প্রত্যাহিক জীবনে পরিবেশের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা | উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা সাজেশন

By

প্রত্যাহিক জীবনে পরিবেশের ভূমিকা

ভূমিকা: Nature যে আমাদের Natural করে সেকথা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর অবস্থা দেখে তাঁর সাহিত্যে রূপায়িত করেছেন। কেননা, মানবজীবনের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অঙ্গালী। আমরা জানি, ‘বনে থাকে বাঘ, গাছে থাকে পাখি, জলে থাকে মাছ’ অর্থাৎ এদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বেঁচে থাকার উপরে পরিবেশের আন্তঃক্রিয়া তথা বাস্তুতন্ত্রের সুস্থিতি বজায় থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে আমরা অভিজেন গ্রহণ করি এবং পরিবেশকে আমর কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফিরিয়ে দিই। পরিবেশের খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে আমরা খাদ্যগ্রহণ করে বেঁচে থাকি। পরিবেশের জল, বায়ু, অরণ্য আমাদের জীবনধারণের রসদ যোগায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘আরণ্যক’ ও ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ইতিবৃত্ত রচনা করেছেন। শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশ না বিভিন্ন পরিবেশের প্রভাব মানুষের উপর যে রয়েছে তা বলাবাহুল্য।

পরিবেশের সংজ্ঞা: মানুষকে ঘিরে যাবতীয় জড় ও সঞ্জীব উপাদানগুলিকে একত্রে পরিবেশ বলে। অর্থাৎ আমাদের চারপাশের সামগ্রিক ভৌত ও জৈব পরিবেশের আস্তারিয়ায় সৃষ্ট অবস্থ  আমাদের জীবনধারাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে থাকে, তাকে পরিবেশ বলা হয়। আমাদের প্রত্যেকের বাসস্থানের চারদিকে অবস্থিত জড় উপাদান—জল, বায়ু, মাটি, সূর্যালোক, উন্নতা ইত্যাদি পরস্পর পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। এগুলি ভৌত পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।

পরিবেশের স্বরূপ: পরিবেশকে আমরা সাধারণত দুটো রূপে দেখতে পাই। যেমন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কৃত্রিম পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ আলো, বাতাস, জল, মাটি, পাহাড়-পর্বত, সাগর  মহাসাগর, নদ-নদী, হ্রদ, জলাশয়, ঝরণা, বনভূমি, তৃণভূমি, মরুভূমি মেরু অঞ্চল, তৃণলতা, গুল্ম, বৃক্ষ, কাট-পালা, পশুপাখি, আণুবীক্ষণিক জীবসহ যাবতীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে গঠিত। আবার ভৌগোলিক গঠন, জলবায়ু  ও উষ্ণতার তারতম্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রকৃতিকে দুভাগে ভাগ করা যায়—জলজ এবং লজ পরিবেশ। অন্যদিকে কৃত্রিম পরিবেশ হল মনুষ্যসৃষ্ট পরিবেশ। এর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ইত্যাদি। এই সমস্ত পরিবেশের প্রভাব রয়েছে আমাদের জীবনে।

আরও পড়ুন:  যুবসমাজ ও অপরাধ প্রবণতা প্রবন্ধ রচনা pdf Download

প্রাকৃতিক পরিবেশ: মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক  পরিবেশ থেকে মানুষ জল, অক্সিজেন, খাদ্যই গ্রহণ করে না; মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এই পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে। ঋতু পরিবর্তন, দিবা-রাত্রির পরিবর্তন এই  পরিবেশের প্রভাবজাত। প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্গত জলজ পরিবেশ বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে প্রয়োজনীয় উপাদান। স্থলজ পরিবেশের মধ্যে রয়েছে সমতলের পরিবেশ, অরণ্যের পরিবেশ, পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশ, মরু অঞ্চলের পরিবেশ, মেরু অঞ্চলের পরিবেশ।

পারিবারিক পরিবেশ:  কৃত্রিম পরিবেশের মধ্যে পারিবারিক পরিবেশ বা বাড়ির পরিবেশের প্রভাব মানুষের উপর সবচেয়ে বেশি। জন্মের পর থেকেই শিশুরা মা ও বাবার যত্নে পালিত হয় এবং তাদেরকেই ভালোভাবে চিনতে বা জানতে শেখে। বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাড়ির কাছের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়। বাবা-মা বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে গৃহস্থালীর কাজ, রীতি-নীতি, আদব-কায়দা অনুকরণ করতে শেখে। বড়োদের কাছ থেকে নীতিমূলক উপাখ্যান শুনে তাদের কল্পনাশক্তির যেমন বিকাশ ঘটে তেমনি ন্যায়-নীতি বোধও জাগ্রত হয়। আবার গুরুজনদের অশালীন আচরণ ও ব্যবহারও তারা অনুকরণ করে ফেলে। তবে বাড়ির গুরুজনদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিশুদের চরিত্র, আচার-আচরণ প্রভৃতি গুণাবলীর উন্মেষ শিশুমনে ঘটতে থাকে।

আরও পড়ুন:  চন্দ্রযান ৩ প্রবন্ধ রচনা PDF | Chandrayaan 3 বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিদ্যালয়ের পরিবেশ: পারিবারিক পরিবেশ থেকে শিশু যেমন আহরণ করে, তেমনি বড় হয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকেও শিশুরা তাদের চারিত্রিক গুণাবলী আয়ত্ত করে। জীবনের  লক্ষ্য নির্ধারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিশুকে সাহায্য করে। এই পরিবেশ থেকেই শিক্ষার্থীদের সততা, শ্রদ্ধাভক্তি, সম্প্রীতি, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলাবোধ, সময়ানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, ভ্রাতৃত্ববোধ প্রভৃতি চারিত্রিক গুণাবলীর উন্মেষ ঘটে।

সামাজিক পরিবেশ: একজন ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে সমাজে নানা বিষয়ে বা কর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন সে সামাজিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়। সামাজিক মূল্যবোধ, ন্যায়-নীতির  শিক্ষা হয় সামাজিক পরিবেশ থেকে। মানুষ যেহেতু সমাজবদ্ধ জীব, তাই পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার কিম্বা সমাজকল্যাণের বা সমাজের জন্য নিজেদেরকে ত্যাগ করার ইচ্ছা তৈরি হয় সামাজিক পরিবেশ থেকে। সেজন্য মানবজীবনে সামাজিক পরিবেশের প্রভাব সর্বাধিক।

সাংস্কৃতিক পরিবেশ:  এরপরে আসে সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাবের দিক—যে পরিবেশ থেকে একজন  মানুষ সভ্য নাগরিক হয়ে ওঠার প্রেরণা লাভ করে। বিদ্যালয়ে ও সমাজে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দেশ ও জাতি সম্পর্কে একটা চেতনা জাগে।

আরও পড়ুন:  পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনী রচনা

পরিবেশ দূষণ: মানুষ পরিবেশ থেকে যেমন নিয়েছে, তেমনি পরিবেশকে দূষিতও করেছে। সেই  দূষণের প্রভাব আজ সর্বত্র। জল, বায়ু, আকাশ, শব্দ, মাটি সবই আজ দূষণের করল গ্রাসে পতিত। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ক্রমাগত লুণ্ঠনের ফলে সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশও আজ দুষিত। মূল্যবোধের অবক্ষয়, নীতিহীনতা, সুবিধাবাদ ও স্বার্থপরতার ছড়াছড়ি মানুষের সামাজিক সম্পর্কে এনেছে ভাঙনদশা। যন্ত্রের প্রভাবে মানুষ হয়ে উঠেছে যন্ত্র-সর্বস্ব, কৃত্রিম ও আন্তরিকতাবিহীন। ফলে মানুষের মনুষ্যত্ববোধ আজ ভূলুণ্ঠিত।

উপসংহার: যে পৃথিবী মানুষের বসবাসের একমাত্র আবাসস্থল, সেই পৃথিবী আজ নানাভাবে দূষিত। অথচ এই পৃথিবীর পরিবেশ থেকে মানুষ পেয়েছিল প্রাণধারণের রসদ, অস্তিত্ব রক্ষার উপকরণ। কিন্তু নিতে নিতে মানুষ আজ ভুলে গেছে তার চারপাশের পরিবেশকে। ফলে পরিবেশের দূষণের প্রভাবেও মানুষ আজ অতিষ্ঠ। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে এই পরিবেশকে বাচিয়ে রাখার। তা না হলে অস্তিত্ব হবে, পরবর্তী প্রজন্মের ‘দুধে-ভাতে’ থাকার স্বপ্নও বিলীন হয়ে যাবে।

অনুসরণে লেখা যায় : 

  • আমাদের পরিবেশ ও আমরা।
  • আমাদের জীবনে পরিবেশের ভূমিকা।

উপরের প্রবন্ধ রচনাটি কে অনুসরণ করে এই দুটি প্রবন্ধ রচনা লেখা যেতে পারে।

Leave a Comment