শূদ্রক সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লেখো।

By

শূদ্রক সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ : 
নাট্যকার পরিচিতি-সংস্কৃত সাহিত্যে সবচেয়ে আলোচিত অথচ ব্যতিক্রমী নাট্যকার হলেন শূদ্রক। এবং তাঁর দশ অঙ্কের প্রকরণ ‘মৃচ্ছকটিক’। সৌখীন ভাবাবেগ বর্জিত, রাজ রাজড়ার বহুচর্চিত প্রেমকথা কিংবা ধর্মীয় দেবদেবীমূলক রচনার বাইরে সমাজমনস্ক, সংস্কারভাঙা নাট্যকৃতি হল ‘মৃচ্ছকটিকম্। এই নাটকটি থেকে জানা যায় যে, শূদ্রক ব্রাম্মন এওং অশ্মক দেশের অধিবাসী ছিলেন। কাদম্বরীতে বিদিশার রাজা শূদ্রকের নাম আছে। কিন্তু এ শূদ্রক তিনি নন। সিলভ্যাঁ লেভির মতে বিক্রমাদিত্যের পরবর্তী কোনো অজ্ঞাত নাট্যকার প্রাচীনত্ব জ্ঞাপনের অভিপ্রায়ে বিক্রমাদিত্য পূর্ব কোনো রাজার সঙ্গে শূদ্রকের নাম জুড়েছেন। পিশেলের মতে, দশকুমার চরিতকার দণ্ডীই শূদ্রক। ভাসকৃত ‘চারুদত্ত’ আবিষ্কৃত হওয়ার পর ধরা যায় যে শূদ্রক ভাস পরবর্তী। কালিদাস তাঁর রচনায় শূদ্রকের নামোল্লেখ করেননি। দণ্ডী ‘অবন্তী সুন্দরী কথা’ কাব্যে উজ্জয়িনীর রাজা হিসেবে শূদ্রকের নাম বলেছেন ও ‘মৃচ্ছকটিকে’-র বর্ণনার সঙ্গে তার মিল আছে। দণ্ডী সম্ভবতঃ, খ্রিষ্টাব্দ সপ্তম শতকের কবি। সবমিলিয়ে শূদ্রকের কাল নির্ণয়ও একটি বিপুল সমস্যা। তবে অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে ভাস, কালিদাসের পর দণ্ডীর সময়ে যখন নাগরিক সমাজ জীবনে ভ্রষ্টাচার ও কলঙ্ক গেঁথে বসেছে সেই খ্রিষ্টাব্দ ৬ষ্ঠ বা ৭ম শতকে শূদ্রক তাঁর অসামান্য প্রকরণটি রচনা করেছেন। সংস্কৃত সাহিত্যজগতে নাট্যকার হিসেবে শূদ্রকের স্থান- সংস্কৃত সাহিত্যজগতে নাট্যকারগণের মধ্যে অন্যতম নাম—শূদ্রক। শূদ্রক বিবচিত অনন্য সাধারণ ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যরচনা হল- ‘মৃচ্ছকটিক’। প্রস্তাবনায় নাট্যকার আত্মপরিচয় দিয়েছেন। সেই আত্ম পরিচয় থেকে জানা যায়- তিনি ছিলেন ব্রাহ্মন নৃপতি, বিদ্বান এবং শিল্পকলায় পারদর্শী। বাল্যকালে তিনি স্বাতী নামের এক রাজকুমারের সঙ্গে লালিত পালিত হন। কৈশোরে খেলা নিয়ে স্বাতীর সাথে তার কলহ হয় এবং সেই কলহ চিরস্থায়ী মনোমালিন্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে শূদ্রক উজ্জয়িনী রাজ্য জয় করেন এবং সেখানকার রাজা হন। শূদ্রকের আবির্ভাব কাল সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে শূদ্রকের জন্ম ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীর মধ্যবর্তী পর্যায়ে। ‘স্কন্দপুরণ’-এ শূদ্রককে অন্ধ্রবংশীয় রাজা বলা হয়েছে। আবার ‘ক্যাসরিৎসাগর’-এ শূদ্রককে বলা হয়েছে শোভাবতীর রাজা। ‘বেতালপঞ্চ বিংশতি’-তে শূদ্রককে বর্ধমানের রাজা বলে চিহ্নিত করেছেন। আবার ‘রাজতঙ্গিনী’-তে শূদ্রককে অভিহিত করা হয়েছে রাজা বিক্রমাদিত্যের অব্যবহিত পূর্ববর্তী রাজা হিসাবে। কিন্তু কালিদাস বিখ্যাত নাট্যকারদের তালিকায় শূদ্রকের নাম না থাকায় অনুমিত হয় – শূদ্রক কালিদাস পূর্বযুগের নাট্যকার নন। সম্ভবত শূদ্রকের আবির্ভাব কালিদাস – উত্তরযুগে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে। শূদ্রক রচিত ‘মৃচ্ছকটিক’ এক বলিষ্ট রচনা। সম্ভবত বৃহৎকথার কোনো আখ্যান আলোচ্য নাট্যকাহিনির উৎস। ‘মৃচ্ছকটিক’ সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। কলানিপুনা গণিকা ও বিদগ্ধ ব্রাহ্মনের প্রণয়, সিঁধেল চোর ও দাসীর মন দেওয়া নেওয়া, জুয়াড়িদের ধূর্তামি, গণিকা হৃদয়ের মাতৃত্ব বোধ, মিথ্যা খুনের মামলা, বিচারের নাম প্রহসন ইত্যাদি নানা ঘটনাবিন্যাসে ও চরিত্রচিত্রণে শূদ্রক অনবদ্য কৃতি শিল্পী। নাটকে বর্ণিত হয়েছে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা। শূদ্রকের রচনারীতি জমকালো ভাষার অলঙ্করণ, ভাবের গাম্ভীর্য ও পরিশীলিত রচনাশৈলী, অলঙ্কার ও ছন্দের বৈচিত্র্য প্রাকৃত প্রয়োগের দক্ষতা নাট্যকারকে মহৎ শিল্পীর মর্যাদা দান করেছে। ঘটনা বিন্যাসে কিছু ত্রুটি এবং আতিশয্য লক্ষিত হলেও সামগ্রিক বিচারে ‘মৃচ্ছকটিক’ অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক। পাশ্চাত্য বিদ্বন্মণ্ডলী আলোচ্য নাটকটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
আরও পড়ুন:  বাসন্তিকস্বপ্নম্-এর বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো। | উচ্চ মাধ্যমিক সংস্কৃত | বাসন্তিকস্বপ্নম নাটক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment