প্রাচীন ভারতের গণিতচর্চা সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করো।

By

কাব্য, ব্যাকরণ, দর্শনশাস্ত্রের মতো গণিতশাস্ত্রেও ভারতীয় মনীষীদের অবদান চিরস্মরণীয়। ভারতবর্ষে গণিতচর্চার বীজ উপ্ত হয়েছে বৈদিক সাহিত্যে। বৈদিক ঋষিরা যাগযজ্ঞ করতে গিয়ে জ্যামিতি তথা গণিতের সূক্ষ্ম তত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং জ্যোতির্বিদ্যাকে উন্নত করতে গিয়ে গণিত-চর্চা শুরু করেন। সংখ্যা গণনার উল্লেখ রয়েছে ঋগ্বেদে ও যজুর্বেদে।

(১)পাটিগণিত: ‘পাটি শব্দের দুটি অর্থের মধ্যে একটি হল যোগ, বিয়োগ প্রভৃতি প্রকরণের ক্রমপ্রকাশ, আর একটি অর্থ হল ‘ফলক’। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদগণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা সমস্যা ফলকের ওপর ধূলো ছড়িয়ে তার ওপর অঙ্কনের মাধ্যমে সমাধান করতেন। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ধূলিকম” ।আর্যভটের সময় থেকে পাটিগণিত রচিত হয়। পাটিগণিতে রয়েছে কুড়িটি পরিকর্ম ও আটটি ব্যাহার। কুড়িটি পরিকর্মের মধ্যে রয়েছে গুণন, ভাগ, বর্গমূল, বর্গ, ঘন, ঘনমূল,  ত্রৈরাশিক, পঙ্গুরাশি, সপ্তরাশি, নবরাশি প্রভৃতি। আটটি ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে মিশ্রক, রাশি, ক্ষেত্র, ছায়া প্রভৃতি।

আরও পড়ুন:  তোমার পাঠ্য নাট্যাংশের মাধ্যমে নাট্যকার কি বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে তোমার মনে হয়? | উচ্চ মাধ্যমিক সংস্কৃত

প্রাচীন ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে বর্গ, ঘন, বর্গমূল প্রভৃতির আলোচনা দেখা যায়। বর্তমানে যাকে ‘যোগ’ এবং ‘বিয়োগ’ বলা হয় প্রাচীনকালে ‘যোগ’- এর পরিবর্তে সংকলন, মিশ্রন, সম্মেলন, সংযোজন এবং ‘বিয়োগ’-এর পরিবর্তে বোধন, পাতন, আন্তর প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার রয়েছে।

(২) বীজগণিত : বীজগণিতে আলোচিত হয়েছে দ্বিঘাত সমীকরণ, প্রগতি, করনী, অমূলদ সংখ্যা-এর মান নির্ণয় প্রভৃতি। প্রথম আর্যভট্টের গ্রন্থ আর্যভট্টীয় ও গীতিকপাদে প্রগতি, সমান্ত শ্রেনির যোগফল নিয়ে সূত্র আছে ও দ্বিতীয় ভাস্করাচার্যের সিদ্ধান্ত শিরোমণি গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডের নাম বীজগণিত, এই খন্ডে আলোচিত বিষয়গুলি হল-ঘনবিবরণ, বর্ণবিবরণ, শূন্যবিবরণ, করনীবিবরণ প্রভৃতি। বাখশালি পুঁথিতে পাওয়া গ্রন্থেও বীজগণিতের বিবরণ আছে।

আরও পড়ুন:  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে নিষ্কাম কর্মযোগের কথা বলেছেন তার বিবরণ দাও।

(৩) জ্যামিতিঃ ছয় বেদাঙ্গের অন্যতম বেদাঙ্গ শল্বসূত্র প্রাচীন ভারতীয়গণের জ্যামিতিচর্চার এক প্রকৃষ্ট নিদর্শন। অনেক শুল্কসূত্র পাওয়া যায়— বৌধায়নের শুল্কসূত্র, মানব শুল্বসূত্র প্রভৃতি। শুল্কসূত্রে ক্ষেত্রফল বিষয়ক সূত্রমালা, বর্গক্ষেত্রকে আয়তক্ষেত্রে এবং ত্রিভুজকে বর্গক্ষেত্রে পরিণত করার পদ্ধতি, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ সম্পর্কিত উপপাদ্যে প্রভৃতি আলোচিত হয়েছে। বৌধায়নের শুল্কসূত্রে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের ধারণাটি বিবৃত আছে। প্রথম আর্যভট্টের আর্যভটীয় বা আর্যভট্টীয় গ্রন্থে সমতলীয় ক্ষেত্র, পিরামিড, গোলকের ক্ষেত্রফল সংক্রান্ত সূত্র আছে।

গণিত বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির প্রণেতা হলেন ব্রহ্মগুপ্ত ও ভাস্করাচার্য এছাড়া আর্যভট্টের আর্যাষ্টশতক, বরাহমিহিরের পঞ্চসিদ্ধান্তিকা, মহাবীর আচার্যের গণিত সারসংগ্রহ প্রভৃতি গ্রন্থ প্রাচীন ভারতের গৌরবময় গণিতচর্চার পরিচয় বহন করে।

আরও পড়ুন:  স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ- তাৎপর্য বর্ণনা করো।

Leave a Comment