এর পাহাড়ে তিনি বেশ ঘুড়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি পাহাড়ী জনগণ এবং লেপচা ও অধিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচার লক্ষ্য করেন এবং প্রায় 17 বছর বয়সে তিনি ব্রিটিশ সরকার এর অত্যাচারের প্রতি রুক্ষ হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। এখান থেকেই তার স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন শুরু হয়ে যায়। তিন স্বাধীনতা আন্দোলনের টানে পাহাড়ের আপার সৌন্দর্য ছেড়ে কলকাতা শহরে চলে আসেন। সেখানে তার দিদির সাথে থেকে খাদি কাপড় তৈরি করা শেখার উদ্দেশ্যে একটি স্বদেশী স্কিলয়ে ভর্তি নেন। সেখান থেকে খুব শীঘ্রই খাদি চরকা চলতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ফলস্বরূপ তাকে খাদি প্রদর্শনীতে কলকাতা স্কুলের প্রতিনিধি রূপে পাঠানো হয়। এরপর তিনি 1920 সালে স্বরমতি আশ্রমে গান্ধীজির সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতেই মহাত্মা গান্ধী হেলেনের নামটি পরিবর্তন করে সাবিত্রী দেবী রাখেন। 

আরও পড়ুন:  উত্তরবঙ্গের জৈন ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করো?

সাবিত্রী দেবী কতৃক স্বাধীনতা আন্দোলনের কিছু বিশিষ্ট ঘটনা নিন্মে আলোচনা করা হল –

1) 1921-22 সালের অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবী রূপে সাবেক যুক্তপ্রদেশ ও বিহারের গ্রামঅঞ্চলে সত্যাগ্রহ আন্দোলন সংগঠিত করার দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং তিনি জনগণকে সফলভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের লক্ষ্যে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। 

2) 1921 সালের অসহযোগ আন্দোলনের চরম পর্বে কলকাতা শহরের মহম্মদ আলী পার্কে মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও বাসন্তী দেবীর উপস্থিতে আয়োজিত এক মহতী জনসভায় ঝরিয়ার কয়লাখনি অঞ্চল থেকে শ্রমিকদের একটি বিশাল মিছিলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন সাবিত্রী দেবী। 

আরও পড়ুন:  গৌড়ের পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।

3) 1922 সালের  জানুয়ারি মাসে শিলিগুড়ি শহরের বুকে সাবিত্রী দেবী এবং কংগ্রেসের সেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল বিদেশি পণ্য বয়কট অভিযান। 

4) তিনি 1930-40 এর দশকে দার্জিলিং এর পাহাড়ী এলকগুলিতে একদিকে সমাজসেবা অন্যদিকে ব্রিটিশবিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তোলার কাজে মননিবেশ করেছিলেন। 

5) তিনি 1932 সালে কার্শিয়াং এর প্রথম মহিলা সভাপতি হন এবং তিনি পাহাড়ী উপজাতি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন কল্যাণ মূলক কাজে মননিবেশ করেন। 

6) তিনি দার্জিলিং এর মধ্যে একটি নারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। 

7) তিনি1933 সালে ডান্ডী মার্চ ও 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান করেন। 

আরও পড়ুন:  উত্তরবঙ্গের ভূ-প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক ভূগোল আলোচনা করো।

উপরিক্ত অংশে আলোচিত আন্দোলনগুলিতে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি হেলেন লেপচা আরও অন্যান্য স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সারা জীবন ধরে বিভিন্ন সমাজ সেবা মূলক কাজ করেছেন। 

উপসংহার : সাবিত্রী দেবী অর্থাৎ হেলেন লেপচা ছিলেন একজন উপজাতির মুক্তি যোদ্ধা, যিনি ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এর পাশাপাশি একজন সমাজসেবীও ছিলেন। তবুও তার নাম শুধুমাত্র দার্জিলিং এর ‘গোর্খা’ ও ‘লেপচা’ সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিচিত ছিল। তার এই আজীবন কাজের কারণে তাকে স্বাধীন ভারত সরকার দ্বারা 1972 সালে 15ই আগস্ট তাম্রপত্র ও পেনশন দ্বারা সন্মানিত করা হয়েছিল। এর কিছু সময় পর স্বাধীনতা সংগ্রামী হেলেন লেপচা 1980 সালে মৃত্যু বরং করেন। 

Leave a Comment