প্রশ্ন : বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর : ব্যতিক্রমী চিত্রপরিচলক মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) ফরিদপুরের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুরে থাকাকালীন তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সেখানেই সম্পূর্ণ করেন। তিনি তার বিভিন্ন কীর্তি এর কারণেই বাংলা সিনেমার জগতে খ্যাতি অর্জন করার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক খ্যাতিও অর্জন করেছেন। তার বিভিন্ন কীর্তির দ্বারা তিনি বাংলা সিনেমার ধারা পাল্টে দিয়েছেন।
অবদান : ফরিদপুর থেকেই তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহন করার পর কলকাতা স্কটিশচার্য কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু অচিরেই তিনি সিনেমার দিকে আকৃষ্ট হন। তার প্রথম ছবি ‘রাত ভোর’ ১৯৫৫ সালে প্রকাশ পায়। কিন্তু ছবিটি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর তার দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নিচে’ প্রকাশ পেলে তাকে এক স্থানীয় খ্যাতি অর্জন করিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে তার তৃতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’ মুক্তি পেলে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়। তার কলকাতা ট্রিলোজি অর্থাৎ ‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’, ‘পদাতিক’ এই তিনটি ছবি দ্বারা তিনি তৎকালীন সময়ের কলকাতার অস্থিরতা তুলে ধরেছেন। এছাড়াও, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘খারিজ’ এই দুটি সিনেমা দ্বারা তিনি মধ্যবিত্ত মানুষের নীতিবদ্ধ তুলে ধরেছেন।
চলচ্চিত্র সমূহ : তার দ্বারা পরিচালিত বা নির্মিত ডকুমেন্টারী ফিল্ম, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ও পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবির সংখ্যা প্রায় ৫০ ছাড়িয়েছে। তার দ্বারা পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ভুবন সোম’, ‘অবশেষে’, ‘একদিন অচানক’, ‘পরশুরাম’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘অন্তরীণ’, ‘আকাশ কুসুম’, ‘আকালের সন্ধান’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মৃণাল সেনের শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’ মুক্তি পায় ২০২ সালে।
প্রাপ্ত পুরস্কার : মৃণাল সেন তার বিভিন্ন কীর্তির কারণে বিভিন্ন পুরস্কার দ্বারা সন্মানিত হয়েছেন। যথা –
- ১৯৮১ সালে তিনি ভারত সরকার দ্বারা পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন।
- ২০০৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান।
- ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন।
- ভারত এবং ভারতের বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।