আজকে তোমাদের সাথে একটি প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করলাম। যেটি তোমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে যথেষ্ট ভাবে সাহায্য করবে। র্যাগিং ও ছাত্রসমাজ এর উপর একটি প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করলাম। অতএব আর বেশি অপেক্ষা না করে এখনেই প্রবন্ধ রচনাটি দেখে নাও।
র্যাগিং ও ছাত্রসমাজ
বাংলা প্রবাদে আছে ‘কাঙালী মেরে কাছারি গরম’–এই ঘটনায় লুকিয়ে আছে কৌতুকের নামে একধরনের অত্যাচার। জমিদার বাড়িতে রাজস্ব আদায়ের কারণে নানা লোকের সমাবেশ ঘটত। ফসল না হওয়ার কারণে খাজনা দিতে না পারলে কাঙালিদের ঠেঙিয়ে জমিদার মজা লুঠত। বেচারা যন্ত্রণায় যত ছটফট করবে, জমিদার ও মোসাহেবের দল ততই মজা পাবে। র্যাগিং-এর বাংলা অর্থ হল গোলমাল করা বা অত্যধিক হইহুল্লোড় করা বা কৌতুকের নামে অত্যাচার করা। বর্তমান ‘কাঙালী মেরে কাছারি গরম’-এর ব্যবস্থা না থাকলেও রয়ে গিয়েছে ‘ছাত্রছাত্রী মেরে ছাত্রাবাস গরম’ করার নানান ইতিহাস, যা কাম্য নয়। কারণ ছাত্রছাত্রীদের মূল কর্ম এবং ধর্মই সত্যিকার জ্ঞান অর্জন।
র্যাগিং হল একধরনের মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার। শিক্ষাবর্ষের সূচনায় কারিগরি ও মেডিকেল শিক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাসগুলি র্যাগিং-কে কেন্দ্র করে অমানুষিক নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে। মজার ছলে পুরোনো ছাত্রছাত্রীরা নবাগতদের জোর করে ধূমপান করতে বাধ্য করে, বিড়ি, সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়, মদ খাওয়ায় বাধ্য করে, শীতের দিনে পুকুরে বা নদীর জলে গা ডুবিয়ে বসে থাকতে বলে। কখনও জামাকাপড় খুলে নেয়, অর্ধউলঙ্গ বা সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে দাঁড় করিয়ে রাখে। অনেকসময় বুদ্ধির পরীক্ষা নিতে গিয়ে এমন প্রশ্ন করা হয় যা মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে চলে যায়। মারধর, কিল-ঘুষি, গালাগালিতে ছাত্রছাত্রীরা অনেকসময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফ্যালে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও র্যাগিং-এর প্রবণতা বাড়ছে। বন্ধু পরীক্ষার সময় উত্তর না দেখালে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি বা মারধর চলে। দুর্বল ছাত্রের কাছ থেকে পয়সা বা টিফিন ছিনিয়ে নেওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
র্যাগিং-এর কারণ সম্পর্কে নানা জনের নানান অভিমত রয়েছে। কেউ বলেন, একদল মানুষের বিকৃত মানসিকতা এর কারণ। কেউ মনে করেন র্যাগিং স্বাস্থ্যকর, নবাগতদের পুরোনোদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে কৌতুকের মাধ্যমে পারস্পরিক পরিচয়ের যোগসূত্র রচনা করা। একটু-আধটু ইয়ার্কি, ঠাট্টা-তামাশার মধ্য দিয়ে চিত্তবিনোদনের পথটা সহজেই খুলে যায়। এসব যুক্তি মেনে নেওয়া অসম্ভব। একে মানসিক বিকার বা পার্ভাসান বলা যেতেই পারে। সর্বোপরি র্যাগিং-এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, নীতি এবং আদর্শজনিত শিক্ষার অভাব। ধর্মের নামে র্যাগিং, রাজনীতির নামে র্যাগিং, আর্থিক কারণে র্যাগিং চলতে থাকে। কেউ বা স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে ছাত্রাবাসে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে একাকিত্বের কারণে বিকৃতমনস্ক হয়ে পড়ে, অন্যকে র্যাগিং করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
র্যাগিং এক সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধির শিকার হয় গ্রাম কিংবা শহরের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। ভালো ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ বা নষ্ট করে দেওয়ার অন্যতম কৌশল এটি। এর ফলে কেউ সমাজ-শিক্ষা-আত্মীয়স্বজন সকলের মায়া কাটিয়ে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়, কেউ বা সারাজীবন মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটায়, কেউ বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পরিবারের অযত্নে পড়ে থাকে। বর্তমানে বহু ছাত্রছাত্রী ছাত্রাবাসে থাকতে ভয় করে, তাই বাড়ির সামনে কোনো কলেজে পড়াশোনার ইচ্ছে প্রকাশ করে। র্যাগিং কৌতুকের নামে অত্যাচার, আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
র্যাগিং নামক জঘন্য প্রথার অবসান হওয়া জরুরি। প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শিক্ষার্থীদের নীতি-আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠদানের সময় কমিয়ে বিকেলে খেলাধুলা, গানবাজনা, শিল্পকলার কাজ করার দিকে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করে তুলতে হবে। কলেজে ছাত্রাবাসে কড়া নজরদারির পাশাপাশি একই রুমে একই ক্লাসের বা বিষয়ের (subject) ছাত্রছাত্রী রাখা বন্ধ করতে হবে। র্যাগিং প্রতিরোধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এ ব্যাপারে অভিভাবক-অভিভাবিকাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার। র্যাগিং বন্ধ করতে সত্যিকার শিক্ষা, মানবিকতার শিক্ষা, আর নিয়মশৃঙ্খলাকে যথাযথভাবে পরিচালনা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কঠোর শাসন ও অনুশাসন প্রয়োজন।
র্যাগিং নির্মূলের প্রধান অন্তরায় ছাত্রছাত্রীদের মনোভাব। এর পরিবর্তনে তিনটি জিনিসের অতি প্রয়োজন। আটিটিউড ছিল এবং নলেজ- এর উন্নতি। অ্যাটিটিউড-এর ‘এ’, স্কিল-এর ‘এস’ এবং নলেজ ইংরেজি শব্দের ‘কে’–একসঙ্গে যোগ করলে হবে ‘ASK’ অর্থাৎ জিজ্ঞাসা। এই আত্মজিজ্ঞাসার একান্ত প্রয়োজন। অভিভাবক-অভিভাবিকা, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আমজনতা সকলেরই আত্মজিজ্ঞাসার দরকার আছে। যদি আমরা আচরণ, দক্ষতা এবং জ্ঞানের ভাণ্ডারকে স্ফীত করতে পারি, তাহলেই র্যাগিং-এর অবসান সম্ভবপর হবে।
আরও পড়ুন
উচ্চমাধ্যমিক বিগত বছরএর প্রশ্নপত্র | Download Now |