‘বনগতা গুহা’ গদ্যাংশটির সারসংক্ষেপ : ‘বনগত গুহা” নামক পাঠ্যাংশটি গোবিন্দকৃষ্ণ মোদক রচিত ‘চোরচত্বারিংশী কথা’ নামক অনুবাদ গ্রন্থের অংশবিশেষ। এর মূলগল্প হল ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’। গল্পটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণিত হল, – কশ্যপ ও অলিপবা দুই ভাই পারসিকদের নগরে বাস করত। তাদের দরিদ্র পিতা নিজের মৃত্যু সন্নিকট ভেবে নিজের সম্পত্তি দুই জনকেই সমান ভাগে ভাগ করে দিল। অতঃপর কশ্যপ কোন এক মহাধনশালী ব্যক্তির কন্যাকে বিবাহ করে নগরের শ্রেষ্ঠ বণিকদের মতো ধনশালী হল এবং বিলাসপূর্ণ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠল। অন্যদিকে অলিপবা নিজে যেমন দরিদ্র-নিঃস্ব ছিল, তেমনি তার শ্বশুরও দরিদ্র ছিল। তাই সে পর্ণকুটিরে অতিকষ্টের সঙ্গে স্ত্রীসন্তানদের নিয়ে জীবন যাপন করত। বন্য কাঠ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থই ছিল মূলধন।
এভাবে দিন যাপন করতে করতে প্রতিদিনের ন্যায় একদিন ভোরে অলিপবা বনে গেছে কাঠ সংগ্রহ করতে। হঠাৎ একদল অশ্বারোহী বাহিনীর দিকে তার দৃষ্টি পড়ল, যারা দ্রুততার সঙ্গে ধূলো উড়িয়ে আসছে। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অলিপবা শাখা-প্রশাখা ও ঘনপাতা যুক্ত এক বিশাল গাছে উঠে পড়ল। অলিপবা বুঝল অশ্বারোহী বাহিনী আসলে চোরের দল।
অলিপবা এতক্ষণ যে গাছের উপরে ছিল সেখান থেকে কিছুদূরে এক উঁচু চূড়াবিশিষ্ট পর্বতের কাছে এসে তারা থামল। একজন করে গুণে অলিপবা দেখল তারা সংখ্যায় চল্লিশজন। তাদের দলপতি পর্বতের সম্মুখভাগে একটা পদ্য পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে পদ্যস্থিত গুহার একটা দ্বার খুলে গেল। তারপর সবাই গুহার ভিতর প্রবেশ করলে আপনা আপনিই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। তারা কিছুক্ষণ গুহায় থাকার পর সবাই বাইরে এল এবং পুনরায় দলপতি গুহাদ্বারে গিয়ে একটি পদ্য আবৃত্তি করে দরজা বন্ধ করে দিল।
অলিপর্ব এতক্ষণ গাছ থেকে সবকিছু দেখল ও পদ্যদুটি শুনে কন্ঠস্থ করল। এরপর অলিপবা গাছ থেকে নেমে গুহার দ্বারসমীপে গেল এবং প্রসারণ পদ্য উচ্চারণ করে গুহার ভিতর প্রবেশ করল। সেখানে স্তূপীকৃত ভক্ষ্যদ্রব্য, দামি চিনে বস্ত্র, সোনা রূপা ইত্যাদি মৃগচর্মের থলেতে বোঝাই করে দ্বারের কাছে এসে পদ্যোচ্চারণ করে দরজা খুলল এবং সেগুলি তিনটি গাধার পিঠে চাপিয়ে কাঠ দিয়ে আচ্ছাদিত করল। তারপর সে সংবৃতি মন্ত্রদ্বারা দরজা বন্ধ করে দ্রুততার সঙ্গে নগরের দিকে চলে গেল।