ভূমিকা : এই বিশ্ব জগতে কোন ব্যক্তির চাওয়া ও পাওয়ার আসা কোনদিন শেষ হয় না। ব্যক্তির কোন এক চাহিদার পরিপূর্ণতা হওয়ার কিছু পরেই আবার নতুন এক চাহিদার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই কোন ব্যাক্তি তার চাহিদা পূর্ণ করার জন্য যেসব সহায়ক আচরণ করে তাই হল প্রেষণা। অর্থাৎ, প্রেষণা হল ব্যক্তির এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোন লক্ষ্যপূরণ ও আচরণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
শিখনে প্রেষণার ভূমিকা (Role of Motivation in Learning) নিম্নে আলোচনা করা হল :
(১) শিক্ষার্থীর অভ্যন্তরীণ উদ্যম জাগ্রত : প্রেষণা শিক্ষার্থীর অভ্যন্তরীণ উদ্যমকে জাগ্রত করে তোলে। এর ফলে শিক্ষার্থী যে-কোনো কর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। উপযুক্ত উদবোধক প্রয়োগ করে শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ আচরণ সৃষ্টি করা যায় বা শিক্ষার্থীকে শিখনের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়।
(২) আগ্রহ সৃষ্টি : প্রেষণা শিক্ষার্থীর মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার করে। শিক্ষার্থীর বিশেষ বিষয়ের প্রতি প্রেষণা তার অনুরাগের দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীর আগ্রহের ওপর নির্ভর করে যদি বিষয়বস্তু নির্ধারন করা হয় তবে তা শিক্ষার্থীকে সফলতাএনে দিতে পারে।
(৩) লক্ষ্যাভিমূখী : কোন এক শিক্ষার্থী যদি তার এক নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য পূর্ণ হওয়ার পর আরও লক্ষ্য নির্ধারন করে তবে শিক্ষার্থী তা পূরণের জন্য আরও অনুরাগী হয়ে উঠবে। প্রেষণা শিক্ষার্থীকে শিক্ষার নির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিমুখী করে তোলে।
(৪) মনোযোগী : প্রেষণা শিক্ষার্থীকে শিখনে মনোযোগী করে তোলে। আর মনোযোগ শিক্ষার্থীর কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে বা জ্ঞান সংগ্রহ করতে নিখুঁত ও পরিষ্কার ধারনা দেয়।
(৫) ব্যক্তিত্বের উন্মেষ : প্রেষণা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের উন্মোচন ঘটিয়ে থাকে। যার ফলস্বরূপ শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে থাকে।
(৬) শিখন কৌশলের ওপর প্রভাব : প্রেষণা শিক্ষার্থীর শিখন কৌশলকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থী প্রেষণার বিভিন্নতা অনুযায়ী শিখতে পারে।
(৭) শিক্ষার্থীর আচরণের গতিপথ নির্ণয় : প্রেষণা শিক্ষার্থীর আচরণের গতিপথ নির্ণয় করে তাকে কোনো বিশেষ লক্ষ্য বা চাহিদা অনুযায়ী আচরণ করতে সাহায্য করে।
(৮) যথাযথভাবে কজ সম্পাদন : প্রেষণা শিক্ষার্থীকে যথাযথভাবে কজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ শিখন চলাকালীন শিক্ষার্থীর যেসকল কাজ করে থাকে তা তাদের সঠিকভাবে করতে প্রেষণা সাহায্য করে।
(৯) নতুন বিষয়ের প্রতি কৌতূহল সৃষ্টি : শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন বিষয়কে জানার কৌতূহল সৃষ্টি করে প্রেষণা। এর ফল স্বরূপ শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি ঘটে।
(১০) দক্ষতা সম্বন্ধে আত্মবিশ্বাস : প্রেষণা দক্ষতা সম্বন্ধে শিক্ষার্থীকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। আর আত্মবিশ্বাস কর্মে আরও বেশি উদ্যম সৃষ্টি করে।
(১১) অভ্যাস গঠন : প্রেষণা শিক্ষার্থীর মধ্যে সুঅভ্যাস গঠন করে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর মধ্যে পঠনের অভ্যাস তৈরি করে যা তার বিষয় জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
(১২) সৃজনধর্মী ক্ষমতার বিকাশ : প্রেষণা একটি অভ্যন্তরীণ মানসিক প্রক্রিয়া, যা শিক্ষার্থীর সৃজন ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
(১৩) জীবনাদর্শ গঠন : প্রেষণা শিক্ষার্থীর মধ্যে জীবনাদর্শ গঠনে সাহায্য করে। অর্থাৎ প্রেষণা শিখনকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে তার ভবিষ্যৎ জীবনাদর্শ গঠন করে।
(১৪) শিক্ষক ও শিক্ষিকার ভূমিকা : কোন এক শিক্ষার্থীর প্রেষণা প্রক্রিয়া সংগঠিত হওয়ার পিছনে শিক্ষক ও শিক্ষিকারও গুরুপতপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন –
- শিক্ষক ও শিক্ষিকারা যদি শিক্ষার্থীদের প্রতি সহায়তা প্রেষণার সঞ্চার করে।
- শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও ক্ষমতা এর ভিত্তিতে পাঠ্য পরিকল্পনা করলে খুব সহজেই শিক্ষার্থীদের প্রেষনার সঞ্চার ঘটে থাকে।
- শিক্ষার্থীদের কাজের প্রতি যদি শিক্ষক প্রশংসা করে তবে খুব সহজেই প্রেষণার সঞ্চার ঘটে থাকে।
- শিক্ষার্থীদের ভালাে কাজের জন্য, পরীক্ষায় ভালাে ফলাফলের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা পুরস্কার প্রদান করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণার সঞ্চার ঘটে, যা শিখনে সহায়তা করে।
- শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করার ক্ষেত্রে যদি শিক্ষকরা পূর্ব অভিজ্ঞতার ব্যবহার করে তবে খুব সহজে প্রেষণার সঞ্চার হয়ে থাকে, যার ফলে শিখনে সহায়তা হয়ে থাকে।
- শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদানে আকর্ষণীয় শিখন পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে খুব সহজেই প্রেষণার সঞ্চার হয়ে থাকে।
উপসংহার : সবশেষে বলা যায় যে, যে কোন শিক্ষাব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করে প্রেষণা এর উপর। প্রেষণা একটি অভ্যন্তরীণ মানসিক শক্তি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই মানসিক শক্তি অর্থাৎ প্রেষণা জাগ্রত করতে পারলেই ধারাবাহিকভাবে শিখনের প্রতি তাদের অনুরাগী ও মনোযোগী করে তোলা সম্ভব হবে। তাই শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা অপরিসীম।