প্রাচীন অনুবর্তন : প্রাচীন অনুবর্তন তত্বের প্রবর্তক হলেন আইভান প্যাভলভ। রাশিয়ার শরীরতত্ববিদ আইভান প্যাভলভ এর মতে প্রাণীর স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া করার পরিবর্তে অস্বাভাবিক বা কৃত্তিম উদ্দীপক দ্বারা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া করে থাকে, আর একেই প্রাচীন অনুবর্তন তত্ব বলে। যে কোনো প্রানী থেকে শুরু করে মানব শিশুর শিখনে প্যাভলভীয় প্রাচীন অনুবর্তন শিখন কৌশলের গুরুত্ব বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। তা হল—
(1) শিশুর ভাষার বিকাশ : শিশুর কথা বলা এবং ভাষার বিকাশে এই কৌশলের যথেষ্ট গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। শিশুকে ভাষা শেখানোর সময় যখন কোনো বয়স্ক ব্যক্তি তার কাছে অর্থ বোঝার মতো শব্দ বার বার উচ্চারণ করে, তখন তারা তা অনুসরণ করে। এর ফলে তাদের ভাষার বিকাশ ঘটে।
(2) সু-অভ্যাস গঠন : শিশুর মধ্যে সু-অভ্যাস গঠনে এই শিখন কৌশল বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। যেমন— পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি।
(3) কু-অভ্যাস দূরিকরণ : শিশুর মধ্যে যে সকল কু-অভ্যাস তৈরি হয়েছে সেগুলি দূরীকরণে এই শিখন কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
(4) প্রাক্ষোভিক বিকাশ : প্রাচীন অনুবর্তনের শিখন কৌশল শিশুর মধ্যে প্রাক্ষোভিক বিকাশে সাহায্য করে অর্থাৎ শিশুর মধ্যে অহেতুক ভয় দূর করে তাদের স্বাভাবিক শিক্ষামূলক উন্নয়নে সহায়তা করে ।
(5) যান্ত্রিক পুণরাবৃত্তিমূলক শিখন : বানান, নামতা, বার গণনা, মাসগণনা ইত্যাদির মতো যান্ত্রিক পুণরাবৃত্তিমূলক শিখনের ক্ষেত্রে এই শিখন কৌশল প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
(6) ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন : কোনো বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে শিক্ষক এই শিখন কৌশলের প্রয়োগ করে থাকেন।
(7) মানসিক চিকিৎসা : মানসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে আইভান প্যাভলভের শিখন কৌশল বিশেষভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
(৪) আগ্রহ সৃষ্টি : এই শিখন কৌশলের সাহায্যে শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষনীয় বিষয় বারবার উপস্থাপনের মাধ্যমে তার মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়।
অপানুবর্তন : অনুবর্তনের হ্রাস পাওয়াকে অপানুবর্তন বলে। প্যাভলভ তার পরীক্ষায় দেখেছেন, বার বার ঘন্টাধ্বনি করার পর খাদ্য না দেওয়ায়, কুকুরটির লালাক্ষরন বন্ধ হয়ে যায়, একে অপানুবর্তন বলে। অর্থাৎ, অনুবর্তনের পর অনুবর্তিত উদ্বীপক যদি স্বাভাবিক উদ্বীপকের উপস্থাপন করা না হয়, তবে অনুবর্তন প্রক্রিয়াটি এক সময় পর বন্ধ হয়ে যায়, একে অপানুবর্তন বলে।