পরিণমন কাকে বলে? পরিণমনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

By

পরিণমন শিক্ষার অন্যতম প্রধান উপাদান, যা একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুদের শিখনের জন্য প্রস্তুত করে। এটি সেই প্রক্রিয়া, যার ফলে শিশুর আচরণে গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন আসে এবং সে শিক্ষার বিভিন্ন ধাপ সহজে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়।

পরিণমনের সংজ্ঞা:

পরিণমন এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ বিকাশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। এটি কোনো বাহ্যিক প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরিণমন ঘটে এবং এর ফলে তার আচরণে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসে, যা শিক্ষার জন্য অপরিহার্য।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে পরিণমনের সংজ্ঞা:

  • স্কিনার এর মতে, “পরিণমন হল এক ধরনের বিকাশ, যা পরিবেশগত বিভিন্নতার পরেও একটি নিয়মিত প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়।”
  • কোলেসনিক এর মতে, “কোনো ব্যক্তি বা শিশুর আচরণে যে পরিবর্তন আসে এবং জন্মগত সম্ভাবনাগুলির বাস্তবায়িত হওয়ার প্রক্রিয়া, সেটাই পরিণমন।”
  • ম্যাকগিয়ক এর মতে, “শিশুর ক্রমাগত জৈবিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই যে আচরণগত পরিবর্তন ঘটে, তা পরিণমন।”
আরও পড়ুন:  জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) এর মূল সুপারিশগুলি আলোচনা করো।

পরিণমনের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

১. বিকাশধর্মী প্রক্রিয়া:

পরিণমন একটি ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া। এটি শিশুর নির্দিষ্ট আচরণকে উন্নত করে তোলে। যেমন, শিশুর ক্রমাগত কথা বলা তার পরিণমনের ফল। এটি কোন দক্ষতা নয়, বরং একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আচরণ বিকশিত হয়।

২. স্বাভাবিক প্রক্রিয়া:

পরিণমন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে। এটি কোন শর্তের উপর নির্ভরশীল নয় এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই সংঘটিত হয়। তাই পরিণমনকে বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সংঘটিত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়।

৩. জৈবিক বিকাশের প্রক্রিয়া:

পরিণমন মূলত একটি জৈবিক প্রক্রিয়া, যা শিশুর শারীরবৃত্তীয় বিকাশের উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়। যেমন, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিণমন ঘটে, যা তাকে নতুন শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করে।

আরও পড়ুন:  শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি লেখো | শিখন ও পরিণমনের পার্থক্য

৪. প্রশিক্ষণ নির্ভর নয়:

পরিণমনের জন্য কোনও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। এটি কোনও বাহ্যিক অবস্থা, ইচ্ছা বা চাহিদার উপর নির্ভর করে না। শিশুর পরিণমন তার নিজস্ব বিকাশ প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে ঘটে।

৫. অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া:

পরিণমন সম্পূর্ণভাবে অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, যা বাহ্যিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। শিশুর নিজস্ব জৈবিক বিকাশের ফলেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

৬. চাহিদা নির্ভর নয়:

পরিণমন কোনো ব্যক্তির বা সমাজের চাহিদার উপর নির্ভর করে না। এটি স্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হয় এবং পরিণমনের ফলে শিশুর নতুন চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে।

৭. দৈহিক ক্ষমতা বৃদ্ধি:

পরিণমন শিশুদের শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। শিশুর শরীরের ক্রমবর্ধমান সঞ্চালন ক্ষমতা পরিণমনের ফলস্বরূপ বৃদ্ধি পায়, যা তাকে শিখনে সক্ষম করে তোলে।

আরও পড়ুন:  বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করো।

৮. সর্বজনীন প্রক্রিয়া:

পরিণমন একটি সর্বজনীন প্রক্রিয়া, যা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এটি বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি বা পরিবেশের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয় না। প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে পরিণমন একই নিয়মে সংঘটিত হয়।

৯. নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ:

পরিণমন একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে সংঘটিত হয়। শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে তার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং একসময় তা শেষ হয়। এটি জীবনচক্রের একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

উপসংহার:

সর্বশেষে বলা যায়, পরিণমন হল শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা তাকে শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এটি শিশুর জীবন বিকাশের অপরিহার্য উপাদান, যা বাহ্যিক কোন প্রভাব ছাড়াই সংঘটিত হয়। পরিণমনের বিভিন্ন স্তরের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীরা সহজে এবং কার্যকরভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

Leave a Comment