মূক ও বধির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি আলোচনা করো।

By

প্রশ্ন :  মূক ও বধির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি আলোচনা করো। 

উত্তর : যেসব শিশু সাধারনত জন্মের পর বা জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না এবং কানেও শুনতে পায় না, সেইসব শিশুদের মূক ও বধির শিশু বলা হয়। আবার, বধির শিশুদের আরো দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা—পূর্ণ বধির এবং আংশিক বধির। যেসব শিশুর শ্রবণ শক্তি ৪১ dB থেকে ৮০ dB এর মধ্যে তারা গুরুতর আংশিক বধির এবং যেসব শিশুর শ্রুতিশক্তি ৮০ dB উপরে তারা পূর্ণ বধির। কোনো শিশুর  বধিরত্ব মাপার জন্য যেসব যন্ত্রের ব্যাবহার করা হয় সেগুলি হল— সাউন্ড লেবেল মিটার, অক্টেড ব্যান্ড, ফ্রাকোয়েন্সি অ্যানালাইজার, অডিওমিটার ইত্যাদি।

        এইসব শিশুদের উচ্চশিক্ষা প্রদান করার জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে সেসব পদ্ধতি গুলি নিন্মরূপ আলোচনা করা হল। 

মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি :

১) মৌখিক পদ্ধতি : মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষা দানের জন্য মৌখিক পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন মনোবিদ জুয়ান প্যাবলো বনে। এই পদ্ধতির মূল বিষয় হল ঠোঁট নাড়া কৌশল এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষা বোধের বিকাশ ঘটানো। এখানে শিক্ষার্থীরা বা শিশুরা শিক্ষকদের ঠোট নাড়ার কৌশলকে মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ বা লক্ষ্য করে অনুকরণের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করে বা নিজেরাই কথা বলার চেষ্টা করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে বচনিক বিকাশ সাধন সম্ভব হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:  দৃষ্টিহীন বা অন্ধ শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি কি কি?

২) সঞ্চালনমূলক পদ্ধতি : মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষা দানের জন্য আরেকটি অন্যতম পদ্ধতি হল সঞ্চালনমূলক পদ্ধতি। শিক্ষাবিদ পেরিয়ার হলেন এই পদ্ধতির প্রবর্তক। এই পদ্ধতিতে হাতের সঞ্চালনের সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে হাত সঞ্চালনের সাহায্যে বা হাত নড়াচড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন বর্ণ প্রকাশ করা। আঙুল হাতের তালুতে স্পর্শ করে বা আঙ্গুলের বিভিন্ন অবস্থানের সাহায্যে এক একটি বর্ণ বোঝানো হয়। মূক ও বধির শিশুদের এবিষয়ে ভালো ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে অক্ষর,বানান,বাক্য ও লেখা সহজে সেখান হয়। 

৩) কম্পন ও স্পর্শন পদ্ধতি : কেটি আলকর্ণ ও সেফিয়া আলকর্ণ এই দুই জন হল কম্পন ও স্পর্শন ভিত্তিক শিক্ষাদানের পদ্ধতির আবিষ্কারক। এই পদ্ধতিতে শিক্ষকের কথা বলার সময় শিশুরা তাদের কন্ঠনালি, গালে ও ঠোঁটে হাত রেখে শব্দের কম্পন স্পর্শের মাধ্যমে শব্দ অনুভব করে। শিশুরা বার বার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তাদের ভুল সংশোধন করে এবং শব্দ গুলিকে সঠিক ভাবে চিনতে সফল হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান অনেক জটিল। 

৪) দর্শন নির্ভর পদ্ধতি : বধির বা শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য দর্শন ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের সময় শিশুরা শিক্ষকের উচ্চারণের সময় মুখের আকৃতি লক্ষ করে এবং পরে তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একই রূপ মুখের আকৃতি করে বর্ণ বা শব্দ উচ্চারণ অনুশীলন করে। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটিকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের দর্শন ভিত্তিক বর্ণ সংকেত তৈরি হয়েছে। যেমন—a এবং o উচ্চারণের জন্য নিম্নলিখিত চিত্র দুটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
a বোঝার জন্য –   সংকেত
o বোঝার জন্য – ⊙ সংকেত

৫) শ্রবণসহায়ক পদ্ধতি : বধির শিশুদের শিক্ষাদানের একটি অন্যতম পদ্ধতি হল শ্রবণসহায়ক পদ্ধতি। বর্তমানে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন শ্রুতি সহায়ক যন্ত্র ব্যাবহার করে আংশিক বধির শিশুদের বধিরতা দূর করা যায়। আর এর ফলে শিশুর বেশিরভাগ সময়েই স্বাভাবিক শিশুর মতো কথা বলতে পারে। এর ফলে শিশু খুব সহজে কথা শুনতে বলতে পারে এবং শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্ভব হয়।  

আরও পড়ুন:  শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি লেখো | শিখন ও পরিণমনের পার্থক্য

উপসংহার : সর্বশেষে বলা যায় যে, মূক ও বধিরদের শিক্ষাদানের জন্য যেসব পদ্ধতি উপরে আলোচনা করা হল তাদের প্রত্যেকটি একে অপরের থেকে ভিন্ন হলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে যখন যে পদ্ধতির প্রয়োজন, তখন সেই পদ্ধতিটি ব্যবহার করার স্বাধীনতা শিক্ষকের রয়েছে। প্রয়োজন হলে একই সঙ্গে সব পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করা সম্ভব। উপরিক্ত আলোচিত সমস্থ শিক্ষাদানের পদ্ধতিগুলির মূল উদ্দেশ্য হল মূক ও বধির শিশুদের বাচনিক বিকাশ ঘটিয়ে এদেরকে পঠন ও পাঠনে সমর্থ করে তোলা।

1 thought on “মূক ও বধির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি আলোচনা করো।”

Leave a Comment