প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলের বৈশিষ্ট্য :
থর্নডাইকের শিখন তত্ত্বে যেসকল নীতি বা বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই তা নিম্নে আলোচনা করা হল-
(১) সক্রিয়তা : প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল আত্মসক্রিয়তা। এই আত্মসক্রিয়তার মাধ্যমে প্রাণী নিজের সমস্যা সমাধান করে থাকে।
(২) পুনরাবৃত্তি : প্রাণী পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে অর্থাৎ, পর্যায়ক্রমে সমস্যার সমাধান করে। এই শিখন কৌশলটি হল পুনরাবৃত্তিমূলক।
(৩) উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতা : উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতা প্রাণীকে আত্মসংশোধনের মাধ্যমে শিখনে অনুপ্রাণিত করে।
(৪) বহুমুখী প্রতিক্রিয়া : প্রচেষ্টা ও ভুলের কৌশলে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রাণীকে সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া করতে হয়। এই বৈশিষ্ট্য থর্নডাইক তাঁর বহুমুখী সূত্রে উল্লেখ করেছেন।
(৫) ফললাভ : এই শিখন কৌশল প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়ার স্থিরীকরণ এবং অপ্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া বর্জন, উভয় ধরনের আচরণই প্রাণীর মধ্যে ফল প্রাপ্তির দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
(৬) সাদৃশ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া : যে-কোনো নতুন সমস্যামূলক শিখন পরিস্থিতিতে প্রাণীর প্রথম প্রতিক্রিয়া বা আচরণটি তার পূর্বে সম্পাদিত আচরণের পুনরাবৃত্তি মাত্র।
(৭) আংশিক প্রতিক্রিয়া : এই শিখন কৌশলে আচরণ ধারা পরিবর্তনে প্রকৃতি আরেকটি বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন। তা আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্রের মাধ্যমে।
(৮) জৈব মানসিক প্রভৃতি : এই শিখন কৌশলে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হল জৈব মানসিক প্রস্তুতি। কোনো সমস্যার সঠিক সমাধান করতে হলে শিক্ষার্থীর জৈব মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন।
প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের শিক্ষাগত গুরুত্ব বা তাৎপর্য :
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শিক্ষাক্ষেত্রে থর্নডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য নিন্মে আলোচনা করা হল –
(১) প্রস্তুতি : এই তত্ত্ব অনুযায়ী শিক্ষার্থীর কোনো বিষয় শেখার জন্য যেমন দৈহিক প্রস্তুতির প্রয়োজন তেমনি মানসিক প্রস্তুতিও একান্তভাবে থাকা দরকার। অর্থাৎ, দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া শিক্ষার্থীর কোনো বিষয়ে জ্ঞানলাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
(২) অনুবন্ধের নীতি অনুসরণ : শিক্ষার্থীর পাঠের বিষয়টি উদ্ধৃত জ্ঞানের ভিত্তিতে বিন্যাস করতে হবে। যাতে শিখন প্রক্রিয়া সাবলীল গতিতে এগিয়ে যেতে পারে।
(৩) প্রেষণার সৃষ্টি : শিক্ষার্থীকে নতুন বিষয় শিখন এই তত্ত্ব প্রেষণা সৃষ্টিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
(৪) অনুশীলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ : থর্নডাইক তাঁর শিখন তত্ত্বে কোনো বিষয় শিখনের জন্য অনুশীলনের ওপর বিশেষ করে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শিক্ষার্থীরা যাতে বারবার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তার ত্রুটিগুলি ধীরে ধীরে দূর করে সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে।
(৫) ফলপ্রাপ্তি : শিখনে ফলের ওপর নির্ভর করে শিক্ষা ক্ষমতা, ফলপ্রাপ্তি যদি খারাপ হয় তবে শিক্ষাগ্রহণে শিক্ষার্থীর আগ্রহ কমে যায়। আবার ফলপ্রাপ্তি যদি আনন্দদায়ক ও সুখকর হয়, তবে সেই শিখনে শিক্ষার্থী অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
(৬) সমস্যার সমাধান : থর্নডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্ব শিক্ষার্থীকে শিখন সহায়ক সমস্যার সমাধানে যেমন সাহায্য করে তেমনি তার নানান সমস্যার সমাধানে তাকে সক্রিয় করে তোলে।
(৭) সহজ থেকে কঠিন বিষয় নির্বাচন : শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক পরিণমন অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে হবে, যাতে তারা সহজে বিষয়বস্তু আয়ত্ত করতে পারে। অর্থাৎ, সহজ থেকে কঠিন বিষয়বস্তু নির্বাচনের নীতি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের সামনে তা উপস্থাপন করতে হবে।
(৮) দৈনন্দিন শিখনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিক্ষা : শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর ফলে শিক্ষার্থীর শিখনের যেমন আগ্রহ বাড়ে তেমনি শিখনের ফল অনেক বেশি ভালো ও স্থায়ী হয়।
উপসংহার : সর্বশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি যে, শিশু প্রচেষ্টা ও ভুলের কৌশল প্রয়োগ করে তার জীবন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষালাভ করতে পারে এবং নতুন নতুন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে ক্ষমতা আয়ত্ত করে। প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন এমন একটি শিখন কৌশল যা শিক্ষার্থীকে ভুল সংশোধন, সঠিক প্রতিক্রিয়া করতে সাহায্য করে, যা শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন জীবনে তার প্রয়োগ ঘটিয়ে নানান ধরনের সমস্যার সমাধান করে। তাই আজকের শিক্ষাব্যবস্থায় এই তত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।