বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য – প্রবন্ধ রচনা | বাংলা প্রবন্ধ রচনা ‘বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যে’

By

বাংলার ঋতু/ বাংলার ঋতুবৈচিত্র

ভূমিকা: বাংলার প্রকৃতি ঋতুর মাধুর্যে ভরপুর। এখানে ঋতুর পরিবর্তনের সাথে প্রকৃতির রূপও বদলে যায়। প্রতিটি ঋতু নতুন করে বাংলার মাটিকে সাজায়, আর সেই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় বাংলার মানুষ। কবিগুরুর ভাষায়, “বাহিরে রয়েছে প্রকৃতির মুকুল, ভিতরে রয়েছে হৃদয়ের মুকুল”—এই হৃদয়ের মুকুল ফুটিয়ে তোলে বাংলার ঋতুগুলো।

গ্রীষ্ম ঋতু: বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে গ্রীষ্মকাল পশ্চিমবঙ্গে তার পদার্পণ করে। তীব্র সূর্যের তাপে বাংলার মাটি শুকিয়ে যায়, নদী-নালা, পুকুর-দীঘি যেন প্রাণহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু এই তাপেই পেকে ওঠে আম, লিচু, তরমুজের মতো রসালো ফল। গ্রামবাংলার মেঠোপথে খেজুরের রস আর তালপাখার বাতাসে খেটে খাওয়া মানুষের প্রাণে সজীবতা ফিরে আসে।

বর্ষা ঋতু: আষাঢ়-শ্রাবণ মাস বর্ষাকালের জন্য। বাংলার আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা আর মাটির বুকে বৃষ্টির ধারা নবজীবনের বার্তা বয়ে আনে। কৃষকরা তাদের জমিতে বীজ বপনে মগ্ন হয়, আর নদীগুলো আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে। বর্ষাকালের আনন্দ যেমন আছে, তেমনি আছে দুঃখও—অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা, ফসলের ক্ষতি এবং রোগব্যাধির প্রকোপ। তবুও, এই বর্ষা কৃষিনির্ভর বাংলার কৃষকের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।

আরও পড়ুন:  যুবসমাজ ও অপরাধ প্রবণতা প্রবন্ধ রচনা pdf Download

শরৎ ঋতু: ভাদ্র-আশ্বিন মাস শরৎকাল। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের দোলায় বাংলার প্রকৃতি সাজে। শরতের সোনালি আলো, শিউলি ফুলের গন্ধ, আর দেবী দুর্গার আগমনের বার্তা বাংলার মানুষের মনে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়। প্রকৃতি ও মানুষ একত্রে মিলেমিশে এই সময়টাকে উদযাপন করে।

হেমন্ত ঋতু: কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে হেমন্তের আগমন। শরতের মাধুর্যের পর হেমন্ত আসে পূর্ণতা ও মঙ্গলের বার্তা নিয়ে। বাংলার কৃষকের গোলা ভরে ওঠে সোনালী ধানে। নবান্নের উৎসব, নতুন ধানের ঘ্রাণ, সবমিলিয়ে হেমন্ত যেন বাংলার মাটিকে আরও উর্বর করে তোলে।

আরও পড়ুন:  বাংলার উৎসব - প্রবন্ধ রচনা

শীত ঋতু: পৌষ-মাঘ মাস শীতের প্রকোপের সময়। বাংলার শীতকালে কুয়াশায় ঢাকা সকাল, মৃদু ঠাণ্ডার হাওয়া, আর পিঠেপুলির গন্ধ বাংলার মানুষকে উষ্ণতার স্বাদ দেয়। শীতকালে বিভিন্ন শাকসবজি আর ফুলের সমারোহ বাংলার প্রকৃতিকে সৌরভমণ্ডিত করে। এই ঋতুতে বাঙালি সমাজ বিভিন্ন মেলায় মেতে ওঠে, আর শীতের আমেজ উপভোগ করে।

বসন্ত ঋতু: ফাল্গুন-চৈত্র মাস নিয়ে বসন্তকাল। এই ঋতুতে প্রকৃতি যেন নববধূর মতো সেজে ওঠে। গাছে গাছে নতুন পাতার কিশলয়, পলাশ-শিমুলের রঙে সেজে ওঠে বনভূমি। কোকিলের কুহু ডাক আর মধুমাসের হাওয়া বাঙালির মনে প্রেমের উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। বসন্ত উৎসব আর দোলযাত্রা এই ঋতুর বিশেষ আকর্ষণ।

ঋতুবৈচিত্র্যের প্রভাব: বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য বাংলার কৃষি, সমাজ এবং সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি ঋতু নতুন ধরনের ফসল, পোষাক, এবং উৎসব নিয়ে আসে। ঋতুবৈচিত্র্যের এই রঙিন চিত্র বাংলা সাহিত্যে, সংগীতে, এবং শিল্পকলায় বারবার ফুটে উঠেছে। কবি, লেখক, শিল্পীরা তাদের রচনায় বাংলার ঋতুবৈচিত্র্যের সৌন্দর্যকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন।

আরও পড়ুন:  সংবাদপত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা - প্রবন্ধ রচনা

উপসংহার: বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য প্রকৃতির এক অসামান্য উপহার, যা বাংলার মানুষকে প্রতিনিয়ত নতুন রূপে মুগ্ধ করে। কিন্তু, পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি ও বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এই ঋতুগুলির প্রকৃত সৌন্দর্য ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই, আমাদের উচিত এই ঋতুগুলির মাধুর্য এবং বৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করা, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মও এই প্রকৃতির রূপের সাথে পরিচিত হতে পারে।

জেনে রাখো::  উপরিক্ত এই প্রবন্ধ রচনাটি আরো তিনটি প্রবন্ধ রচনা এর অনুসরণে লেখা যেতে পারে। যথা:-

  • পশ্চিমবঙ্গের ঋতুতরঙ্গ নিয়ে প্রবন্ধ রচনা
  • পশ্চিমবঙ্গের ঋতুবৈচিত্র্য
  • বাংলার ঋতুবৈচিত্র

Leave a Comment