ভারতের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী ব্যাখ্যা করো।

By

ভারতের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী :

রাজ্যের বিচারবিভাগের শীর্ষে রয়েছে হাইকোর্ট। বর্তমানে ভারতে ২১টি হাইকোর্ট রয়েছে। যদিও সংবিধান অনুযায়ী ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে (২১৪ নং ধারা)। কিন্তু পার্লামেন্ট আইন করে দুই বা ততোধিক রাজ্যের জন্য একটি হাইকোর্ট স্থাপন করতে পারে।

গঠন : রাজ্যের হাইকোর্টগুলিতে কতজন করে বিচারপতি থাকবে সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। সংবিধানে উল্লেখ আছে একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে। অন্যান্য বিচারপতিদের সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন। রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যোগ্যতাবলী হল – (i) অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। (ii) বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ১০ বছর আসীন থাকতে হবে অথবা হাইকোর্ট বা দুই বা ততোধিক এই ধরনের আদালতে ১০ বছর একাদিক্রমে আইনজীবি হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।

হাইকোর্টের বিচারপতিরা ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। তবে প্রমাণিত অসদাচারণ বা অক্ষমতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পার্লামেন্ট উভয়কক্ষে উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি অভিযুক্ত বিচারপতিকে অপসারিত করতে পারেন।

আরও পড়ুন:  বিশ্বউষ্ণায়নের প্রকৃতি আলোচনা করো।

কার্যাবলী : 

ভারতীয় সংবিধানে হাইকোর্টের কার্যাবলী সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে সর্বক্ষেত্রেই তাদের সংবিধান এবং আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের গন্ডির মধ্য থেকে বিচার কার্য সম্পাদন করতে হবে। হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে নিম্নলিখি ভাগে আলোচনা করা যায় :

(1) মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা : রাজস্বসংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ই হাইকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্গত। এছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাকেও মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়। তবে শুধুমাত্র কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বাই হাইকোর্টের মূ ল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা রয়েছে।

(2) আপিল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা : রাজ্যের সর্বোচ্চ আপীল আদালত হল হাইকোর্ট। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ এবং অধস্তন জেলা জজের প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। কোনো নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আত্ম পিল মামলায় কোন উচ্চ আদালত যে রায় দেয়, তার বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এছাড়া, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্জের কোন রায়ের বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপীল করা যায়।ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ কোনো ব্যক্তিকে ৭ বছরের অধিক কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে অথবা সহকারী দায়রা জজ, মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট কিংবা অন্যান্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করা যায়।

আরও পড়ুন:  দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও।

(3) নির্দেশ, আদেশ, লেখ জারির ক্ষমতা : হাইকোর্ট মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য বন্দি-প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে। অন্য যে কোনো উদ্দেশ্যেও হাইকোর্ট লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে। জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলেও হাইকোর্ট ‘বন্দি-প্রত্যক্ষকীকরণ’ ধরনের লেখ জারির ক্ষমতা ভোগ করে।

(4) আইনের বৈধতা বিচার : কেন্দ্রীয় বা রাজ্য আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে।

(5) তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা : হাইকোর্ট সামরিক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্যান্য আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহের তত্ত্বাবধান করতে পারে। এই ক্ষমতা অনুযায়ী হাইকোর্ট যে কোনো প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করার জন্য অধস্তন আদালত সমূহকে নির্দেশ দিতে পারে।

(6) মামলা অধিগ্রহণ করার ক্ষমতা : সংবিধানের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এমন কোনো মামলা নিম্ন আদালতে বিচারাধীন থাকলে হাইকোর্ট উক্ত মামলাটি বিচারের দায়িত্ব স্বহস্তে গ্রহণ করতে পারে।

আরও পড়ুন:  ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।

(7) নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা : জেলা জজের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে এবং নিম্ন আদালতগুলির অন্যান্য বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল হাইকোটের পরামর্শমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জেলা আদালতসহ অন্যান্য নিম্ন আদালতের কর্মচারীবৃন্দের নিয়োগ, পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে হাইকোর্টের বিশেষ ভূ মিকা রয়েছে।

(৪) অন্যান্য ক্ষমতা : সুপ্রিমকোর্টের মত হাইকোর্ট ও অভিলেখ আদালত (Court of Records) হিসাবে কাজ করে। হাইকোর্ট নিজ অবমাননাকারীকে শাস্তি দিতে পারে। হাইকোর্ট বিচারকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী তৈরি করতে পারে।

উপসংহার : হাইকোর্টের গঠন ও ক্ষমতাবলী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে হাইকোর্ট সর্বভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি অঙ্গ। হাইকোর্টের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যেমন বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, অপসারণ, নতুন হাইকোর্ট গঠন, এক্তিয়ার বৃদ্ধি বা হ্রাস, বেতন-ভাতার হ্রাস বৃদ্ধি স্পষ্টতই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, এছাড়া হাইকোর্টের যে কোনো রায় সুপ্রিমকোর্ট বাতিল করতে পারে। সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশিকা মানতে হাইকোর্ট বাধ্য। তাই হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টের অধীন সহায়ক আদালত হিসাবে কাজ করে।

Leave a Comment