ভূমিকা : ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রক মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কারের জন্য ১৯৫২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ লক্ষণস্বামী মুদালিয়র এর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। যা মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়র কমিশন নামে পরিচিত। ১৯৫৩ সালে ২৯শে আগস্ট ভারত সরকারের কাছে কমিশন একটি ৩৩১ পৃষ্টার রিপোর্ট পেশ করেন। পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা সম্পর্কে এই কমিশনের সুপারিশগুলি নিন্মরূপ আলোচনা করা হল।
(1) বহিঃপরীক্ষা ও অভ্যন্তরীন পরীক্ষা : শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নির্ণয়ের জন্য বহিঃপরীক্ষার পাশাপাশি আভ্যন্তরীন পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
(2) বস্তুধর্মী পরীক্ষা : পরীক্ষা ব্যবস্থাকে নৈব্যক্তিক করার জন্য রচনাধর্মী প্রশ্নের বদলে যতটা সম্ভব বস্তুধর্মী প্রশ্নের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছে।
(3) প্রকৃত জ্ঞান পরিমাপ : অভীক্ষাপত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীর ៖ প্রকৃতজ্ঞান পরিমাপ করা সম্ভব হয়। শিক্ষার্থীদের মুখস্তবিদ্যার পাশাপাশি তাদের ক্ষমতা যেমন—বোধগম্যতা, প্রয়োগ ক্ষমতা ইত্যাদি গুণগুলি প্রকাশ পায়।
আরও পড়ুন : মুদালিয়র কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
(4) কিউমুলেটিভ রেকর্ড কার্ড (CRC) : কমিশন মনে করে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন উন্নতি নির্ণয়কল্পে বিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি ঘটনা পৃথকভাবে রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, মুদালিয়র কমিশন Cumulative Record card প্রবর্তনের কথা বলে। এই পরিচয়পত্রে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক জ্ঞানের পাশাপাশি তার অন্যান্য দক্ষতা ও অগ্রগতিরও রেকর্ড থাকবে।
(5) সঠিক বিবেচনা : কোন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন পরীক্ষা বার্ষিক পরীক্ষা ও সর্বাত্মক পরিচয়পত্র একত্রে বিবেচনা করা উচিত।
(6) সংকেতিক চিহ্ন বা গ্রেডসিস্টেম ব্যাবহার : পরীক্ষায় বহিঃ পরীক্ষা ও আন্তঃ পরীক্ষা নম্বরের পরিবর্তে সাংকেতিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে — A – খুবভালো, B- ভালো, C- সাধারণ, D- মন্দ, E- অতিমন্দ। সংখ্যা দ্বারা শিক্ষার্থীর যোগ্যতা বিচার বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তব সম্মত নয়।
(7) নৈব্যক্তিক পরীক্ষা : প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষাকাঠামোর অন্তগর্ত পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মুখস্তবিদ্যার উপর নির্ভর করে পরীক্ষা দিতে হত। কমিশন শিক্ষার মানকে উন্নত করার জন্য নৈব্যক্তিক পরীক্ষার উপর বেশি জোর দিতে বলেছে।
(8) সাপ্তাহিক, মাসিক, ষান্মাসিক পরীক্ষা : শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নির্ণয়ের জন্য বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে সাপ্তাহিক, মাসিক, ষান্মাসিক প্রভৃতি পরীক্ষার ফলাফল যুক্ত করার কথা বলেছে কমিশন।
আরও পড়ুন : সংক্ষেপে স্কিনার বক্সের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো।
(9) নোটভিত্তিক পড়াগুলো বাতিল : শিক্ষার্থীর গুণাবলী ও গুণমানকে বৃদ্ধি করতে তাদের নোটভিত্তিক পড়াশোনা বন্ধ করতে হবে। সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
(10) কম্পার্টমেন্টাল পরীক্ষা : সাধারণ বহিস্থ পরীক্ষায় একটি বা দুটি বিষয়ে ফেল করাদের জন্য Compartmental পরীক্ষা প্রচলনের সুপারিশ করে।
উপসংহার : উপরিক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন এই স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য যেসমস্থ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার জন্য সুপারিশ করেছে সেগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের যোগ্যতা নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। কমিশন পরীক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেত্রে যা সুপারিশ করেছেন তা বাস্তবে কার্যকরী না হলেও বর্তমানে কিছু কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে। যেমন – রচনাধর্মী প্রশ্নের পাশাপাশি নৈব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তরের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া সম্ভবপর হয়েছে।