বৈদ্যুতিন শিল্প : ইলেকট্রন
কণার প্রবাহের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক নকশা তৈরি করে বিদ্যুৎ নির্ভর বিভিন্ন প্রকার যেসব
সরঞ্জাম
যে শিল্পে উৎপন্ন করা হয়, সেই শিল্পকে বৈদ্যুতিন বা ইলেকট্রনিক্স শিল্প বলে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫০ সালে ভারতে সর্বপ্রথম
ব্যাঙ্গালুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত Indian Telephone Industry (ITI) স্থাপনের মাধ্যমে বৈদ্যুতিন শিল্পের জয়যাত্রা
শুরু হয়। ১৮৭৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত
কর্ণাটক স্টেট ইলেকট্রনিক্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (KSEDC)গঠিত হলে, তিনটি পর্যায়ের
মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিন শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং ব্যাঙ্গালুরু বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ
বৈদ্যুতিন শিল্প নগরীতে পরিণত হয়।
ব্যাঙ্গালুরু ‘ইলেকট্রনিক্স শিল্পে’ উন্নত হওয়ার কারণ : ব্যাঙ্গালুরু ইলেকট্রনিক্স বা বৈদ্যুতিন শিল্পে উন্নত হওয়ার পিছনে নানান প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক কারণ রয়েছে। যেমন –
(১) ঐতিহাসিক কারণ : ১৯৭৬ সালে কেওনিকস -এর প্রথম চেয়ারম্যান রামাকৃষ্ণ বালিগা
এর নেতৃত্বে ব্যাঙ্গালুরুকে বৈদ্যুতিন শিল্প নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা এবং ১৯৭৮ সালে
কর্ণাটক স্টেট ইলেকট্রনিক্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন গঠন শিল্পটির উন্নতির ভিত্তি রচনা করে।
(২)
প্রাকৃতিক কারণ : ব্যাঙ্গালুরুতে বৈদ্যুতিন
শিল্প গড়ে ওঠার পিছনে প্রাকৃতিক কারণগুলি নিন্মরূপ আলোচনা করা হল।
(ক)
সুরক্ষিত অবস্থান : দক্ষিণ ভারতে উপদ্বীপীয় মালভূমির কেন্দ্রভাগে পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট
পর্বত বেষ্টিত ব্যাঙ্গালুরু মহানগরটির অবস্থান হওয়ার কারণে এখানে অবস্থিত শিল্প কারখানাগুলির
নিরাপত্তার সুবিধা রয়েছে।
(খ)
ভূপ্রকৃতি : ময়দান অঞ্চলে মহীশূর মালভূমির উপর আশেপাশে পাহাড় যুক্ত বন্ধুর ও ব্যবচ্ছিন্ন
ভূপ্রকৃতি প্রাথমিক জীবিকার উন্নতি ঘটাতে পারেনি। এছাড়া ব্যাঙ্গালুরুতে নানা ধরনের শিল্পের
প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জমির সহজলভ্যতা আছে। ফলে বৈদ্যুতিন শিল্পের প্রসার ঘটেছে।
(গ)
জলবায়ু : দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্রস্থলে ৬০০-১০০০ মিটার উচুতে অবস্থিত হওয়ায় সারা বছর
ধরে মৃদু ও সমভাবাপন্ন উষ্ণতা, মেঘমুক্ত নির্মল আকাশ এবং স্বল্প বৃষ্টিপাত (গড়ে ৯৭
সেমি) সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিন শিল্পের দ্রব্য গুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উৎপাদনের পক্ষে আদর্শ।
(ঘ)
অন্যান্য সম্পদের অভাব : স্থানীয় কয়লা, আকরিক লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, ডলোমাইট, জিপসাম,
চুনাপাথর ইত্যাদি খনিজ এবং বনজ, কৃষিজ সম্পদের অভাবে ব্যাঙ্গালুরু অঞ্চলে বৃহৎ খনি
ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রসার ঘটেনি এবং সূক্ষ্ম প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
(২) আর্থ-সামাজিক কারণ : ব্যাঙ্গালুরুতে বৈদ্যুতিন
শিল্প গড়ে ওঠার পিছনে আর্থ-সামাজিক কারণগুলি নিন্মরূপ আলোচনা করা হল।
(ক)
কাঁচামালের সহজলভ্যতা : ব্যাঙ্গালুরুতেই ইলেকট্রিক্যাল ইনসুলেশন থার্মোপ্লাস্ট তৈরির
ফলে এই শিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সস্থায় ও সুলভে পাওয়া যায়।
(খ) বিদ্যুৎশক্তির প্রাচুর্য : স্থানীয় তাপ বিদ্যুতের অভাব থাকার
সত্ত্বেও মেত্তুর, তুঙ্গভদ্রা, শিবসমুদ্রম, পাপনাশম, পাইকারা
ও সরাবতী কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণে সস্তা জলবিদ্যুৎ এবং কৈগা থেকে পারমাণবিক
বিদ্যুতের প্রাচুর্য এই বিদ্যুৎ নির্ভর শিল্পের বিপুল পরিমাণে প্রসার ঘটিয়েছে।
(গ) উন্নত
যোগাযোগ : দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্রস্থলে অসংখ্য রেল ও সড়ক পথের মিলন স্থলে
ব্যাঙ্গালুর শহরটি অবস্থিত।৪,৭,৪৮, ২০৯, ২১৯ নং
জাতীয় সড়ক, দক্ষিণ-পশ্চিম রেলপথের ব্রডগেজ লাইন এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকায় ভারতের
বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি সারা বিশ্ব জুড়ে ইঞ্জিনিয়ার ও বিনিয়োগকারীর আগমন ঘটে থাকে।
যার কারণেই
ব্যাঙ্গালুরু বৈদ্যুতিন শিল্পে উন্নতি লাভ করেছে।
(ঘ)
সরকারী উদ্যোগ : কর্ণাটক সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন উৎসাহমূলক
পরিকল্পনা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, বিপুল অর্থ বিনিয়োগ, ভারত সরকারের ১৯৯২
সালে উদার শিল্পনীতি ও বেসরকারিকরণ নীতি, ২০০২ সালে শিল্প আইনের প্রভাবে অসংখ্য
দেশি-বিদেশি, বহুজাতিক, ছোটো, মাঝারি, বড়ো কোম্পানি স্থাপিত হয়ে এই সূক্ষ্ম কারিগরি শিল্পের বিপুল
পরিমাণে উন্নতি ঘটিয়ে থাকে।
(ঙ)
অন্যান্য কারণ : উপরিক্ত আর্থ-সামাজিক কারণগুলি ছাড়াও, বহুজাতিক সংস্থা, বিপুল চাহিদা,
বিজ্ঞান, গবেষণা ও দক্ষ কর্মীর সুবিধা প্রভৃতি কারণেও ব্যাঙ্গালুরুতে বৈদ্যুতিন শিল্প
উন্নতি লাভ করেছে।