ভূমিকা : কোঠারি কমিশনের রিপোর্টটি দীর্ঘ সমালোচনার সন্মুখীন হওয়ার পর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পর্ষদ বা ভারত সরকার দ্বারা 1968 সালে জাতীয় শিক্ষানীতি সর্বপ্রথম রচনা করা হয়। জাতীয় শিক্ষা পরিচলনার উদ্দেশ্যে “The Challenge of Education – A Policy Perspective” নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনের ফলাফল অনুযায়ী 1986 সলে এপ্রিল মাসে জাতীয় শিক্ষানীতি রচনা করা হয়। এই জাতীয় শিক্ষানীতিটি লোকসভায় পাস হয় 8 মে 1986 সালে এবং রাজ্যসভা দ্বারা অনুমোদন লাভ করে 13 মে 1986 সালে।
অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড : জাতীয় শিক্ষানীতি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড। সারাদেশ জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষার দুর্দশা ও অনুন্নয়ন দেখে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রাথমিক শিক্ষার দ্রুত মান উন্নয়নের জন্য যে কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন, তা হল অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড। জাতীয় শিক্ষানীতি চেয়েছিল অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। এই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করার আগে প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। তাতে প্রাথমিক শিক্ষার দুরাবস্থার বিভিন্ন দিক লক্ষ্য করতে পায় জাতীয় শিক্ষানীতি। যেমন –
১) এমন সব প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে বিদ্যালয় গৃহের কোনো অস্তিত্ব নেই।
২) শিক্ষক-শিক্ষিকার অপ্রতুলতা পরিলক্ষিত হয়।
৩) পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে।
৪) বেশীরভাগ বিদ্যালয়ে শৌচাগার নেই।
৫) শিক্ষার্থীর বাড়ি ও বিদ্যালয়ের মধ্যে বিশাল দূরত্ব।
৬) বিদ্যালয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। উপরোক্ত কারণগুলির কারণেই জাতীয় শিক্ষানীতিতে (1986) অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড কর্মসূচির সুপারিশ করা হয়।
অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ডের উদ্দেশ্য :
- প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন।
- প্রাথমিক বিদ্যালয় এর জন্য গৃহ নির্মাণ।
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ।
- শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
- শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
- বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার পরিবেশ রচনা করা।
- ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করা।
- প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে সব ঋতুতে শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার জন্য দুটি করে ঘর এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কমপক্ষে দুটি করে শিক্ষক থাকতে হবে। যার মধ্যে অবশ্যই একজন শিক্ষিকা এবং একজন শিক্ষক থাক আবশ্যক।
- বিদ্যালয়গুলিতে প্রয়োজনীয় পানীয় জল এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে।
- বিদ্যালয়গুলিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা সহায়ক উপকরন থাকতে হবে।
- শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশ ঘটানোর জন্য তার প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।
- বিদ্যালয়গুলিতে থাকতে হবে শিক্ষার প্রদানের প্রযজনীয় উপকরন। যেমন – মানচিত্র, চটি, মডেল, ব্ল্যাকবোর্ড, বিভিন্ন ধরনের খেলনা।