আজকের পোস্টে তোমাদের সাথে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল যেটি উচ্চমাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ভাবে সহায়তা করবে।
সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ
ভূমিকা: প্রতি বৎসর সারা ভারবর্ষে লক্ষাধিক মানুষ পথদুর্ঘটনায় মারা যান এবং বেশ কয়েক লক্ষ মানুষ বিকলাঙ্গ অবস্থায় জীবস্মৃত হয়ে বাকী জীবন পরম লাঞ্ছনায় অতিবাহিত করতে বাধ্য হন। দেশের বাকি অংশের মত পশ্চিমবঙ্গেও পথদুর্ঘটনায় মৃত ও আহতের বাৎসরিক সংখ্যা বেশ কয়েক সহস্র। যানবাহন চালক, আরোহী ও পথচারীদের অসাবধানতা বশত জীবনের এই অকরুণ অপচয় রুখতে এবং পথ নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গত ৮ই জুলাই ২০১৬ তে পশ্চিমবলা সরকার ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচি গ্রহণ করে। পথচারী হিসাবে এই ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ আন্দোলনটিকে আমাদের সকলকে বুঝতে হবে।
দুর্ঘটনার স্বরূপ: প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই অনিবার্যভাবে কোথাও না কোথাও পথ দুর্ঘটনার খবর দেখি। দুর্ভাগ্যবশত নিজেরাও কখনও কখনও এই দুঃখজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। এর ফলে ঘটে শত শত মৃত্যু। আহতের সংখ্যাও কম নয়। এগুলি ঘটে পথচারী কোথাও রাস্তা পার হবার সময়, কখনও পরস্পর বিপরীত দিক থেকে আগত যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে, কখনও ওভারটেক করতে গিয়ে, কখনও বা আরোহী অসাবধান বশত যানবাহনে উঠানামা করতে গিয়ে। এই ভাবে মৃত্যু বসে থাকে পথের আনাচে-কানাচে যানবাহনের ছদ্মবেশে এবং পথচারীদের অসাবধানতায়।
সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ: রাজ্যের এই ক্রমবর্ধমান পর্থদুর্ঘটনায় বিচলিত হয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের মানুষকে পথ নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করতে এই ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ স্লোগানটি বেঁধে দেয়। অর্থাৎ নিরাপদে গাড়ি চালিয়ে যেমন গাড়ি চালক বাঁচবে, তেমনি বাঁচবে পথচারীর প্রাণ। এই স্লোগানকে সামনে রেখে সমগ্র জেলা, মহকুমা তথা পঞ্চায়েত স্তরে পথনিরাপত্তা কর্মসূচিটিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকারি উদ্যোগের সারমর্ম: যানবাহন চালক তথা প্রতিটি পথচারীর মূল্যবান জীবনের সুরক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ আন্দোলন কয়েকটি পথ নিরাপত্তা নীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যেমন- (১) প্রত্যেক পথ ব্যবহারকারীর জীবন অতি মূল্যবান। (২) কি যানবাহন চালক, কি আরোহী, কি পথচারী-সকলকেই শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। কেননা এর মধ্যে যে কেউ পথের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কারও না কারও জীবন পর্যন্ত দিয়ে এই ভুলের মাশুল দিতে হয়। (৩) হেলমেট পরে বাইক চালাতে বা চড়তে হবে। (৪) ট্রাফিক আইন আরও কঠোর করতে হবে। (৫) রাস্তার সিগন্যাল সিস্টেম আরও উন্নত করতে হবে। (৬) ওভারলোডিং বা রাফ ড্রাইভিং করা যাবে না। (৭) ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ আন্দোলনটি সমস্ত জন সংগঠন, স্কুল-কলেজ, ইলেকট্রনিক মিডিয়া মারফৎ সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। (৮) যে জেলা, যে মহকুমা বা যে পঞ্চায়েত স্তরে সব চেয়ে কম পথ দুর্ঘটনা ঘটবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। এইভাবে এই পথ নিরপত্তা আন্দোলনকে সফল করা যাবে।
পথ দুর্ঘটনার কারণসমূহ: পথ দুর্ঘটনার কারণ অনেক। বেপরোয়া গাড়ি চালানো, লাইসেন্সবিহীন চালকের হস্তক্ষেপ, মদ্যপ ড্রাইভারের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, আনফিট গাড়ি পথে নামানো, বাসে বাসে রেষারেষি, পথচারীর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না থাকা, যাত্রী তোলা-নামানোর সময় অহেতুক তাড়াহুড়ো করা, মিছিল, পথ অবরোধ, পথসভা, ফুটপাথ দখল, রাস্তার খানা-খন্দ, রাস্তার পাশে বেআইনী পার্কিং ইত্যাদি বহু কারণে পথ দুর্ঘটনা ঘটে।
পথদুর্ঘটনা প্রতিকারের উপায়: মনে রাখতে হবে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। তাই রাস্তাঘাটের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমন তা সংখ্যায় তেমনি তার পরিসর। রাস্তাঘাট সংস্কার করতে হবে। সেইসঙ্গে যানবাহনের পাশাপাশি ওভারটেকিং নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভাবে আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদান। পথ পারাপার বিষয়ে পথচারীদেরও কঠোরভাবে আইন মানাতে হবে। নইলে সেখানেও শাস্তি দিতে হবে। ফুটপাথ দখল মুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
পথচারীদেরও তেমনি নিরাপদভাবে পথ পারাপার করতে হবে। রাস্তা পার হবার সময় প্রথমে ডানদিকে, পরে বাঁ দিকে এবং আবার ডান দিকে তাকিয়ে যানবাহন আসছে কিনা দেখে সতর্কভাবে রাস্তার অপর পারে যেতে হবে। রাস্তা পার হবার সময় যেখানে বৈদ্যুতিন বাতি আছে তা দেখে বা ট্রাফিক পুলিশের সংকেত অনুসরণ করে, জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পেরোতে হবে। সাবধানে যানবাহনে উঠানামা করতে হবে।
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’- আন্দোলনের সার্থকতা: আমরা-জানি, যে কোনো কাজই অনুশীলনের ফলে আরও নির্ভুল বা সুন্দর হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই’সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ আন্দোলনের ফলে মানুষের মনে পথনিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে, সন্দেহ নেই। এইখানেই এই স্লোগানের সার্থকতা।
উপসংহার: আমাদের অধিকাংশ সমাজসংস্কার মূলক আন্দোলন, মিটিং মিছিল, আলোচনা সভা ইত্যাদি আড়ম্বরপূর্ণ দেখনদারি কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। আশা করি এই জীবন নিরাপত্তমূলক এই আন্দোলনটি সেই দুর্দশায় পাতিত হবে না। সকল পথচারী এবং যানবাহন নিরাপদে পথের পাড়ি জমিয়ে এই সরকারি ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ আন্দোলনটিকে সার্থক করে তুলুক, এই আমাদের প্রার্থনা।