উত্তর : প্রেষণা : ‘প্রেষণা’-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Motivation’, যা লাতিন শব্দ ‘Moveers’ থেকে এসেছে। ‘Moveers’ কথাটির অর্থ ‘Move’ অর্থাৎ ‘চলন প্রক্রিয়া’। অর্থাৎ মনের অভ্যন্তর থেকে যে শক্তি আমাদের চালনা করে তাই হল প্রেষণা।
বিভিন্ন মনোবিদরা প্রেষণার যেসব সংজ্ঞা দিয়েছে সেগুলি হল :
মনোবিদ স্কিনার এর মতে, প্রেষণা হল এমন একধরনের শিখন, যা বিভিন্ন বাধা থাকার সত্বেও কাম্য আচরণ গুলি জাগ্রত করতে, সেগুলোকে ধরে রাখতে এবং মাঝে মাঝে সেগুলোকে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
মনোবিদ গুড এর মতে, প্রেষণা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা কর্মে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে, দীর্ঘস্থায়ী ও নিয়ন্ত্রণ করে।
মনোবিদ সুইফট এর মতে, প্রেষণা হল ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য যে পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া যা তার আচরণধারাকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও বিভিন্ন মনোবিদ প্রেষণার সংজ্ঞা হিসাবে বিভিন্ন মতামত বা সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
প্রেষণা চক্র বা প্রক্রিয়া :
প্রেষণা চক্রকে বা প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করলে চারটি পর্যায় পাওয়া যায়। যথা – (১) অভাববোধ বা চাহিদা, (২) তাড়না, (৩) সহায়ক আচরণ, (৪) উদ্দেশ্যপূরণ বা লক্ষ্যপূরণ। এই চারটি পর্যায় কোন ব্যাক্তি বা শিশুর জীবনে ক্রমাগত আবর্তিত হয়ে বা চক্রাকারে করাকে প্রেষণা চক্র বা প্রক্রিয়া বলে।
চিত্র : প্রেষণাচক্র |
প্রেষণাচক্রের এই চারটি ধাপ বা পর্যায় সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
(১) অভাববোধ বা চাহিদা : প্রেষণা চক্রের প্রথম ধাপ বা স্তর হল অভাববোধ আথবা চাহিদা। বিভিন্ন কারণে সাধারনত কোন ব্যাক্তি বা শিশুর মধ্যে অভাববোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন – ব্যক্তির মধ্যে খাদ্যবস্তুর চাহিদা সৃষ্টি হয়ে থাকলে প্রেষণা প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
(২) তাড়না : প্রেষণা চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হল তাড়না। চাহিদা বা অভাববোধ এর ফলে কোন ব্যাক্তি বা শিশুর মধ্যে একটি অসহ্য অবস্থার সৃষ্টি হয়। আর এইরূপ অবস্থা ব্যক্তিকে সেই চাহিদা পূরণ করার জন্য তাড়িত করে। এর ফলে ব্যাক্তি ব্যাক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন – কোন ব্যক্তিকে যদি এক দিনের জন্য না খাইয়ে রাখা হয় তবে সেই ব্যাক্তি খাদ্যের জন্য তাড়িত হবে এবং কিভাবে সে তার খিদা মিটাবে তার উপায় খুজবে বা খাদ্যবস্তু পেতে চেষ্টা করবে।
(৩) সহায়ক আচরণ : প্রেষণা চক্রের তৃতীয় স্তর বা ধাপ হল সহায়ক আচরণ। কোন ব্যক্তির চাহিদার বস্তু না পাওয়ার অস্বস্থি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সেই ব্যাক্তি কিছু আচরণ করে থাকে। অর্থাৎ, কোন উদ্দেশ্য বস্তু পাওয়ার জন্য ব্যাক্তি যেসব আচরণ করে থাকে, সেইসব আচরণকে সহায়ক আচরণ বলে। যেমন – কোন ক্ষুদার্ত ব্যক্তির খাবার খুজে বের করার চেষ্টা হল সহায়ক আচরণ।
(৪) লক্ষ্যপূরণ : প্রেষণা চক্রের সর্বশেষ স্তর হল লক্ষ্যপূরণ বা উদ্দেশ্যপূরণ। ব্যক্তির যে বস্তুর চাহিদা বা অভাববোধ সেই বস্তুটি যদি ব্যক্তিটি পেয়ে যায় তবে তার লক্ষ্যপূরণ হয়, তবে সে পরিতৃপ্তি পায়।
উপসংহার : সর্বশেষে বলা যায় যে, একটি প্রেষণা প্রক্রিয়া এর সমাপ্তির পরেই আর একটি নতুন প্রেষণা প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রেষণা চক্র জন্মের পর থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগের সময় পর্যন্ত চলে। ব্যক্তির চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সাধারনত প্রেষণা চক্রের সৃষ্টি হয়ে থাকে।