বৃত্তিমুখী ও কারিগরী শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করো।

By

উত্তর : শিক্ষার অন্যতম লক্ষ হল শিশুকে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা। অর্থাৎ কোনো বৃত্তির জন্য তাকে প্রস্তুত করে দেওয়া ।

বৃত্তিমুখী শিক্ষা হল এমন এক ধরনের শিক্ষা যা ব্যক্তিকে বৃত্তিগত দিক থেকে পারদর্শী করে তোলে ও ওই নির্দিষ্ট বৃত্তিতে একজন সুদক্ষ ব্যক্তি হিসাবে তৈরি করে। এই শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি এমন কতকগুলি ক্ষমতা অর্জন করে যার ফলে তার ভবিষ্যত জীবিকা অর্জন সুনিশ্চিত হয়। বৃত্তিশিক্ষা এমন এক ধরনের শিক্ষা যার ফলে ব্যক্তি সারাজীবন স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে কোনো বিশেষ বৃত্তির উপযোগী করে গড়ে তোলা। কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প ইত্যাদির প্রশিক্ষণ বৃত্তিমূলক শিক্ষার অর্ন্তভুক্ত। এই পর্যায়ে শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি হল ITI বা Industrial training Institute অথবা রাজ্য কারিগরি শিক্ষা পর্ষদের মান্যতা প্রাপ্ত বিভিন্ন বৃত্তিশিক্ষা কেন্দ্র ।

আরও পড়ুন:  সমসুযোগ বলতে কী বোঝো? শিক্ষার সমসুযোগের ধারনাটি ব্যাখ্যা কর।

কারিগরি শিক্ষা হল এমন শিক্ষা যার প্রভাবে ব্যক্তি প্রযুক্তিবাদ কিংবা বৈজ্ঞানিক হিসাবে পরিচিত হয়। এর উদ্দেশ্য হল সাধারণ জ্ঞানের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে কৃষি, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে ব্যক্তিকে সমর্থ করা। অর্থাৎ বিভিন্ন কলকারখানায় সুদক্ষ কর্মী সরবরাহ করা। কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হল টেকনিক্যাল স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ ইত্যাদি। তবে কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন – 

(1) গবেষণা প্রতিষ্ঠান, (2) ডিগ্রি কলেজ যেমন—প্রিন্টিং, – সেরামিক, টেক্সটাইল ইত্যাদি। (3) ডিপ্লোমা কোর্সের প্রতিষ্ঠান যেমন — পলিটেকনিক – কলেজ। (4) জুনিয়র টেকনিক্যাল স্কুল, শিল্প প্রতিষ্ঠান (IT) ইত্যাদি। এই সকল প্রতিষ্ঠান যে সমস্ত ডিগ্রি দেয় তা হল Ph.D BE, B. Tech, M. E, M. Tech, DCE, DME, DEE ইত্যাদি।

বৃত্তিমূলক শিক্ষা হল এমন এক ধরনের শিক্ষা যেখানে ব্যক্তির বৃত্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যক্তি তার নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচন করার সুযোগ পায়। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা হল এমন এক ধরনের শিক্ষা যেখানে এই প্রকারের শিক্ষা অর্জনের পর ব্যক্তি প্রযুক্তিবিদ হিসাবে পরিগণিত হয়। এই ধরনের শিক্ষা পৃথকধর্মী হলেও এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধ বিদ্যমান।

আরও পড়ুন:  জনার্দন রেড্ডি কমিটির সুপারিশ গুলি আলোচনা করো |

বৃত্তিশিক্ষার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে কোনো বৃত্তির উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে প্রযুক্তিবিদ হিসাবে গড়ে তোলা। অপরপক্ষে বৃত্তিশিক্ষা যেখানে ব্যক্তিকে কর্মক্ষেত্রে সুদক্ষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে, কারিগরি শিক্ষা সেখানে ব্যক্তিকে তার মৌলিক চাহিদা ও ক্ষমতা অনুযায়ী গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। আপাত দৃষ্টিতে এই দুই ধরনের শিক্ষার মধ্যে বিভেদ করা সম্ভব হলেও, প্রকৃতপক্ষে এদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা ও সম্বন্ধ রয়েছে। যেগুলি হল –

  1. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে যে হারে উন্নতি হচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে উন্নত ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। 
  2. ব্যক্তির মধ্যে যদি বৃত্তিমুখী প্রবণতা জাগ্রত না হয়, তাহলে কারিগরি শিক্ষা সেখানে সফল হতে পারে না। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষাকে বৃত্তিশিক্ষার উপর নির্ভর করতে হয়। 
  3. বৃত্তিগত দিকে পারদর্শী হতে হলে কারিগরি দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। 
  4. পেশাগত সামর্থ ও দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একদিকে যেমন দক্ষ ব্যক্তির প্রয়োজন, অন্যদিকে তেমনি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরও দরকার। তাই একই ব্যক্তিকে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞে পরিণত করতে হলে, তাকে বৃত্তি ও কারিগরি উভয় প্রকার শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন:  প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলের বৈশিষ্ট্যগুলি লিখো। এই শিখন তত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য লেখো।

ব্যক্তিজীবনে স্বনির্ভরতা ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনার ক্ষেত্রে এই দুই ধরনের শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দেশের অগ্রগতির স্বার্থে এই দুই শিক্ষাকে পৃথক করে দেখা উচিত নয়।

Leave a Comment