প্রশ্ন : সুশ্রুত সংহিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর : ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের অপর এক মহান শিক্ষাগুরু ছিলেন সুশ্রুত। সেই সুদূর নবম ও দশম শতাব্দীতে তাঁর খ্যাতি ভারতকে অতিক্রম করে সুদূর অঞ্চলে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল, ধন্বন্তরির দ্বাদশ শিষ্যের অন্যতম ছিলেন সুশ্রুত। সুশ্রুতের নামানুসারে ‘সুশ্রুতসংহিতা এরূপ গ্রন্থের নাম হয়েছে বলে মনে হয়। নাগার্জুনের দ্বারা সংস্কৃত গ্রন্থটি ‘সুশ্রুত সংহিতা’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে বলে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের গবেষকরা মনে করেন। এটি শল্যবিদ্যার শাস্ত্র। সুশ্রুত সংহিতার ছয়টি স্থান ও বেশ কিছু অধ্যায় আছে। আমরা নিম্নলিখিত ভাবে স্থানগুলিতে আলোচিত বিষয়গুলির একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিতে পারি।
সূত্রস্থান: এই স্থানে ৪৬টি অধ্যায় আছে। এখানে শল্যচিকিৎসা বিষয়ক শব্দাবলির অর্থ এবং ভেষজের শ্রেণিবিভাগ আছে।
নিদানস্থান : এই স্থানে ১৬টি অধ্যায় আছে। এই অধ্যায়গুলিতে রোগের কারণ ও লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে। শারীর স্থানঃ এই স্থানে ১০টি অধ্যায় আছে। এই স্থানে মানবদেহের বিবরণ ও ভ্রুণতত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
চিকিৎসাস্থান : এই স্থানে ৪০টি অধ্যায় আছে। এই স্থানে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
কল্পস্থানঃ এই স্থানে ৮টি অধ্যায় আছে। এখানে বিভিন্ন বিষয় ও তাদের প্রতিক্রিয়া এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরতন্ত্রে আছে ৬৬ টি অধ্যায়। শল্য চিকিৎসার সাতটি প্রক্রিয়ার কথা এই তন্ত্র থেকে জানা যায়।
সেগুলি হল- (১) ছেদন, (২) ভেদন, (৩) লেখন, (৪) এযান, (৫) আহরন, (৬) বিস্রবণ এবং (৭) সীবন। ‘সুশ্রুতসংহিতা’র বিষয়সন্নিবেশ ব্যবস্থা সুসমৃদ্ধ এবং রচনারীতি অপেক্ষাকৃত প্রাজ্জ্বল। এমনকি এই সংহিতার সমসাময়িক কালে শাস্ত্রচিকিৎসা উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হয়েছিল। ভাষার সহজবোধ্যতা ও বিষয়স্থাপন পদ্ধতি গ্রন্থটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ‘সুশ্রুতসংহিতার’ টীকাকারগণের মধ্যে শ্রীমাধব, চক্রপাণি, উম্মন প্রভৃতির নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।