বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান আলোচনা করো।

By

Procesta%20%2815%29

প্রশ্ন : বাংলা গানের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান আলোচনা করো। 

উত্তর : বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠুকরের পর কাজী নজরুল ইসলাম এর অবদান অনস্বীকার্য। কাজী নজরুল ইসলাম তার সীমিত জীবনের মধ্যে বহু গান রচনা করেছেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর গানের সংখ্যা প্রায় ৩০০০ এর বেশি। তিনি তার কর্ম জীবনে বিভিন্ন বৈচিত্র্য সমূহ গান রচনা করেছেন। আর এই বিভিন্ন বৈচিত্রের গানকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হল –

১) প্রেম ও  প্রকৃতি মূলক গান : কাজী নজরুল ইসলাম এর বেশিরভাগ গানের মধ্যেই প্রেম ও প্রকৃতির মিশ্রণ বা প্রধান্য লক্ষ্য করা যায়। তার প্রেম ও প্রকৃতি মূলক গান গুলির মধ্যে ‘মোর প্রিয় হবে এসো রাণী’, ‘আমি চিরতরে চলে যাবো’ প্রভৃতি গান উল্লেখযোগ্য। 

২) ঋতু সংগীত : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর বহু গানেই ঋতু এর প্রসঙ্গ লক্ষ্য করা যায়। তার ঋতু সংগীত গুলির মধ্যে ‘নিদাঘের  খরতাপে’, ‘বর্ষা ঋতু এল বিজয়ীর সাজে’, ‘পউষ এল গো’ প্রভৃতি গান উল্লেখযোগ্য। 

আরও পড়ুন:  রূপমূল কাকে বলে ? উদাহরণসহ 'স্বাধীন' ও ‘পরাধীন' রূপমূলের পরিচয় দাও।

৩) রাগাশ্রয়ী  গান : বিভিন্ন রাগ-রাগিণীর প্রয়োগ করে কাজী নজরুল ইসলাম বহু সংখ্যক গান রচনা করেছেন। কাজীনজরুল দ্বারা রচিত গান গুলির মধ্যে রামকেলী, ঠুংরি, ভৈরবী প্রভৃতি রাগ-রাগিণীর প্রয়োগ রয়েছে। তার রগাশ্রয়ী গান গুলির মধ্যে – ‘ভোরের হাওয়া এলে’,’অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’ প্রভৃতি গান উল্লেখযোগ্য। 

৪) গজল : কাজী নজরুল ইসলাম এর বাংলা ভাষায় রচিত গজল গুলি মধ্য প্রাচ্যের গজল অনুসারে আরবি ও ফরাসি শব্দের ব্যাবহার করায় গজলগুলি রসসিদ্ধি লাভ করেছে। তার গজল গুলির মধ্যে ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’, ‘গুলবাগিচায় বুলবুলি আমি’ প্রভৃতি গান উল্লেখযোগ্য। 

৫) স্বদেশ সংগীত : কাজী নজরুল ইসলাম দ্বারা রচিত গানগুলির মধ্যে বহু গানেই কবির স্বদেশ প্রেম প্রকাশ পেয়েছে। সেইসব গান গুলির মধ্যে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ প্রভৃতি গান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার দ্বারা রচিত স্বদেশ সংগীত গুলি তার কবিতার মতই ইংরেজদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ছিল। 

আরও পড়ুন:  "দরদের চেয়ে ছোঁয়াচে কিছুই নেই এ জগতে”- কোন্ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে? এমন বলার কারণ কী ?

৬) ইসলামী সংগীত : ইসলামী সংগীত রচনার ক্ষেত্রে বিদ্রোহী কবির অবদান অনস্বীকার্য। পরমেশ্বর আল্লাহকে কেন্দ্র করে কবির লেখা অন্যতম গান হল ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ প্রভৃতি গান উল্লেখযোগ্য। 

৭) অন্যান্য ভক্তিগীতি : কবি তার বিভিন্ন গানের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির আন্তরিকতা প্রকাশ করেছেন। তার অন্যান্য ভক্তিগীতি গান গুলির মধ্যে ‘বলরে জবা বল’, ‘জয় বাণী বিদ্যাদায়িনী’, ‘রঘুকুলপতি রামচন্দ্র’ প্রভৃতি গান উল্লেখযোগ্য। 

৮) অন্যান্য গান সমূহ : উপরিক্ত গান গুলি ছাড়াও আরও বহু গান রচিত করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। যেমন – লোকসংগীত ( ‘পদ্মার ঢেউ রে’, ‘তেপান্তরের মাঠে’, ‘ঐ রাঙামাটির পথে লো’ প্রভৃতি ), হাস্যরসাত্মক ও প্যারোডি গান ( ‘আমার হরিনামে রুচি করণ পরিণামে লুচি’, ‘তোমারেই জেলে পালছি ঠেলে’ প্রভৃতি ), হিন্দি গান ( ‘আগর তুম রাধা হতে শ্যাম’, ‘পরদেশি আয়া হু দরিয়াকে পার’, ‘সুন্দর হো তুম মনমোহন হো’ ) প্রভৃতি গান উল্লেখযোগ্য। তার গান গুলি ছাড়াও তিনি মণিমালা, মন্দকিনী, প্রিয়া ইত্যাদি বেশ কিছু তালও সৃষ্টি করেছেন। 

আরও পড়ুন:  রূপতত্ত্ব অনুযায়ী সমাস কয় প্রকার ও কী কী? সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

উপসংহার : সর্বশেষে বলা যায় যে, বাংলা গানের জগতে কবি নজুরুল ইসলাম এর অবদান অনস্বীকার্য। বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম তার কর্ম জীবনে প্রায় ৩২৪৯ টি গান লিখেছেন। তবে তিনি প্রায়শ তাৎক্ষণিকভাবে লিখতেন; একারণে অনুমান করা হয় প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে। তৎকালীন সময়ের মানুষের মন জয়ী গান গুলি হল  ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’, ‘চল চল চল’, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ’ ইত্যাদি। তার সমস্থ গান গুলিকে একত্রে নজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত বলা হয়। 

Leave a Comment