বিশ্ব জনসংখ্যা বণ্টনে পরিব্রাজনের প্রভাব : প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অন্তদেশীয় ও বৈদেশিক স্বল্প স্থায়ী বা চিরস্থায়ী
পরিব্রাজনের প্রভাবে বিশ্বের জনসংখ্যা বন্টনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পরিব্রাজনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের
জনবণ্টনের ওপর বিভিন্ন প্রভাব পড়ে থাকে। আর এই প্রভাবগুলি সম্পর্কে নিন্মে আলোচনা করা হল।
(ক)
এশিয়া ও আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন : বিশ্ব ইতিহাসে বৃহত্তম পরিব্রাজন ঘটে 1947 সালে ভারত
বিভাজনের সময়।
আর এর প্রভাবে
অর্থনীতি ও সমাজের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ফল লক্ষ্য করা যায়। এই সময় হিন্দু ও শিখরা পাকিস্তান ও বাংলাদেশ
থেকে ভারতে এবং ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা বাংলাদেশ ও পাকিস্থানে গমন করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভারতের উচ্চ
কারিগরী দক্ষতা সম্পন্ন পড়ুয়া, চিকিৎসক ভারত থেকে আমেরিকা, ইউরোপ, ওশিয়ানিয়ার বিভিন্ন
দেশে পরিব্রাজন করে।
এই সমস্থ
মহাদেশগুলিতে অত্যাধিক সুযোগ সুবিধার কারণে এই পরিব্রাজন সংঘটিত হয়েছিল। যা প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিবেশের
ওপর ব্যপক প্রভাব ফেলে।
(খ)
ইউরোপ ও আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন : ইউরোপ থেকে জনসংখ্যার পরিব্রাজন প্রধানত দুটি দিক
থেকে সংঘটিত হয়।
প্রথমত,
জনবিরল ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলগুলিতে যেখানে ধান, গম, চা, কফি, আখ প্রভৃতি কৃষিকাজের
জন্য প্রচুর শ্রমিককে প্রয়োজন হয়। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের জনবিরল দেশগুলিতে
ঔপনিবেশিক কাজের জন্য গমন করে।
(গ)
উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন : উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র যেখানে
বিভিন্ন মহাদেশের মানুষেরা পরিব্রাজন করে থাকে। কারণ এই দেশে উন্নত পরিষেবা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও গবেষণার কাজে বিশ্বের বিভিন্ন
দেশ থেকে এই দেশের মধ্যে পরিব্রাজন করে থাকে। মেক্সিকো, কানাডা থেকে শ্রমিক রূপে এই
দেশে আগমন লক্ষ্য করা যায়। যা বিশ্বের জনবণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
(ঘ)
আফ্রিকা ও আন্তর্জাতিক পরিব্রাজন : সোমালিয়া ও ইথিওপিয়া গৃহযুদ্ধের সময় প্রায় 16 লক্ষ্য
উদ্বাস্তু সোমালিয়াতে গমন করে। ইথিওপিয়া গৃহযুদ্ধের সময় প্রায় 5 লক্ষ্য উদ্বাস্তু সুদানে গমন
করে। আফ্রিকার পরিব্রাজনের অন্যতম
কারণ হল গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। এছাড়াও বহু ঔপনিবেশিকেরা আফ্রিকায় প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের
জন্য এই মহাদেশে গমন করে।
বাণিজ্যিক ভাবে শস্য চাষ ও পশুপালন শুরু হলে বহু ইউরোপীয় বাণিজ্যিকরা বা বণিকরা বাণিজ্যের
উদ্দেশ্যে অষ্ট্রেলিয়ায় পরিব্রাজন করে। এছাড়াও যেসমস্থ অঞ্চলে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে সেইসমস্থ অঞ্চলে গমনের মাত্র
অধিক লক্ষ্য করা যায়।