যুবসমাজ ও অপরাধপ্রবণতা
বর্তমান যুবসমাজ তারুণ্যের প্রতীক। তাদের হৃদয়ের মৃত্যু দ্বায়ী সাহস সমাজকল্যাণে তাদের অনুপ্রেরণা দেয়। তাদের জীবনীশক্তি অসুরত্ব। কিন্তু যে যুবসমাজ ভবিষ্যতের দায়িত্ববান-কর্তব্যপরায়ণ নাগরিক, সেই যুবসমাজের মধ্যে বর্তমানে অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। এই অবক্ষয়ের কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।
আইনত নিষিদ্ধ যেসব দুর্নীতিমূলক কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেসব আদর্শবিহীন অপকর্মগুলিকে ‘অপরাধ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। স্বাভাবিক গুণগুলি বিলুপ্ত হয়ে যখন কেউ বিপথে পরিচালিত হয় তখনই তার নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয়। আর যুবসমাজের মধ্যে বিপথগামিতার প্রবণতা অত্যধিক মাত্রায় লক্ষ করা যায়। যুবসমাজকে উচ্চতা, অহমিকা বিসর্জন দিয়ে অদাশীল, কর্তব্য পরাণে, দায়িত্ববান হয়ে উঠতে হবে। কিন্তু বর্তমানে তাদের মধ্যে এই সকল সাধারণ মূল্যবোধগুলির অভাব দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা উচ্ছৃঙ্খল পরে পড়ছে।
যুবসমাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে অপরাধপ্রবণতা দেখা যায়, তা হল র্যাগিং। শিক্ষাবর্ষের সূচনায় কারিগরি ও মেডিকেল শিক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাসগুলিতে র্যাগিং-কে কেন্দ্র করে অমানুষিক নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে। মজার ছলে পুরোনো ছাত্রছাত্রীরা নবাগতদের জোর করে ধূমপান করতে বাধ্য করে, বিড়ি বা সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়, মদ খেতে বাধ্য করে, শীতের দিনে পুকুরে বা নদীতে গা ডুবিয়ে বসে থাকতে বলে ইত্যাদি। অনেকসময় বৃদ্ধির পরীক্ষা নিতে গিয়ে এমন প্রশ্ন করা হয় যা মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে চলে যায়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, যুবসমাজের মধ্যে নীতি এবং আদর্শজনিত শিক্ষার অভাব। প্রতিযোগিতার বাজারে বড়োরা চান, ছেলেমেয়েরা ভালো রেজাল্ট করুক, প্রকৃত জ্ঞান হবে কি হবে না তা ভাবার দরকার নেই। ভালো ছেলেমেয়েদের নষ্ট করে দেওয়ার এটাও একটি কৌশল। ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে, আর্থিক কারণে, স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘদিন একাকিত্বের কারণে যুবসমাজ বিকৃতমনস্ক হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, অপহরণ-সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এমনকি তারা চরমভাবে মানকাসত্ব হয়ে পড়ছে। এভাবে আজকের যুবসম্প্রদায় ক্রমশ অস্তাচলগামী।
বর্তমানে হতাশা ও অবসান এক গুরুত্বপূর্ণ মানসিক অসুস্থতা। এই অবসাদের শিকার মূলত যুবক-যুবতিরা। এমনকি এই অবসাদের ফলে যুবসমাজ ভুলবশত অত্মহত্যাও করে ফ্যালে। হতাশা ও অবসাদের নানারকম কারণ হতে পারে। ২৫-৩৫ বছর বয়সি যুবক-যুবতিরা প্রধানত বেকারত্বের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ছে। তারা নিজেদেরকে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে না। ফলে অর্থনৈতিক সংকটে তাদের মধ্যে ক্ষোভ জমতে থাকে। এ ছাড়াও মোবাইল, টিভি, সিরিয়াল, সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যধিক আসত্তির কারণে যুবসমাজের মধ্যে অবসাদ
দেখা যায়। যুবসমাজের অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় তাদের মনোভাব। এর পরিবর্তনে তিনটি জিনিসের অতি প্রয়োজন। অ্যাটিটিউড, স্কিল এবং নলেজ-এর উন্নতি। অ্যাটিটিউড-এর ‘এ’, স্কিল-এর ‘এস’ এবং নলেজ ইংরেজি শব্দের ‘কে’ একসঙ্গে যোগ করলে হবে ‘Ask’ অর্থাৎ জিজ্ঞাসা। এই আত্মজিজ্ঞাসার একান্ত প্রয়োজন। অভিভাবক-অভিভাবিকা, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আমজনতা সকলেরই আত্মজিজ্ঞাসার দরকার আছে। যদি আমরা আচরণ, দক্ষতা এবং জ্ঞানের ভাণ্ডারকে স্ফীত করতে পারি, তাহলেই যুবসমাজের অপরাধমূলক কর্মের প্রবণতা হ্রাস পাবে।