বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান আলোচনা করো।

By

Procesta%20%2815%29

প্রশ্ন : বাংলা গানের ধারায় গীতিকার ও সুরকার অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলােচনা করাে।

উত্তর : বাংলা ভাষা সাহিত্যে ও সঙ্গীতের এক অতি পরিচিত নাম হল অতুল প্রসাদ সেন। অতুলপ্রসাদ সেন  ছিলেন একাধারে গীতকর, সঙ্গীতকর, কবি ও গায়ক। বাঙালিদের কাছে অতুলপ্রসাদ সেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার হিসাবেই পরিচিত ছিল। তার সমস্থ গানগুলি সাধারনত তিনটি ধারা দ্বারা বিভক্ত ছিল। যথা – স্বদেশী সঙ্গীত, ভক্তিগীতি ও প্রেম মূলক গান। তবে তার সমস্থ গান গুলির মধ্যে তার ব্যক্তিজীবনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আর যার কারণেই তার বেশিরভাগ গান করুণাময় হয়ে উঠেছে। 

গান সমূহ : তার লেখা গান গুলি ‘কাকলি’, ‘কয়েকটি গান’, ও ‘গীতপুঞ্জ’ এই তিনটি বইয়ের মধ্যে সংকলিত হয়েছে। অতুলপ্রসাদ সেনের গান গুলীকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা –

আরও পড়ুন:  রূপমূল কাকে বলে ? উদাহরণসহ 'স্বাধীন' ও ‘পরাধীন' রূপমূলের পরিচয় দাও।

রাগাশ্রয়ী গান : বাণী, কাব্য, ছন্দ ও সুরের চলন – গানের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সামঞ্জস্য ও সংগতি রেখে রাগ-রাগিণীর মিশ্রণ ঘটিয়ে অতুলপ্রসাদ সেন যেসব রাগাশ্রয়ী গান সৃষ্টি করেছে সেইসব গান বাঙালিদের কাছে উপহার স্বরূপ। অতুলপ্রসাদ  সেন এর রাগাশ্রয়ী গান গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘ডাকে কোয়েল বারেবারে’, ‘কে আবার বজায় বাঁশি’, ‘সে ডাকে আমারে’ উল্লেখযোগ্য। 

গজল, টপ্পা, ঠুংরি : তিনিই সর্বপ্রথম বাংলায় গজল রচনা করেন। তার দ্বারা রচিত গজল গুলির মধ্যে ‘কে গো তুমি বিহরিণী’, ‘জল বলে চল’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বাংলা গানের ধারায় ঠুংরি এর প্রবর্তক হলেন অতুলপ্রসাদ সেন। তিনি ঠুংরি আর প্রয়োগ করে বহু গান রচনা করেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘কে আবার বজায় বাঁশি’, ‘ওগো আমার নবীন সাথী’। তিনি টপ্পা এর প্রয়োগ করেও বহু গান রচনা করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘তবু তোমারে ডাকি বারেবারে’, ‘কাঙাল বলিয়া করিও না হেলা’ প্রভৃতি। 

আরও পড়ুন:  বাংলা গানের ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। তার সমসাময়িক দুজন বিশিষ্ট গীতকারের নাম লিখো।

স্বদেশী সংগীত : অতুলপ্রসাদ সেন দ্বারা রচিত বহু স্বদেশী সংগীত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তার মধ্যে ‘উঠগো ভারতলক্ষ্মী’, ‘বলো বলো বলো সবে’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। 

অন্যান্য শ্রেণীর সংগীত : উরিক্ত সংগীত গুলি ছাড়াও আরও বহু পর্যায়ের গান তিনি রচনা করেছেন। যেমন – তার দ্বারা রচিত ঋতু সঙ্গীতের মধ্যে ‘বন দেখে মোর মনের পাখি ডাকল গো’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি বাউল, ভাটিয়ালি প্রভৃতির মতো বহু দেশজ সুরে অনেক চমৎকার গান রচনা করেছেন। যেমন – ‘ওগো সাথী মম সাথী’ প্রভৃতি। 

উপসংহার : সর্বশেষে বলা যায় যে, বাংলা গানের ধারায় অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছিলেন তৎকালীন রবীন্দ্র সময়ের গীতরসিক বা গীতকার। অতুলপ্রসাদ গানের সংখ্যা প্রায় ২০০ এর বেশি। তার সমস্থ গান গুলির মধ্য থেকে মাত্র ৫০-৬০ টি গান গীত হিসাবে প্রধান্য পায়। তিনি সাধারণত সামান্য কিছু গান রচনা করেই বাংলা গানের জগতে এক নবদিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছেন। তার দ্বারা রচিত গানগুলি অতুলপ্রসাদ গান নামেও পরিচিত। 

আরও পড়ুন:  "দরদের চেয়ে ছোঁয়াচে কিছুই নেই এ জগতে”- কোন্ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে? এমন বলার কারণ কী ?

Leave a Comment