উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল প্রকল্প – বাঁকুড়া/পুরুলিয়াতে খরা | HS Geography Project Drought in Bankura and Purulia
উচ্চমাধ্যমিক এর ভূগোল বিষয় এর প্রজেক্ট টপিক ‘বাঁকুড়া/পুরুলিয়াতে খরা’ তোমাদের সাথে শেয়ার করা হল এখানে। যেসমস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে এই প্রজেক্টটি করতে বলেছে তারা এখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রজেক্টটি তৈরি করতে পারে। অতএব অপেক্ষা না করে প্রজেক্টটি পড়ো এবং দরকারে সংগ্রহ করে রাখো।
উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল প্রজেক্ট – ‘বাঁকুড়া/পুরুলিয়াতে খরা’
প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যা :
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমী ক্ষেত্র হল খরা প্রবণ। এখানে বার্ষিক গড়ে বৃষ্টিপাত 1100 থেকে 1600 মিমি। বর্ষাকালে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টি হয়। মে মাসে গড় তাপমাত্রা 50° সে. এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে 8°-10° সে.। বৃষ্টিপাত এই দুই জেলায় অনিশ্চিত এবং সবিরাম প্রকৃতির। পূর্বদিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি এবং পশ্চিমদিকে কম। এখানে ভৌমজলের প্রাপ্তি তুলনামূলকভাবে কম। গ্রীষ্মকাল জলস্তর গড়ে 6-17 মিটার নীচে নেমে যায়। কুমারী, দামোদর, শিলাই, কংসাবতী, বান্দু, চকা প্রভৃতি এখানকার অন্যতম অনিত্যবহ নদী।
তথ্য সংগ্রহ : খরা-সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশ্নমালাভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে এবং সরকারি প্রকাশিত নথি/তথ্যের ভিত্তিতে খরাজনিত পরিস্থিতির প্রকৃতি ও দুর্যোগের বৈশিষ্ট্য অনুধাবনের চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য : গ্রীষ্মকালে এখানে জলের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। পুকুর, খাল ও নদীতে গ্রীষ্মকালে জল থাকে না। অগভীর নলকূপ থেকেও গ্রীষ্মকালে জল পাওয়া যায় না। খরা সমস্যা মোকাবিলার জন্য নদী থেকে জলসেচ (River Lift Irrigation সংক্ষেপে RLI) পদ্ধতি, ক্ষুদ্র জলসেচ প্রকল্প, কুয়োর মাধ্যমে জলসেচ প্রভৃতি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা ও 5% মডেল-এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। 5% মডেল হল কোনো জমির 5% এলাকায় গর্ত/গাড়া/গাড্ডা খুঁড়ে রাখলে বৃষ্টির সময়ে ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত জল ওই গর্ত বা গাড্ডা দিয়ে মাটির ভেতরে সহজে প্রবেশ করে। এতে মাটির আর্দ্রতা বাড়ে। ভৌমজলস্তর সমৃদ্ধ হয় । চাষের সুবিধা হয়।
খরা সৃষ্টির কারণ : বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া অঞ্চলটি হল খরা প্রবণ অঞ্চল। কোন অঞ্চলে খরা সৃষ্টির পিছনে কিছু কারণ থাকে। সেই কারণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিন্মরূপ আলোচনা করা হল –
[A] প্রাকৃতিক কারণ :
১) অনিশ্চিত ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত : স্বাভাবিক বৃষ্টি ৭৫% এর কম এবং খুবই অনিয়মিত ও অনিশ্চিত হলে খরা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। থর্নথয়েট-এর (১৯৪৮) শুষ্কতা সূচক ০.৪-এর কম হলে খরা সৃষ্টি হয়।
২) বায়ুর দিক ও গতি পরিবর্তন : মৌসুমি বায়ু, জেটবায়ু দিক ও গতি পরিবর্তন করলে বা স্থির থাকলে খরা সম্ভাবনা প্রকট হয়ে ওঠে।
৩) জলবায়ুগত প্রভাব : দক্ষিণ দোলন-এর ঋণাত্মকদশা, এল নিনো, স্ট্যাটোস্ফিয়ারে আঞ্চলিক বায়ুপ্রবাহের পার্থক্য খরা সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৪) ভূ-উষ্ণায়ন : গ্রিন হাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্য বৃষ্টিপাতের চেয়ে বাষ্পীভবন বৃদ্ধি পেয়ে খরার প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
[B] মানবীয় কারণ :
১) বৃক্ষচ্ছেদন : মানুষ যথেচ্ছ অরণ্য বিনাশ করায় জলীয় বাষ্প তথা বৃষ্টিপাত হ্রাস পাচ্ছে ও খরার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২) ত্রুটিপূর্ণ ভূমি ব্যবহার : সেচযুক্ত জমিতে ভ্রান্ত ব্যবস্থাপনা দ্বারা সারাবছর শস্য চাষ, তৃণভূমিতে মাত্রাতিরিক্ত পশুচারণ খরা সৃষ্টি করে।
৩) অত্যধিক জল উত্তোলন : অত্যধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন ও ব্যবহারের ফলে ভৌমজলতল অবনমিত হয়ে খরা সৃষ্টি হয় ।
৪) দ্রুত নগরায়ণ : দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে যথেচ্ছ ভূমি ব্যবহার, পাকাবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ জমির আর্দ্রতা হ্রাস করে খরা প্রবণতা বৃদ্ধি করে।
প্রভাব : কোন অঞ্চলে খরা সৃষ্টি হলে তার কিছু প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, সেগুলি হল –
১) ফসল উৎপাদন ব্যাহত : খরার ফলে সেচ ও পানীয় জলের অভাবে কৃষিজ ফলন হ্রাস পায়, ফসল শুকিয়ে নষ্ট হয়।
২) জল সংকট : খরার সময় বৃষ্টিহীনতা ও ভৌমজলস্তর হ্রাস পাওয়ায় মানুষসহ সমস্ত জীবের পানীয় জলের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়।
৩. খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ : জলের অভাবে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য এবং প্রাণীজ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের তীব্র সংকট দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে। মানুষ অনাহারে দিন কাটায় ও প্রাণহানি ঘটে।
৪. বিপন্ন বাস্তুতন্ত্র : মাটিতে জলের অভাবে গাছপালা শুকিয়ে মারা যায়, বহু জলজ প্রাণী মারা পড়ে। খাদ্য ও জলের অভাবে স্থলজ প্রাণীরা অস্থায়ীভাবে পরিব্রাজন করায় বাস্তুতন্ত্রে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়। খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজাল বিঘ্নিত হয়ে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।
তথ্য বিশ্লেষণ ও সমাধান ও সিদ্ধান্ত : পুরুলিয়া জেলাতে গাঙ্গেয় সমভূমির তুলনায় খুব কম বৃষ্টিপাত হয় না। কিন্তু পাথুরে ঢালযুক্ত ভূমিভাগে খুব দ্রুত বৃষ্টির জল ভূপৃষ্ঠ প্রবাহরূপে নষ্ট হয়ে যায়। ভৌমজল হিসাবে সণিত হয় না। 1997 সাল থেকে জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা (watershed manage ment)-র মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ প্রবাহের হারকে কমিয়ে দিয়ে ভৌমজালের পরিমাণ বৃদ্ধি করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা :
- ভৌমজলের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ – মাঝারি উঁচুজমিতে মোট জমির 5% আয়তনের একাধিক। 1-5 থেকে
- মিটার গভীরতা বিশিষ্ট গর্ত খুঁড়তে হবে। এই জাতীয় গর্তকে স্থানীয়ভাবে ‘গাড়া’ বা ‘আচ্ছা’ (gara or gudda) বলে। বৃষ্টির সময় ভূপৃষ্ঠ জল প্রবাহ এই গর্তের মধ্যে প্রবেশ করে ও ভূপৃষ্ঠ প্রবাহের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। একে বলে ‘ মডেল’।
- অনেকসময় পুকুরের তলদেশ প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে দিয়ে জলকে অনুপ্রবেশের হাত থেকে রক্ষা করা হয়।
- ধান চাষের পরিবর্তে মরা প্রতিরোধকারী ফসলের চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়।
- ভৌমজলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করা বিশেষ জরুরি।
- বর্ষার আগে জমি খুঁড়ে দিয়ে বৃষ্টির পর খোড়া জমিকে খড়, পাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া দরকার। সেক্ষেত্রে বাষ্পীভবন কম হয়।
গ্রন্থপুঞ্জী :
- পরিবেশ : অনীশ চট্টোপাধ্যায়
- ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য সমূহ।
কৃতজ্ঞতাস্বীকার
আমার বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক / শিক্ষিকাবৃন্দ প্রত্যেকে তাদের জ্ঞান, ধৈর্য এবং পরম মমতায় এই প্রতিবেদন রচনায় আমাদের অপরিসীম সাহায্য করেছেন। এই কাজে আমার পরিবারের সদস্যরাও বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন এবং অসংখ্য উপায়ে আমাকে সাহায্য করেছেন।