ভারতের বিচার ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
(1) অখণ্ড বিচারব্যবস্থা : সুপ্রিম কোর্ট হল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ও সর্বোচ্চ আপিল আদালত। অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টসমূহ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে থেকে বিচারকার্য সম্পাদন করে। আবার হাইকোর্টের অধীনে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সমূহ। ড: আম্বেদকর গণপরিষদে উল্লেখ করেছিলেন যে, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত-শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলেও দ্বৈত-বিচারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়নি। তবে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে সামরিক আদালত ইত্যাদি গঠিত হয়।
(2) অভিন্ন বিধি : সমগ্র ভারতবর্ষে একই ধরনের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদিত হয়। অঙ্গরাজ্যের জন্য পৃথক কোনো আইনব্যবস্থা নেই।
(3) প্রশাসনিক আদালের অবস্থিতি : সংসদ আইন প্রণয়ন করে সরকারি কর্মচারী, স্থানীয় স্বংস্থা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীদিগের চাকুরি সংক্রান্ত যাবতীয় বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনিক আদালত গঠন করতে পারে। এছাড়া শিল্প, ভূমিসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে।
(4) আদালতের সীমাবদ্ধতা : ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতার’ নীতির কথা বলা হলেও সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালেরা স্বপদে থাকাকালীন যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তার জন্য আদালতের কাছে কোনোরূপ জবাবদিহি করতে হয় না। স্বপদে থাকাকালীন তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না। বিদেশি রাষ্ট্রের শাসকবৃন্দ ও রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মচারিদের অপরাধের বিচার ভারতীয় আদালতে হয় না। ইত্যাদি নানাবিধ কারণে আইনের দৃষ্টিতে সমতার নীতি সংকুচিত হয়েছে।
(5) দূর্বল যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের ন্যায় ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী নয়। যদিও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্ট প্রণীত কোনো আইনকে সংবিধান-বিরোধী মনে করলে খারিজ করে দিতে পারে কিন্তু আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি অনুযায়ী কোনো আইন ‘স্বাভাবিক ন্যায়নীতিবোধের বিরোধী কিনা তা বিচার করতে পারে না। পার্লামেন্ট নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও গরিষ্ঠতায় আইন পাশ করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও বাতিল করতে পারে। জরুরী অবস্থায় মৌলিক অধিকার রক্ষায় সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।
(6) শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ : যদিও ভারতে বিচারবিভাগকে শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে যুক্তরাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিচারপতিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শাসন বিভাগ যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন ১৯৭৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শে বরিষ্ঠ বিচারপতিদের উপেক্ষা করে এ. এন. রায়কে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ করা হয়।
(7) বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা : বিচারপতিরা যাতে নিরপেক্ষতার সঙ্গে কার্য সম্পাদন করতে পারে তার জন্য ভারতীয় সংবিধানে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন তাঁদের পদচ্যুতি, বিচারপতিদের রায়ের চূড়ান্ত মান্যতা, অবসর গ্রহনের পর আইনজীবী হিসাবে কাজ না করা ইত্যাদি। তবু ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রভাবশালী সরকার চাইলে রাজনৈতিক কারণে পার্লামেন্টে ইম্পিচমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে পারে। এছাড়া সাম্প্রতিককালে অবসরের পরে বিচারপতিরা রাজ্যপাল, রাষ্ট্রদূত, আইনসভার সদস্য পদে নিযুক্ত হওয়ার বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
(৪) দরিদ্রের স্বার্থের পরিপন্থী : সরকারি আনুকূল্যে মামলা চালানোর কোনো ব্যবস্থা ভারতে নেই। তাই দরিদ্র ভারতবাসীর পক্ষে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মামলা চালানো সম্ভব হয়। না। তাই বিত্তশালী অপরাধী ব্যক্তিরা অর্থের জোরে নামী আইনজীবী নিয়োগ করে মামলায় জয়লাভ করে। যদিও দরিদ্রব্যক্তিদের সাহায্যের ঘোষণা ৪২তম সংবিধান সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এটি নির্দেশমূলক নীতির অন্তর্ভূক্ত থাকায় এটি কার্যকর করতে সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।