তোমাদের সাথে আজকে আমি পরিবেশ বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ এই বিষয় নিয়ে একটি প্রবন্ধ তোমাদের কাছে উপস্থাপন করেছি। এরকম পরিবেশ বিষয়ক প্রবন্ধ দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় এসে থেকে তাই অল্প হলেও বিষয়টিকে জেনে রেখো।
একটি গাছ একটি প্রাণ
ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদা বলেছিলেন, “মানুষের শক্তি যদি প্রকৃতির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। কারণ প্রকৃতির সহজ নিয়ম অতিক্রম করলে তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিনাশ অনিবার্য।” এই ভবিষ্যদ্বাণী আজ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটি কোণ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানব সভ্যতা নিজের স্বার্থে প্রকৃতিকে নির্বিচারে শোষণ করে চলেছে। এর ফলে আমরা প্রাকৃতিক দূষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। এই সংকট থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো বৃক্ষরোপণ। কারণ “একটি গাছ একটি প্রাণ” — এই সত্যকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।
জীবমণ্ডলে উদ্ভিদের গুরুত্ব: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, অশ্মমণ্ডল, এবং জলমণ্ডলকে কেন্দ্র করে যে জীবমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে, তা উদ্ভিদের দ্বারা প্রাণীকুলের জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যক। প্রাচীন কালে, পৃথিবীতে অক্সিজেন ছিল না। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের ভাগ বাড়তে শুরু করে, যা অন্যান্য জীবের জন্ম ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করেছিল। আজকের পৃথিবীতে মানুষ, পশু, এবং পাখি, সবই উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ শুধু অক্সিজেন সরবরাহ করে না, তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং খাদ্যের মূল উৎস হিসেবে কাজ করে।
গাছ ও অরণ্য রক্ষার গুরুত্ব: উদ্ভিদ আমাদের জীবনধারণের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। গাছপালা আমাদের জন্য খাদ্য, অক্সিজেন, ওষুধ এবং জ্বালানির উৎস। তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, এবং ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং আবহাওয়ার সমতা রক্ষা করে। বনভূমির উপস্থিতি মাটি থেকে জল শোষণ এবং তার পুনঃপ্রবাহে সহায়তা করে, যা বৃষ্টির জল জমা করে এবং বন্যা প্রতিরোধ করে। বনভূমির গাছপালা জলচক্র, কার্বন চক্র, এবং অক্সিজেন চক্রকে সক্রিয় রাখে, যা মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য।
অরণ্য ধ্বংসের স্বরূপ ও কারণ: অরণ্য ধ্বংসের পেছনে রয়েছে মানুষের অপরিকল্পিত কার্যকলাপ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অধিক জমি ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে, যা বনভূমির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। কাঠের চাহিদা বাড়তে থাকায়, বনভূমি ক্রমশ ধ্বংস হচ্ছে। “গ্রীন হাউস এফেক্ট” এর ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উদ্ভিদজগৎকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। হিমালয় অঞ্চলে গ্লেসিয়ার গলে যাওয়া এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এসবের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং মানবজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
বন ও গাছ রক্ষায় আমাদের করণীয়: এই সংকটের সমাধানে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রথমত, বনভূমি রক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, পতিত জমিতে বনসৃজন কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। তৃতীয়ত, জ্বালানি হিসাবে কাঠের বিকল্প ব্যবহার প্রচলিত করা উচিত। চতুর্থত, সমাজভিত্তিক বনসৃজন প্রকল্পে মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পঞ্চমত, বিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। বনভূমির সংরক্ষণ ও পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের অবহিত করতে হবে। এছাড়া, শহরের মানুষদেরও সচেতন করা উচিত, যারা নগরায়নের জন্য বনভূমি ধ্বংস করছে।
উপসংহার: সচেতনতা এবং সমন্বিত পদক্ষেপই পারে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে। আমাদের সকলের উচিত শপথ নেওয়া— “একটি গাছ একটি প্রাণ” এই বিশ্বাস নিয়ে প্রতিটি মানুষকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করা। বৃক্ষের সুরক্ষা ও বৃদ্ধি আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খাদ্য, বৃষ্টি, এবং প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য গাছই আমাদের একমাত্র ভরসা। গাছ বাঁচলে, বাঁচবে প্রাণ, বাঁচবে পৃথিবী।