শিখন ও পরিনমনের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো | শিখন ও পরিনমনের মধ্যে সম্পর্ক কি?

By

ভূমিকা :  অতীত অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের প্রভাবে ব্যক্তির বা প্রাণীর আচরণধারা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াই হল শিখন। আর পরিণমন বলতে বোঝায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভ্যন্তরীন বিকাশ স্বয়ংক্রিয় ভাবে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ কোন শিশুর জৈবিক বিকাশের ফলে ক্রমাগত বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্ৰশিক্ষণ ছাড়াই আচরণধারার যে পরিবর্তন হয় তা হল পরিণমন।

শিখন ও পরিণমন প্রক্রিয়া দুটি ভিন্ন ভিন ভাবে সংঘটিত হওয়ার পরেও একে ওপরে সম্পর্কযুক্ত। এর মূল কারণ হল কোন ব্যক্তির সঠিক পরিণমন প্রক্রিয়া ঘটার পরেই সঠিক ও নির্ভুল শিখন সম্ভব হয়ে থাকে। 

শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক :

শিখন ও পরিণমনের মধ্যে যেসব সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল –

১) বিকাশমূলক প্রক্রিয়া : শিখন ও পরিণমন প্রক্রিয়া দুটিই হল বিকাশমূলক প্রক্রিয়া। কোন ব্যাক্তি বা শিশুর জীবন বিকাশে শিখন ও পরিণমন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আর দুটি প্রক্রিয়াই বিকাশ মূলক হওয়ার কারণে পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। 

২) পারস্পরিক সম্পর্ক : শিখন ও পরিণমন দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া, তার সত্বেও পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। পরিণমন হল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা অনুশীলন নির্ভর নয়। কিন্তু শিখন হল একটি অনুশীলন নির্ভর প্রক্রিয়া, যা পরিণমনের ওপর নির্ভর করে থাকে। কোন এক শিশু তখনই হাটতে শেখে যখন সে সঠিক পরিণমনের বয়স স্তরে পৌছায়। অর্থাৎ, শিখন তখনই সম্ভব যখন পরিণমন ঘটে থাকে।


৩) নির্ভরশীলতা :  শিখন ও পরিণমন প্রক্রিয়া দুটি পরস্পর নির্ভরশীল। কোন ব্যক্তির যথাযথ পরিণমন ছাড়া শিখন অসম্ভব। আর এর কারণেই যখন কোন ব্যক্তির আচরণগত পরিবর্তন ঘটে তখন সেই পরিবর্তন কিসের ফল তা নির্ধারন করতে অসুবিধা হয়। প্রক্রিয়া দুটির পরস্পর নির্ভরশীলতা প্রক্রিয়া দুটিকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত করে তোলে। 

৪) মনোবিদদের মতামত : শিখন ও পরিণমন প্রক্রিয়া দুটির মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে বিভিন্ন মনোবিদ (যেমন— স্ট্রেয়ার, আর্নল্ড গেসেল, হিলগার্ড প্রমুখ) বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। সেখান থেকেই মনোবিদ ম্যাকগ্র (MacGraw) এর পরীক্ষাটি আলোচনা হল। মনোবিদ ম্যাকগ্র (MacGraw) তার পরীক্ষার জন্য দুটি যমজ শিশুকে নেয়। তিনি একটি শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রশিক্ষণ দেয় এবং একটি শিশুকে প্রশিক্ষণ দেয় না। যার ফলে প্রশিক্ষণ পাওয়া শিশুটি মাত্র ১২ মাসে হাটতে শেখে এবং যে শিশুটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি সেই শিশুটি ১৫ মাস পর হাটতে শেখে সমান দক্ষতার সাথে। মনােবিদদের মতে, সঠিক পরিণমনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে। তাই এই স্বাভাবিক বিকাশের উপর নির্ভর করে শিখন সম্ভব হয়


৫) শিক্ষাবিদদের মতে :  কোন শিক্ষার্থীর বা শিশুর শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে বা নতুন শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিণমন এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন –  ২-৩ বছরের শিশুকে যদি একটি কঠিন অংক করতে দেওয়া হয় তবে সেই শিশু সেই কাজটি করতে ব্যর্থ হবে। 

সিদ্ধান্ত :  উপরিক্ত আলোচনাটির মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় যে, শিখন সম্পূর্ণ পরিণমনের ওপর নির্ভরশীল। কোন শিশুর পরিণমন সঠিক স্তরে পৌছানোর আগেই জোর করে শিখন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। পরিণমন শিক্ষণের গতিবেগ নির্ণয় করে। কোন শিশুর শিখন কখন শুরু করলে তা সার্থক হবে, সেটা ঠিক করে পরিণমন। অর্থাৎ, পরিণমন ও শিখন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। 

আরও পড়ুন:  আগ্রহের সংজ্ঞা দাও। শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর। আগ্রহের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ?

Leave a Comment