ভূমিকা : মনোবিদ বি. এফ. স্কিনারের মতে, যে অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রতিক্রিয়ার কোন নির্দিষ্ট উদ্দীপক থাকে না, যেকোনো উদ্দীপকের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায়, তাকেই অপরেন্ট অনুবর্তন বলে। মনোবিদ বি. এফ. স্কিনার ১৯৩২ সালে একটি ক্ষুদার্থ ইঁদুর এর উপর পরীক্ষা করে অপারেন্ট বা সক্রিয় অনুবর্তনটি আবিষ্কার করেন।
স্কিনার বক্স : অপারেন্ট অনুবর্তন তত্বটি পরীক্ষা করার জন্য স্কিনার একটি বিশেষ ধরনের যান্ত্রিক বক্স (যার মধ্যে প্রাণীর গতিবিধি রেকর্ড করার জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা রয়েছে।) এর ব্যাবহার করেন, যা স্কিনার বক্স নামে পরিচিত। এই বাক্স একটি ট্রে আছে। সেটি একটি যন্ত্রের সাহায্যে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে একটি লিভারে চাপ দিলেই ট্রের মধ্যে খাদ্য চলে আসে।
পরীক্ষার জন্য প্রাণী ও প্রয়োজনীয় উপকরন : মনোবিদ বি. এফ. স্কিনার তার অপারেন্ট অনুবর্তন তত্বটির পরীক্ষা করার জন্য একটি ক্ষুদার্থ ইঁদুর এবং স্কিনার বক্স, ট্রে, খাদ্যবস্তু প্রভৃতি উপকরন ব্যাবহার করেছিলেন।
স্কিনার বক্সের পরীক্ষা :
স্কিনার বক্সের পরীক্ষাটি নিন্মরূপ বর্ণনা করা হল –
প্রথম পর্যায় : আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী বি.এফ.স্কিনার তার বিখ্যাত অপারেন্ট অনুবর্তন তত্বটি পরীক্ষা করার জন্য সর্বপ্রথম তার তৈরি স্কিনার বক্স এর মধ্যে একটি ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে ঢুকিয়ে দেন। এই পর্যায়ে তিনি বক্সের বোতামে বা লিভারে চাপ না দিয়ে সরাসরি বক্সের মধ্যে থাকা ট্রে-তে খাদ্য দিয়েছিল। ক্ষুধার্ত ইঁদুরটি তখন সরাসরি ট্রেতে রাখা খাদ্যবস্তু খায় এবং বাক্সটির সঙ্গে ইঁদুরটির প্রাথমিক যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
দ্বিতীয় পর্যায় : পরীক্ষাটি করার জন্য আবার অন্য একদিন স্কিনার ইঁদুরটিকে বক্সে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে বোতামে বা লিভারে চাপ দিয়ে ট্রে-তে খাদ্যবস্তু এনে দেয় এবং ক্ষুধার্ত ইঁদুরটি তা খায়।এখানে ইঁদুরটি কোন কার্য সম্পাদন না করলেও কিভাবে খাদ্যবস্তু পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে অবগত হয়।
তৃতীয় পর্যায় : মনোবিজ্ঞানী স্কিনার আরও একদিন ওই ক্ষুধার্ত ইঁদুরটিকে বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে ইঁদুরটির আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। বাক্সে খাদ্য না পেয়ে ইঁদুরটি নানা ধরনের প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ করতে থাকে। এইভাবে বহু সময় ধরে নানা প্রকারের প্রতিক্রিয়া মূলক আচরণ করতে করতে তার দ্বারা লিভার বা বোতামে চাপ পড়ে যায়, ফলে খাদ্যবস্তুটি ট্রে এর ওপর এসে পড়ে ও ইঁদুরটি ওই খাদ্য গ্রহণ করে।
পরবর্তী পর্যায় : মনোবিজ্ঞানী আরও কয়েকবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান এবং লক্ষ করেন পুরনাবৃত্তির ক্রম অনুযায়ী ইঁদুরটি আগের আচরণ অপেক্ষা পরবর্তী আচরণে লিভারে বা বোতামে চাপ দিয়ে খাদ্যবস্তু খুব কম সময়ে ট্রেতে আনতে সক্ষম হচ্ছে। ক্রমশ সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইঁদুরটি সরাসরি লিভারে বা বোতামে চাপ দিচ্ছে এবং খাদ্যবস্তু ট্রেতে আসছে। অর্থাৎ ইঁদুরটি সক্রিয়তা, চাহিদা প্রভৃতির দ্বারা চালিত হয়ে শিখন কৌশল আয়ও করছে এবং নতুন প্রতিক্রিয়া করছে।
সিদ্ধান্ত :
মনোবিদ স্কিনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ১৯৩৮ সালে দু-ধরনের আচরণের অস্থিত্বের কথা বলেন। যথা – (ক) রেসপন্ডেন্ট আচরণ, (খ) অপারেন্ট আচরণ। আবার তিনি দু-ধরনের আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে দু-ধরনের অনুবর্তন কৌশলের কোথাও বলেছেন তিনি। যথা – (ক) S-Type অনুবর্তন, (খ) R-Type অনুবর্তন।
স্কিনার সঠিক উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে শিখন সম্ভব হল— এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বোঝেন ইঁদুরটির এইরূপ আচরণ সম্ভব হয়েছে খাদ্যের প্রত্যাশা নামক অজানা উদ্দীপকের দ্বারা। এই আচরণটি প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ বা ‘R’ type আচরণ। যে কৌশলে ইঁদুরটি এই আচরণটি আয়ত্ত করল তাকে বলে সক্রিয় সাপেক্ষীকরণের কৌশল।