বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করো।

By

ভূমিকা : শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল শিশুকে এমন কতকগুলি দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা, যাতে সে তার ভবিষ্যৎ জীবনের রুজিরোজগার সঠিকভাবে করতে পারে। বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত জীবিকা অর্জনে স্বনির্ভর করে তুলতে সাহায্য করে। বৃত্তিমুখী শিক্ষা হল এমন এক ধরনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা যা গ্রহণ না করলে শিক্ষার্থীকে সারাজীবন দুঃখ ভোগ করতে হয়।

বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হল- 

(১) স্বনির্ভরতা অর্জন : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বনির্ভর হয়ে ওঠে। সে সমাজের বোঝা হয়ে না থেকে সমাজের একজন মানবসম্পদ হয়ে ওঠে। 

(২) কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শিক্ষ। শিক্ষার্থীর কাছে অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন:  ‘ব্রেইল' পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

(৩) শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা : শিক্ষার্থী তার নিজের চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষালাভ করতে পারে, ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন মানসিক তৃপ্তি পায় তেমনি শান্তি বজায় থাকে। 

(৪) আর্থিক স্বচ্ছলতা দান : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা দান। করে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে এই শিক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

(৫) শ্রমের প্রতি উৎসাহ দান : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রমের প্রতি মর্যাদা ও উৎসাহ দানে সাহায্য করে। ফলে তারা সমাজের যে-কোনো কাজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। 

(৬) ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিশিক্ষা দান : ব্যতিক্রমী শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণধর্মী শিক্ষাগ্রহণে অনেক সমস্যা দেখা যায়। তাই তাদের বৃত্তিশিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়োজন। বৃত্তিশিক্ষার মাধ্যমে তারা হাতেনাতে কিছু উৎপাদনমূলক কাজ করতে পারে এবং সমাজে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন:  প্রেষণার সংজ্ঞা দাও। সংক্ষেপে প্রেষণা চক্র বর্ণনা কর।

(৭) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ঘটায়। যার ফলে এই শিক্ষাগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা কোনো-না-কোনো শিল্প কারখানায় যোগদান করতে পারে। বেকারত্ব থেকে মুক্তি ঘটে।

(৮) মূল্যবোধের বিকাশ : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর ও উপার্জনশীল করে গড়ে তোলে, এর ফলে তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে।

(৯) কল্যাণকর কাজে প্রেরণা : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীকে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বনির্ভর করে। তোলে ফলে তাদের মধ্যে সমাজ কল্যাণকর কাজের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। 

(১০) সব ধরনের শিশুদের উপযোগী শিক্ষা : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা সকল বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুরা সহজে গ্রহণ করতে পারে। তারা প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার চেয়ে এই ধরনের শিক্ষা গ্রহণে অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা হাতেনাতে শিক্ষাগ্রহণ করে জীবিকা অর্জনে সক্ষম হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন:  কারিগরি শিক্ষা কাকে বলে? বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করো।

(১১) জাতীয় উন্নয়নে সাহায্য : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ কারিগর তৈরি করা সম্ভব হয়। এর ফলে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা জাতীয় আয়কে বাড়িয়ে তোলে। এই আয় বৃদ্ধিই জাতীয় উন্নয়নে সাহায্য করে।

বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা হল ব্যক্তিনির্ভর নির্বাচনধর্মী বৈচিত্র্যপূর্ণ, ব্যবহারিক, স্বনির্ভর শিক্ষা যা শিক্ষার্থীকে সকল দিক থেকে পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে থাকে।

Leave a Comment