হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প ও ধস – উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল প্রকল্প

By

 উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল প্রকল্প – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প ও ধস | Earthquake and Landslides in the Himalayan Region | HS Geograph Project | Class 12 Geography Project | দ্বাদশ শ্রেণীর ভূগোল প্রজেক্ট
procesta%20(5)
‘হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প ও ধস’

সুপ্রিয় বন্ধুরা, 
             আজকে আমি তোমাদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক এর ভূগোল বিষয় প্রকল্প হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প ও ধস এই বিষয়ে একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেছি। এই প্রকল্পটির ওপর ভিত্তি করে তোমরা তোমাদের স্কুলের দেওয়া প্রকল্পটি তৈরি করতে পারো অথবা এর সাহায্য নিয়ে তুমি তোমার প্রকল্পটি লিখতে পারো। 

হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প ও ধস

(1) প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যা: 

হিমালয় পৃথিবীর অন্যতম নবীন ভঙ্গিল পর্বত। পাত সংস্থান তত্ত্ব অনুসারে মহাদেশীয় পাতের সঙ্গে মহাদেশীয় পাতের মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মহাসাগরীয় এবং মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর অন্যান্য বড়ো ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে। হিমালয়ের জন্মের পিছনে পাত ভূগাঠনিক কারণ হিমালয়কে পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসাবে গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া পুঞ্জিত ক্ষয় বা পুণ্ড্রক্ষয় যে-কোনো পার্বত্য এলাকার একটি স্বাভাবিক ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ধস হল হিমালয়ের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কিছু সময় ধরে হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে জনবসতির সম্প্রসারণ, জলাধার নির্মাণ, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, সড়ক ও রেলপথের নির্মাণ, বনবিনাশ প্রভৃতির কারণে প্রকৃতির যা স্বাভাবিক কাজ বা ধর্ম, অর্থাৎ পর্যায়ন (gradation), ক্ষয় ও সঞ্চয়, পুঞ্জিত ক্ষয়, ভূমিকম্প, ধস ইত্যাদি মানুষের কাছে দুর্যোগ বা বিপর্যয় হিসাবে দেখা দিয়েছে। 


আরও পড়ুন :  উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল প্রকল্প – ‘জাপানের অগ্নুৎপাতের ঘটনা’

        এখানে উল্লেখ করা যায় যে ভারতের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার সমীক্ষায় দেশের একটা বড় অংশকে ভূমিকম্প ধ্বসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন- ভূমিকম্প প্রবণ হল গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, সমগ্র হিমালয়, মিজোরাম প্রভৃতি অঞ্চল। আর ধসপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সমগ্র হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম প্রভৃতি অঞ্চল। 

CY8zzqLx3qmagtrIem0cH0e0g9Ty49oi7XJUA2upISbyV1ByPZj5sJF2yrL9uoSqJ2q21MzWupeS2otezNvah6YPXCG7yIHyxhSlNzyw0FF4mQ RIkv EjViWR6MysYzrSkoKN3CcRPggBBR0Gvd0EW5Ty J4bu9pC5ehmiDIXEUN7aA6M7HkekJdNvVUA=w461 h257
‘পাহাড়ি অঞ্চলে ধসের সমস্যা’

(2) তথ্য সংগ্রহ:

 ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায় যে ভূমধ্যসাগরীয় ভূকম্প বলয় হিমালয়ের দক্ষিণে শিবালিক পর্যন্ত বিস্তৃত। এই কারণে হিমালয় অঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয় ও ভূমিকম্পের ফলে ধস নামে। যদিও ধস নামার জন্য ভূমিকম্প ছাড়াও অন্যান্য কারণ আছে।

হিমালয় অঞ্চলে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের ঘটনা:

হিমালয় অঞ্চলে বহু উচ্চ মাত্রায় ক্রমাগত ভূমিকম্প ঘটে চলেছে। যেমন-

(i) 4 এপ্রিল, 1905 হিমাচল প্রদেশের কাংড়া ভূমিকম্প : পশ্চিম হিমালয়ের কাংড়া উপত্যকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ম্যাকলিওডগঞ্জ, ধর্মশালা প্রভৃতি এলাকাতেও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ভীষণ বেশি ছিল। তীব্রতার মাত্রা ছিল 7-8। ভারতীয় পাতের সঙ্গে ইউরেশিয় পাতের সংঘর্ষের কারণে এই ভূমিকম্প ঘটেছিল।

iCvKD0ko42u5r4N7l0hHhkffqPNJ5hLtF8qPaFxtZpfTuWD6uddQNM1JuuEI6NpPP7oomk6Bd 5FMu992Ywp 2vIOr2kb47roG3H llJcaZK6CS dy wephue1A1UMMSab3L4IK548qVgwBD2TbY1W65Z2NFqqg P wPLFZDEv5 aZM7cCLaVM Ltjy2g
‘কেদারনাথ অঞ্চলে ধস’

(ii) 15 জানুয়ারি, 1934 বিহার-নেপাল ভূমিকম্প : ভারতের ইতিহাসে প্রবলতম ভূমিকম্পের মধ্যে এটি একটি। প্রায় 39.5 লক্ষ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে এই ভূমিকম্পের প্রভাব অনুভূত হয়। নেপাল হিমালয়, সন্নিহিত বিহারের মুঙ্গের-মতিহারি – সীতামারি, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভূকম্পের ফলে রেল লাইনের পাশে বাঁধ, রাস্তাঘাট প্রভৃতি প্রায় দুই মিটার পর্যন্ত গভীর গর্তে ঢুকে যায়। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল 8.1।

(iii) 15 আগস্ট, 1950 – অসম ভূমিকম্প : সমগ্র অসম রাজ্যজুড়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধসের কারণেও বিপর্যয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ভারতের উত্তরাংশ তিব্বত ও সন্নিহিত এলাকায় প্রচন্ড ক্ষয়ক্ষতি হয়। ব্রহ্মপুত্রের উপনদী ডিবং -এর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। ভূকম্পের মাত্রা ছিল 8.6।

আরও পড়ুন:  কাস্ট অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

(iv) 19 অক্টোবর, 1991 ও 28 মাৰ্চ, 1999 – উত্তরকাশী-চামোলি ভূমিকম্প : উত্তরকাশী- চামোলি অঞ্চলে দু-বার প্রবল ভূমিকম্প হয়। ভারতীয় পাত ও তিব্বতীয় পাতের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে এই ভূমিকম্প হয়েছিল। ভূকম্পের তীব্রতা ছিল যথাক্রমে 7.0 ও 6.6। 

(v) 8 অক্টোবর, 2005 – কাশ্মীর ভূমিকম্প : এই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল পাক- অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরাবাদ শহরের কাছে। ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই ভূকম্পের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। শুধু ভারতেই প্রায় আট হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল 7.6। 

(vi) 18 সেপ্টেম্বর, 2011 সিকিম ভূমিকম্প : এই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল সিকিম ও নেপাল সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়। ফলে নেপাল, সিকিম ও উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভূকম্পের মাত্রা ছিল 6.9।

tLZg4Iu1TixT1iLYo9994zbLmFp80NJVx EucoM0GTh08yRFup
‘ধসের ফলে টয়ট্রেনের ঝুলন্ত রেললাইন’

(3) হিমালয় অঞ্চলে ভূকম্পের কারণ ও প্রভাব: 

 ভারতীয় পাত ও ইউরেশিয় পাতের মধ্যে যতদিন পর্যন্ত সংঘর্ষ হবে বা সঞ্চালন ঘটবে, পর্বত গঠন প্রক্রিয়া চলবে, শিলাস্তরের চ্যুতির সৃষ্টি হবে, শিলাস্তরের স্থিতিস্থাপকতার অভাব দেখা দেবে। ততদিন হিমালয় সন্নিহিত ভারত, পাকিস্তান, চিন এবং মায়ানমার অঞ্চলে ভূমিকম্প হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, হিমালয় অঞ্চলে বনহননের কারণে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়বে।

(4) ভূমিকম্প ও ধসের মধ্যে সম্পর্ক :

ভূমিকম্পের প্রভাবে ভূমিঢাল অস্থির হয়ে ওঠে। ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে ভূমিঢালের পরিমাণ বেশি সেখানে ধস নামে। বিশেষত ভূমিকম্পের ঘটনা যদি ভারতীয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকাল অর্থাৎ গ্রীষ্ম মৌসুমি পর্বে ঘটে তাহলে বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি ভিজে থাকার ফলে ধসের তীব্রতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। উপগ্রহ মানচিত্র পাঠ করে ভূবিজ্ঞানী গুজেতিয়েত (Gujjettiet et.al 2005) এবং সহবিজ্ঞানীদের দেওয়া হিসাব অনুসারে শুধুমাত্র দার্জিলিং হিমালয় অঞ্চলে ধসের প্রভাবে বিভিন্ন দুর্বল ভূমিঢালের সংখ্যা ছিল 1968 সালে 66টি, 1990 সালে 160 টি, 1998 সালে 206টি, 2002 তে 259টি. 2004 সালে 293টি, 2007 সালে 301টি। এখানে লক্ষ করা যেতে পারে যে ধসের সংখ্যা সময়ের সাথে সাথে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(5) ধসের কারণ:

ধস না আমার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম কারণ বর্তমান। তার মধ্যে কিছু প্রকৃতির নিজস্ব এবং কিছু মানুষের দ্বারা সৃষ্টি করা কারণ। ধস নামার কারণগুলিকে নিচে আলোচনা করা হলো।

(১) প্রাকৃতিক কারণ:

(ক) প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের জন্য: পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটার ফলে সেখানকার মাটি ভিজে গিয়ে আলগা ও ভারি প্রকৃতির হয়ে যায়। যার ফলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এর টানে সেই আলগা ও ভারী মাটি নিচের দিকে গড়িয়ে আসতে থাকে। যার ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে একটি ধ্বসের সৃষ্টি হয়। এই কারণেই দার্জিলিং, সিকিম অঞ্চলে প্রতিবছর বর্ষার সময় ধস নামে। 

(খ) পাথর আলগা হওয়ার জন্য:  পাহাড়ি অঞ্চলে বহুদিন ধরে জল, হাওয়া, সূর্যতাপ, গাছের শিকড়ের চাপ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া প্রকৃতির কারণে পাথর ফেটে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরবর্তী সময়ে ওই দুর্বল পাথরের স্তুপ বা খন্ড গুলি ধস হয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে।

(গ) মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকার জন্য: যে মাটিতে বালির ভাগ এর পরিমাণ বেশি সেই মাটির মধ্যেই সহজেই বৃষ্টির জল প্রবেশ করতে পারে, ফলে মাটি ভারী হয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ধস আকারে নিচের দিকে আসতে থাকে। দার্জিলিং সিকিম অঞ্চলের অনেক জায়গাতেই মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকার ফলে বর্ষাকালে ধস নামে। 

আরও পড়ুন:  কাস্ট অঞ্চলে সৃষ্ট সঞ্চয়জাত ভূমিরুপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো।

(ঘ) ভূমিকম্প ও অগ্নুৎপাতের জন্য:  ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বেরিয়ে আসায় মাটি কাঁপতে থাকে যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামে। 

(২) মানুষের তৈরি কারণ:

(ক) মাটির উপরে গাছপালার আবরণ না থাকার জন্য:  বন কেটে সাফ করে ফেললে মাটির উপরে তখন গাছপালার আবরণ থাকে না। আর এইরূপ অবস্থার মধ্যে ক্রমাগত পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টির জল দিনের পর দিন মাটির ভিতরে প্রবেশ করে এবং মাটিকে সরাসরি আঘাত করে ক্ষয় করে যার ফলে মাটি আলগা ও দূর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরবর্তী সময়ে এই কারণকে নিয়েই ধ্বস লক্ষ করা যায়। 

(খ) দুর্বল পাহাড়ি ঢালে নিয়ম না মেনে রাস্তাঘাট বাড়িঘর বানালে: দুর্বল খারাই পাহাড়ি ঢালে নিয়ম না মেনে বাড়িঘর রাস্তাঘাট বানালে। সেই দুর্বল খাড়াই পাহাড়ি ঢাল  সেই চাপসহ্য না  করতে পেরে মাটি ধসে পড়ে যায় যার ফলে ধস লক্ষ্য করা যায়। 

(6) ধসেরর জন্য পরিবেশের ক্ষতি:


(ক) পাহাড়ি অঞ্চলে ধ্বস নামলে গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে যার ফলে বনভূমি নষ্ট হয়ে যায়। 


(খ) ধসে যাওয়া মাটি সাধারণত বালি, কাঁকর, পাথরে ভর্তি থাকে ফলে যেখানে ধসে গিয়ে মাটি অবস্থান করে সেখানকার মাটির গুণগতমান নষ্ট হয়। আর যেখানে ধস নামে সেখানকার ভিতরে বড়ো বড়ো কঠিন পাথর  ও শিলাস্তর বেরিয়ে থাকে। 


(গ) ধস নামার ফলে বিপুল পরিমাণে ভূমিক্ষয় হয়।


(ঘ) ধস নামার জন্য পাহাড়ের ঢাল নষ্ট হয় অর্থাৎ পাহাড়ি ঢাল আরো খাড়াই হয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে ওই নষ্ট হওয়া ডালের মধ্যে পুনরায় বাড়িঘর রাস্তাঘাট তৈরি করা যায় না।

(7) ধস নামার জন্য মানুষের ক্ষতি:


(ক) ধসের ফলে বিভিন্ন স্থানের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে পড়ে। এমনকি পার্বত্য অঞ্চলের যদি বড়ো বড়ো ধস নামে তবে অনেক গ্রামের থেকে গ্রাম উলট পালট বা নষ্ট হয়ে যায়। 


(খ) পাহাড়ি অঞ্চলে ধসের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ পড়ে যায় বা একদম নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে সেই অঞ্চলের জনবসতির সাথে যোগাযোগ মাধ্যম এর ব্যাঘাত ঘটে। যেমন:- মহানদীর কাছে টয়ট্রেনের লাইন  প্রতিবছর ধসের জন্য নষ্ট হয়।


(গ) পাহাড়ি অঞ্চলের ধস নামার ফলে বিভিন্ন চাষের ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়ে থাকে। পাহাড়ি অঞ্চলের ধসের ফলে চা-বাগান, কমলালেবু, আপেল, ধান, জোয়ার, বাজরা, আলু, শাকসবজি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে ক্ষতি লক্ষ্য করা যায়।


(ঘ) পাহাড়ি অঞ্চলে ধস নামার ফলে সেখানে বসবাসকারী মানুষের জীবনহানি হয়ে থাকে বা গৃহপালিত জীব জন্তু মারা যায়।


(ঙ) পাহাড়ি অঞ্চলের ধসের ফলে কিছু কিছু সময় রাস্তাঘাট বড়ো বড়ো পাথর দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে যানবাহন বা পরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্ন ঘটে এবং ভ্রমণার্থীরা আসতে পারে না, যার ফলে পর্যটন শিল্পের বিশেষভাবে ক্ষতি হয়ে থাকে। 

(7) ধস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়:

ধস নিয়ন্ত্রণ করার প্রধান উপায় গুলি হলো–


(ক) পার্বত্য অঞ্চলের যেখানে সেখানে বাড়িঘর বা রাস্তাঘাট তৈরি না করা। 


(খ) পাহাড়ের ঢালে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা উচিত।

 

(গ) পাহাড়ের ঢালে যাতে পুনরায় ধস না নামের তার জন্য গাছ লাগানো দরকার এবং বেআইনিভাবে বা চোরাই ভাবে গাছ কাটাকে বন্ধ করা দরকার।


(ঘ) ধসপ্রবণ এলাকাগুলিতে সাধারণত জমির সঠিক ব্যবহারের পরিকল্পনা করেই কাজ করা উচিত। যার ফলে মাটির যতটা চাপ নেওয়ার ক্ষমতা সেই অনুযায়ী কোন স্থানে বনভূমি এবং কর্মস্থানে বাসস্থান এবং কোন স্থানে রাস্তা গড়ে উঠতে সম্ভব হবে এবং এর ফলে ধস এর পরিমাণ ও কমবে। 

আরও পড়ুন:  নীল বিপ্লব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।


(ঙ) ধসপ্রবণ এলাকায় সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বা লোকজনের জন্য প্রাণরক্ষার উদ্দেশ্যে একটি নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলা দরকার। 


(চ) লোকজনকে ভস নামার ফলে বিপদ জানানো ও সচেতন করা উচিত। 


(ছ) ধসপ্রবণ এলাকার মধ্যে কোন স্থানে যাতে বৃষ্টির জল জমে না থাকে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বা সেই জলকে সেখান থেকে বাইর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

(8) ভারতের ধসপ্রবণ এলাকা:

ধস যেহেতু পাহাড়ি বা পার্বত্য অঞ্চলে হয়ে থাকে তার ফল আমাদের ভারতে যেসব পার্বত্য বা পাহাড়ি অঞ্চলে ধস হয়ে থাকে বা ধসপ্রবণ সেইসব অঞ্চলের নাম গুলি হল – হিমালয়, খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড়, পশ্চিমঘাট পর্বতের বিভিন্ন অংশ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দার্জিলিং, কার্শিয়াং, গ্যাংটক, নৈনিতাল  প্রকৃতি। 

9) পশ্চিমবঙ্গের ধসপ্রবণ অঞ্চল:

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর এ দার্জিলিং জেলা বিশেষভাবে ধসপ্রবণ। এখানে প্রতিবছর  বর্ষার সময় কোন না কোন অঞ্চলে ধস নামেই। দার্জিলিং জেলার যে সমস্ত এলাকা ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেগুলি হল – 


(১) কার্শিয়াং

(২) মহানদী

(৩) চুনাভাটি

(৪) লোধামা

(৫) লাভা প্রভৃতি। 

10) বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর কয়েকটি বড়ো ধসের ঘটনা:


বিংশ বা একোবিংশ শতাব্দীতে কয়েকটি বড় বড় ধ্বসের মূল কারণ ছিল বৃষ্টিপাত বা ভূমিকম্প এর মধ্যে কয়েকটি ধসের স্থান ও মৃত্যুর সংখ্যা নিচে উল্লেখ করা হলো।  যেমন- 


(1) ১৯১৬ সালে ইতালিতে বৃষ্টিপাতের ফলে ধস নামে আর যার ফলে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। 


(2) ১৯২০ সালে চীনের মধ্যে ভূমিকম্পর ফলে ধস নামে এবং যার ফলে 2 লক্ষ জন মানুষ মারা যায়। 


(3) ১৯৮৫ সালে কলম্বিয়ায় অগ্নুৎপাত এর ফলে ধস নামে আর যার ফলে ২৩ হাজার জন লোক মারা যায়। 


(4) ২০১৩ সালে ভারতে (উত্তরাখন্ড) প্রবল বৃষ্টিপাত, হড়পা বান, পার্বত্য স্বাভাবিক জলধর এর ভাঙ্গুন এর ফলে ধস নামে যার ফলে ২০ হাজার জন মানুষ এর মৃত্যু ঘটে। 

11. সিদ্ধান্ত : 

হিমালয় নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ভূসংস্থান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পাত সঞ্চালনের কারণে গড়ে উঠেছে। হিমালয়ের এই সৃষ্টি প্রবাহ এখনো চলছে। ফলে হিমালয় পৃথিবীর অন্যান্য নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালার মতোই ভূমিকম্প-প্রবণ। আবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে হিমালয়ের খাড়াই ভূমিঢাল ও বহু নদনদীর প্রবাহ ক্ষেত্র। ফলে ভূমিকম্প এবং বৃষ্টিপাত ও নদীর কাজের যৌথ প্রভাবে ধসের সমস্যা হিমালয়ের লক্ষ্য করা যায়। প্রত্যেক বছরে ধস তাই এখানকার নিত্য ঘটনা।

এই বিপর্যয়শীল প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব সমাজের সব স্তরের মানুষের যাঁরা ওখানকার অধিবাসী তাঁদের, এবং যাঁরা পরিকল্পনাবিদ, প্রশাসক, ভূবিজ্ঞানী তাঁদেরও।

12. গ্রন্থপঞ্জী :

(a) চট্টোপাধ্যায়, অনীশ, 2000, পরিবেশ

(b) চট্টোপাধ্যায়, অনীশ ও সুজিত ভট্টাচার্য, 2013, উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল পরিচয় (XI)

(c) চ্যাটার্জি, শিশির, 2007, ভৌগোলিক বিপর্যয় ও উন্নয়নকামী মানুষ।

(d) ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য।

কৃতজ্ঞতাস্বীকার

আমার বিদ্যালয়ের মাননীয় শিক্ষক / শিক্ষিকাবৃন্দ প্রত্যেকে তাঁদের জ্ঞান, ধৈর্য এবং পরম মমতায় এই প্রতিবেদন রচনায় আমাদের অপরিসীম সাহায্য করেছেন। এই কাজে আমার পরিবারের সদস্যরাও বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন এবং অসংখ্য উপায়ে আমাকে সাহায্য করেছেন।

Leave a Comment