প্রশ্ন: ভৌম জলের নিয়ন্ত্রক গুলি আলোচনা করো।
উত্তর : ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বৃষ্টিপাতের জল ও তুষার গলা জল ভূমি ভাগের প্রবেশ্য শিলা স্তর দ্বারা নিচের দিকে প্রবাহিত হয় এবং ভূগর্ভের অপ্রবেশ্য শিলা স্তর এর মধ্যে বাধা প্রাপ্ত হয়ে অপ্রবেশ্য শিলা স্তর এর উপরে যে জল সঞ্চিত হয় তাকে ভৌম জল বলে। ভূ-অভ্যন্তরের মধ্যে এই জল যে রেখা পর্যন্ত বা স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে সঞ্চিত হয় সেই রেখা বা স্তর ভৌম জলস্তর বলে।
➥ ভৌমজলের নিয়ন্ত্রকসমুহ :-
যেসব প্রাকৃতিক অবস্থা ও মানবীয় কার্যাবলীর ভিত্তিতে ভূ- অভ্যন্তরের জলের অনুস্রবণ, সঞ্চয়, চলন ও পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করে ভৌম জলস্তর গড়ে তোলে, তাদের ভৌমজলের নিয়ন্ত্রক বলে। ভৌম জলের নিয়ন্ত্রক গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –
(i) অধঃক্ষেপণের প্রকৃতি, পরিমাণ ও স্থায়িত্ব :- ভৌম জল সঞ্চয় এর ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, তুহিন প্রভৃতি এর পরিমাণ ও স্থায়িত্ব ভৌম জলের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। এক্ষেত্রে যে সমস্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের পরিমাণ অত্যাধিক হারে থাকে সেই সমস্ত অঞ্চলে ভৌমজল সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি থাকে। আবার যে সমস্ত অঞ্চলে অধঃক্ষেপণের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব কম হয় সেই স্থানে ভৌম জল সঞ্চয় এর পরিমাণ কম লক্ষ্য করা যায়। যেমন- বর্ষাকালে ভৌম জল-এর সঞ্চয় বেশি হয় এবং ভৌম জলতল উপরে উঠে আসে। আবার, শুষ্ক ঋতুতে ভৌমজল এর সঞ্চয় কম হয় যার কারণে ভৌম জলতল খুব নিচে অবস্থান করে।
(ii) ভূমির ঢাল :- ভৌমজল সঞ্চয়ের বা ভৌমজল এর নিয়ন্ত্রক গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ভুমির ঢাল। যেসব অঞ্চল অত্যাধিক ঢাল যুক্ত হয়ে থাকে সেইসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও তুষার গলা জল খুব সহজে ঢাল বরাবর বয়ে যায়, যার কারণে ভূপৃষ্ঠের নিচে প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে অত্যাধিক ঢাল যুক্ত অঞ্চলে খুব কম পরিমাণে ভৌম জল সঞ্চয় হয় এবং ভৌম জলতল খুব নিচে অবস্থান করে। আবার যেসব অঞ্চল মৃদু ঢাল যুক্ত বা সমভূমি প্রকৃতির সেই সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের জল খুব সহজে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং সেই জল সঞ্চিত হয়ে এক জলভন্ডার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
(iii) প্রবেশ্য শিলা স্তরের নিচে অপ্রবেশ্য শিলা স্তরের অবস্থান :- ভু-অভ্যন্তরের মধ্যে ভৌম জলভান্ডার গড়ে ওঠার জন্য একটি প্রবেশ্য শিলার নিচে অপ্রবেশ্য শিলার অবস্থান থাকা প্রয়োজন। কারণ প্রবেশ শিলা স্তর দ্বারা জল প্রবেশ করে অপ্রবেশ্য শিলা স্তরে বাধা প্রাপ্ত হয়ে ভৌম জল সঞ্চয় ভান্ডার গড়ে তুলবে।
(iv) শিলার প্রবেশ্যতা ও সছিদ্রতা :- বেলেপাথর, চুনাপাথর, চক প্রভৃতি শিলা পর্যাপ্ত পরিমাণে সছিদ্রতা ও প্রবেশ্য প্রকৃতির হয়। আর এই সমস্ত প্রবেশ্য শিলা যে সমস্ত অঞ্চলে অবস্থান করে সেই সমস্ত অঞ্চলে খুব সহজে ভূপৃষ্ঠীয় জল ভূ- অভ্যন্তর সঞ্চিত হয়ে এক ভৌম জলভান্ডার তৈরি করতে সক্ষম হয়। আবার, যে সমস্ত অঞ্চলে শ্লেট, ব্যাসল্ট, শেল প্রভৃতি অপ্রবেশ্য শিলার অবস্থান থাকে সেই সমস্ত অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠীয় জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না।
(v) বাষ্পীভবনের মাত্রা :- যে সমস্ত অঞ্চলে সাধারণত বাষ্পীভবনের মাত্রা অত্যাধিক হারে হয় সেই সমস্ত অঞ্চলে সহজে ভৌম জলভান্ডার গড়ে উঠতে দেখা যায় না। যেমন- মরুভূমি অঞ্চল।
(vi) ভূমি ব্যবহারের ধরন :- ভৌমজল সঞ্চয় এর একটি অন্যতম নিয়ন্ত্রক হলো ভূমি ব্যবহারের ধরন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, গ্রামাঅঞ্চল গুলিতে ক্রমাগত কৃষিকাজ ও পশুচারণ করা হয়ে থাকে যার ফলে মাটি উন্মুক্ত ও আলগা প্রকৃতির হয়ে পড়ে আর ফলস্বরূপ ভূ অভ্যন্তরে অধিক পরিমাণে জলের অনুপ্রবেশ ঘটে। কিন্তু শহর বা নগর গুলিতে পাকা বাড়ি রাস্তা প্রভৃতি ভৌমজলকে ভূ- অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় যার ফলে সেখানে ভৌম জলের পরিমাণও কম হয়।
(vii) অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সমূহ :- উপরিক্ত ভৌমজল এর নিয়ন্ত্রক গুলি ছাড়াও আরো কিছু নিয়ন্ত্রক রয়েছে। যথা – ভূপৃষ্ঠের আচ্ছাদন, শিলার ঢাল, উন্মুক্ত ভূমিভাগ প্রভৃতি।