নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
ভূমিকা: টেনিদাকে চেনেন না এমন বাঙালির সংখ্যা খুব কম। তার সাহিত্যকীর্তি এর জন্য তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি একজন নাট্যকার,সাহিত্যকার,প্রবন্ধীক। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন রোমান্টিক লেখক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
জন্ম ও শিক্ষা: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত বালিয়াডাঙ্গিতে ১৯১৮ সালের ৮ ফ্রেব্রুয়ারি। পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন পুলিশ অফিসার। বাবার বদলির চাকরি হওয়ার কারণে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের পড়াশোনা দিনাজপুর, ফরিদপুর, বরিশাল এবং কলকাতায় সম্পন্ন হয়। তাঁর আসল নাম ছিল তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে তাঁর রচনাকর্মে আসল নামের পরিবর্তে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাম ব্যবহার করেন।
➯ স্কুলের পড়াশোনা নারায়ণ শুরু করেন ১৯৩৩ সালে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে। তারপর তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন ১৯৩৬ সালে। ওই একই কলেজ থেকে তিনি কলা বিভাগে স্নাতক হন (১৯৩৮ সালে)। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (বাংলা) পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ১৯৪১ সালে ব্রহ্মময়ী স্বর্ণপদক এবং ‘সাহিত্যে ছোটোগল্প’ বিষয়ে গবেষণার জন্য ১৯৬০ সালে ডিফিল উপাধি লাভ করেন।
কর্মজীবন: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুবিধ কৃতিত্বের অন্যতম হল শিক্ষকতা। তিনি বেশ কয়েকটি কলেজে অধ্যাপনার কাজ করেন যার মধ্যে রয়েছে আনন্দচন্দ্র কলেজ, জলপাইগুড়ি (১৯৪২-৪৫), সিটি কলেজ, কলকাতা (১৯৪৫-৫৫)। পরে ১৯৫৬ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন।
সাহিত্যকীর্তি: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা লেখার শুরু তাঁর ছাত্রাবস্থাতেই। রুমে রুমে ছোটোগল্প, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি রচনায় তিনি খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেন। তাঁর রচিত প্রথম গল্পটির নাম “বিচিত্রা”। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এমন একজন লেখক ছিলেন যে তাঁর সাহিত্যকর্মে দেশপ্রেম ও রোমান্স-এর মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মহাকাব্যিক উপন্যাস ‘উপনিবেশ’ সুন্দরবনের প্রসঙ্গ নিয়ে রচিত, যখন ‘সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী’, ‘মহানন্দা’ ও ‘লালমাটি এক উপজাতির ক্ষয়িষ্ণু ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অন্বেষণমূলক উপন্যাস। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে পড়ে ‘শিলালিপি’, ‘পদসার’, ‘বৈতালিক’ প্রভৃতি এবং অতি অবশ্যই তাঁর কিশোর রচনাসম্ভার, যার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে টেনিদার কান্ডকারখানার অনাবিল হাসি আর রস সমৃদ্ধ গল্প, উপন্যাস ‘চারমূর্তি’, ‘পটলডাঙার টেনিদা’ প্রভৃতি। তাঁর রচিত ছোটোগল্পগুলিও বাংলা সাহিত্যের এক বিশেষ অমূল্য সম্পদ, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখনীয় হল, ‘লক্ষ্মীর পা’, ‘ইতিহাস’, ‘হাড়’, ‘বিতংস’, ‘বনজ্যোৎস্না’ ‘তাস’, ‘হরিণের রং’ ইত্যাদি। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি প্রধানত দুটি জার্নাল লেখায় মনোনিবেশ করেন, যাদের একটির নাম- সুনন্দর জার্নাল’।
মৃত্যু: মাত্র ৫২ বছর বয়সে ৬ নভেম্বর, ১৯৭০ সালে কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন, বাংলার এই কীর্তিমান সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।
উপসংহার: একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও শিক্ষক হিসাবে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় চিরদিনের জন্য পাঠক ও তার ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার পাণ্ডিত্য,অভিজ্ঞতা ও জীবনবোধ ছিল তীক্ষ্ণ ও সজীব তাই তার লেখা যেমন ক্ষুরধার তেমনি সহজ ও সাবলীল।