রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ গঙ্গাকে মর্ত্যে আনয়ন করেছিলেন বলে দেবী গঙ্গা ভাগীরথী নামে পরিচিত হয়েছেন। রাজা ভগীরথ সম্পর্কে মৎস্যপুরাণে যে কাহিনী রয়েছে,তা হল-ইক্ষ্বাকুবংশীয় সগর রাজার পঞ্চম পুরুষ রাজা ভগীরথ কপিলমুনির অভিশাপে ভষ্মীভূত পিতৃপুরষদের উদ্ধারের জন্য প্রথমে ব্রহ্মার তপস্যা করে তাঁকে তুষ্ট করেন। পরে আবার শিবের তপস্যা করে তাঁকে তুষ্ট করে গঙ্গাকে মর্ত্যে আনয়ন করেছিলেন। গঙ্গা শিবের জটা থেকে মুক্ত হয়ে সাতটি ধারায় প্রবাহিত হয়েছিল। তার মধ্যে তিনটি ধারা পূর্বে ও তিনটি ধারা পশ্চিমে প্রবাহিত হলে একটি ধারা রাজা ভগীরথকে অনুসরণ করে চলে। ভগীরথ সেই স্রোতের পথ নির্দেশ করেছিলেন বলেই সেই প্রবাহের নাম হয় ভাগীরথী। ভগীরথ দিব্যরথে গঙ্গার সঙ্গে রসাতলে যান এবং গঙ্গার ধারা সগর সন্তানদের ভস্মরাশির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে তাঁরা মুক্তিলাভ করে স্বর্গে যান।
মহাভারত অনুসারে জানা যায় যে, গঙ্গা এক অপূর্ব নারীমূর্তি ধারণ করে রাজা শান্তনুকে আকৃষ্ট করেন। রাজার অনুনয়ে একটি শর্তে গঙ্গা শান্তনুকে পতিত্বে বরণ করেন। শর্ত ছিল এই যে, রাজা শান্তনু গঙ্গার কোনো কাজে বাধা দিলে সেই মহুর্তেই গঙ্গা তাঁর কাছ থেকে চলে যাবেন। এই শর্তে গঙ্গা শান্তনুর স্ত্রী হয়ে সাত ছেলের জননী হন ও জন্মমাত্রেই প্রত্যেকটি ছেলেকে গঙ্গাগর্ভে নিক্ষেপ করেন। কিন্তু অষ্টম ছেলে জন্ম নিতেই শান্তনু তার প্রাণবধে বাধা দেওয়ায় গঙ্গা বিদায় নেন, তবে নবজাত শিশুকে সঙ্গে নিয়ে যান। তারপর ছত্রিশ বছর পরে ছেলেকে রাজোচিত শিক্ষা দিয়ে শান্তনুর কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যান। গঙ্গার ঐ ছেলের নাম দেবব্রত। পরে তিনি ভীষ্ম নামে বিখ্যাত হওয়ায়, গঙ্গা ভীষ্মজননী নামে পরিচিতা।
ভগীরথ ব্রহ্মা ও মহাদেবকে তুষ্ট করে গঙ্গাকে রসাতলে আনয়ন করেছিলেন। সেই সময় মর্ত্যে জহ্নুমনি যজ্ঞ কর্মে রত ছিলেন। গঙ্গার ধারায় জহ্নুমুনির যজ্ঞাদি উপকরণ ভেসে যায় এবং যজ্ঞভূমিও প্লাবিত হয়ে যায়। জহ্নুমুনি এতে অতিশয় ক্রুদ্ধ হন ও গঙ্গাকে গভুষে পান করেন। এরপর ভগীরথ স্তুতি করে জহ্নুমুনিকে সন্তুষ্ট করলে তিনি জানু বিদীর্ণ করে গঙ্গাকে মুক্তি দেন। সেই থেকে গঙ্গা জহ্নুমুনির কন্যাস্থানীয়া বা মুনিরকন্যা নামে খ্যাতা হয়েছেন।