মৌসুমি বায়ুর উপর ‘জেট বায়ুর’ প্রভাব : মৌসুমি বায়ুর ওপর বা ভারতের ওপর জেট বায়ুর প্রভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর গোলার্ধে ক্রান্তীয় পূবালী জেটবায়ুপ্রবাহ
দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে
উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতের জলবায়ুতে বা মৌসুমি বায়ুর উপর
ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ুর ও শীতকালে উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ুর বিশেষ প্রভাব
দেখা যায়।
প্রশ্ন অনুযায়ী মৌসুমি ওপর বা ভারতের ওপর জেট প্রবাহের প্রভাবকে দুই ভাগে ভাগ করে
নিন্মে আলোচনা করা হল।
(ক) ক্রান্তীয়
পূবালী জেট বা গ্রীষ্মকালীন অবস্থা : মে জুন মাসে উত্তরায়ণের জন্য তিব্বত মালভূমি অধিক
উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
যার ফলে
উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু হিমালয়ের উত্তরে সরে যায় এবং ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু
ভারতের মাঝ বরাবর অবস্থান করে। যার ফলে ভারতের মাঝ বরাবর এক নিন্মচাপের সৃষ্টি হয় এবং বাষ্পপূর্ণ
বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু রূপে ভারতীয় স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় বা প্রবেশ
করে বর্ষাকালের সূচনা করে। হটাৎ মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটলে মৌসুমি বিস্ফোরণ প্রবল আকার ধারণ
করে। ক্রান্তীয়
পূবালী জেট বায়ুর ওপর নির্ভর করে ভারতের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এই জেট বায়ু ভারতের থেকে
সেপ্টেম্বর মাসে চলে মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়।
(খ) উপক্রান্তীয়
পশ্চিমা জেট বা শীতকালীন অবস্থা : শীতকালে সাধারণত এই জেট বায়ু ভারতের মধ্যে অক্টোবর
থেকে মে মাস পর্যন্ত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। ভারতের মধ্যে শীতকালীন মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি
ও প্রবাহের ক্ষেত্রে উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অক্টোবর মাসে উপক্রান্তীয়
পশ্চিমা জেট বায়ু তিব্বত মালভূমির মধ্যে উচ্চচাপের সৃষ্টি করে। আর যার ফলে দক্ষিণ পশ্চিম
মৌসুমি বায়ুর পশ্চাৎসরণ ঘটে বা ভারত থেকে সরে যেতে থাকে। আর যত এই বায়ু দক্ষিণের দিকে সরে যেতে
থাকে তত সারা ভারতব্যাপী শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। আবার এই জেট বায়ু মে মাসে তিব্বতের তাপীয়
প্রভাবে দুর্বল হয়ে এবং উত্তর দিকে সরে যেতে থাকে ও ক্রান্তীয় জেট বায়ু সৃষ্টি হতে
সাহায্য করে।
পুনরায়
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আগমনে সাহায্য করে।
ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে জেট স্ট্রিমের প্রভাব অতুলনীয়। শীতকাল ও গ্রীষ্মকালের স্থায়ীত্ব ও তীব্রতা,
বর্ষকলিং বৃষ্টিপাত, ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি অনেক ক্ষেত্রেই েই জেট বায়ুর অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির
ওপর নির্ভরশীল।