‘ব্রেইল পদ্ধতি’ সম্পর্কে সক্ষেপে লেখো :
➱ ব্রেইল পদ্ধতি : দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য সবচেয়ে ও ভুল পরিমাণে ব্যবহৃত এক বিশেষ ধরণের স্পর্শ ভিত্তিক পদ্ধতিকে ব্রেইল পদ্ধতি বলা হয়। ফরাসি শিক্ষাবিদ লুইস ব্রেইল ১৮২৯ খ্রীঃ ব্রেইল পদ্ধতি সর্বপ্রথম অবিষ্কার করেন। তাই তার নামানুসারে এই পদ্ধতির নাম হয় ব্রেইল পদ্ধতি।
➱ উদ্দেশ্য : এটি হল স্পর্শভিত্তিক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে অন্ধ শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। তাই ব্রেইল পদ্ধতিকে দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার আত্মা বলা হয়। ব্রেইল পদ্ধতিটির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিশুদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা বা বা শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা।
➱ ব্রেইলের গঠন : ব্রেইলের গঠন হল আয়তকার প্লেটের মতো । প্রতিটি সারিতে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্রেইল কোশ। প্রতিটি কোশে ৬টি বিন্দু থাকে। এই বিন্দুগুলিকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে বিভিন্ন বর্ণ তৈরি করা যায়। এছাড়াও থাকে স্টাইলাস, যেটি দিয়ে চাপ দিলে নীচে রাখা শক্ত কাগজ চাপের ফলে গর্ত হয়ে যায়। স্টাইলাসের সাহায্যে লেখা হয়ে থাকে। স্টাইলাস দিয়ে চাপ দেওয়ার ফলে নীচে রাখা শক্ত কাগজে গর্ত তৈরি হয়। এরপর ফর্মা থেকে কাগজ বার করলে উলটো দিকে উঁচু উঁচু বিন্দু পাওয়া যায়, যা স্টাইলাসে চাপ দেওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল।
➱ ব্রেইল এর পাঠ্য বিষয় : ব্রেইল পদ্ধতির সাহায্যে, গণিত, বৈজ্ঞানিক সংকেত, গানের স্বরলিপি প্রভৃতি বিষয়ে পড়া যায়।
➱ ব্রেইল পড়ার পদ্ধতি : এই উচুঁ উচুঁ বিন্দুগুলি হাতের আঙুলের স্পর্শে পড়তে হয়, একেই বলে ব্রেইল পড়া। গর্তগুলি যাতে স্পষ্ট ও স্থায়ী হয়, সেইজন্য একটু মোটা কাগজ নেওয়া হয়। সাধারণত বাম দিক থেকে ডান দিকে ব্রেইল পাঠ করতে হয়। একজন ব্রেইল পাঠক প্রতিমিনিটে সর্বাধিক ৬০টি শব্দ পড়তে পারে। বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যেও ব্রেইল লেখার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ব্রেইল পদ্ধতির বাংলা সংস্করণ উদ্ভাবন করেন কলকাতার ব্লাইন্ড স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা লালবিহারী শাহ, ১৯৫০ খ্রীঃ UNESCO পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ব্রেইল পদ্ধতি প্রবর্তনের বিভিন্ন চেষ্টা করে।
➱ ব্রেইল পদ্ধতির অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা : ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকলেও। পদ্ধতিটির কিছু অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেগুলি হল –
(ক) ব্রেইল যন্ত্রটি ভারী : বেইলটি খুব ভারী হওয়ার কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে অসুবিধার সন্মুখীন হতে হয়।
(খ) বৃহৎ আকৃতি : ব্রেইলের আয়তন সাধারণ বইয়ের তুলনায় অনেক বড়ো হওয়ায় অনেক বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থান করে।
(গ) সময়সাপেক্ষ : ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা ও পড়া শিখতে সাধারনত বেশি সময় লাগে। যার ফলে বহু শিক্ষার্থী ধৈর্য হারিয়ে ফেলে।
(ঘ) ব্যয়বহুল : ব্রেইল তৈরিতে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যার ফলে বিভিন্ন ভাষায় ব্রেইল পাওয়া অনেকে কাষ্ঠদেক হয়ে থাকে।
(ঙ) দক্ষ শিক্ষকের অভাব : ব্রেইল পড়া ও লেখা শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে দক্ষ শিক্ষকের অভাব থাকার কারণে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা দানে অসুবিধার সন্মুখীন হতে হয়।
উপসংহার : সর্বশেষে বলা যায় যে, ব্রেইল পদ্ধতিটি হল দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য একটি বিশেষ স্পর্শ ভিত্তিক প্রক্রিয়া। ব্রেইল পদ্ধতি দৃষ্টিহীন বা অন্ধ শিশুদের শিক্ষাদানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে বাংলা ভাষাতেও উন্নতমানের ব্রেইল লেখার ব্যবস্থা হয়েছে। বর্তমানে ছোটো আকারে ব্রেইল ব্যবহার করার প্রচলন হচ্ছে যাকে রেইলশেট বলে। একে পকেটেও রাখা যায়। এইভাবে এই পদ্ধতিকে আরো সহজ করা হচ্ছে। তবে ব্রেইল পদ্ধতি শিক্ষণের জন্য যোগ্য শিক্ষকের প্রয়োজন, খুব ব্যয়সাধ্য পদ্ধতি।