নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি বর্ণনা করো

By

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন হলে বা কোন প্রাকৃতিক কারণের ফলে ভূপৃষ্ঠ হঠাৎ উত্থিত হলে, নদীর ক্ষয় কাজের শক্তি বেড়ে ওঠে, যার ফলে নদী পুনরায় ক্ষয় কাজ করতে থাকে। এইভাবে নদীর বার্ধক্য পর্যায় থেকে আবার নতুন ভাবে ক্ষয় কাজ করাকে নদীর পুনর্যৌবন লাভ বলে। নদীর পুনর্যৌবন ঘটার ফলে মাঝে মাঝে পুরনো উপত্যকার মধ্যে নতুন ভূমিরূপ গড়ে উঠতে দেখা যায়।

পুনর্যৌবন লাভের ফলে গঠিত ভূমিরূপ (Landforms due to Rejuve nation):

ক্ষয়চক্রের কোনো এক পর্বে ভূভাগের পুনর্যৌবন লাভ ঘটলে আগের ভূমিরূপের ওপর নতুন করে ক্ষয়চক্র শুরু হয়ে নানান বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। পূর্বের পর্যায়িত ও সুষম ভূমিঢাল পুনর্যৌবন লাভের ফলে অপর্যায়িত হলে নদীর গতিপথ বরাবর অনেক ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। আবার পুরানো, ও প্রশস্ত নদী উপত্যকা পুনর্যৌবন লাভের ফলে অগভীর সুগভীর ও সংকীর্ণ হলে নদীর প্রশ্ন বরাবর নানা ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। নিন্মে এই সমস্থ ভূমিরুপ নিয়ে আলোচনা করা হল।

নিকবিন্দু (Knick Point):

পুনর্যৌবন লাভের কারণে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর গতিপথের যে বিন্দুতে উচ্চ উপত্যকার পুরানো মৃদু চালের সলো নিম্ন উপত্যকার নতুন খাড়া ঢালের সংযোগ ঘটে নদীবক্ষ উঁচু হয়ে থাকে, তাকে নিবিন্দু বলে।

আরও পড়ুন:  প্রস্রবণ এর শ্রেণীবিভাগ করে চিত্র সহ আলোচনা করো।

উৎপত্তি: প্রবল ভূ-আলোড়নে নদীর গতিপথের উচ্চপ্রবাহ পথের উত্থান বা নিম্নপ্রবাহ পথের অবনমন ঘটলে নদী বক্ষটি উঁচু হয়ে নিক্ বিন্দু সৃষ্টি হয়। ক্ষয়ের শেষসীমা নতুন সমুদ্রতল অনুসারে নতুন শক্তিশালী নদী দ্রুত মোহানা থেকে মস্তকের দিকে নিম্নক্ষয় করে নতুন মসৃণ ঢাল সৃষ্টি করতে থাকে। ফলে নিকবিন্দু ও জলপ্রপাত ক্রমশ উৎসের দিকে পশ্চাদপসরণ করে। একসময় পুরানো উপত্যকার উপর নতুন উপত্যকা অধ্যারোপিত হয় এবং নিকবিন্দুটি নিশ্চিহ্ন হয় অবশেষে সমগ্র উপত্যকাটি পর্যায়িত হয়।

ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley):

মহিভাবক আলোড়নে পুনরুত্থিত ভূভাগে নদীর গতিপথে আড়াআড়ি চ্যুতির ফলে নদী উপত্যকার মস্তকের অংশটি নিম্ন উপত্যকার ওপর ঝুলে থাকে। মন্ত্রকের উপত্যকাটিকে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।

জলপ্রপাত (Waterfall):

নিকবিন্দু ও ঝুলন্ত উপত্যকার ওপর দিয়ে নদীর জল প্রবল বেগে নীচে পতিত হয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যেমন – কঞ্চি নদীতে দশম, সুবর্ণরেখা নদীতে হুড্রু, বারু ও গুঙ্গা নদীর মিলন স্থলে জোনা জলপ্রপাত।

উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা (Valley in Valley):

প্রথম ক্ষয়চক্রের পুরানো, প্রশস্ত, মৃদুঢালু উপত্যকার মধ্যে পুনর্যৌবনপ্রাপ্ত শক্তিশালী নদী তীব্র নিম্নক্ষয় করে নতুন, সংকীর্ণ, সুগভীর ও খাড়া ঢালু ইংরেজি অক্ষর ‘V’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে এবং উভয় উপত্যকার সংযোগস্থলে ঢালের বিচ্যুতি ঘটে নদী ধাপ বা স্কন্দভূমি (Shoulder Land) গঠিত হয় যা দুটি পৃথক ক্ষয়চক্রকে নির্দেশ করে। ফলে সমগ্র উপত্যকার ওপরের দিকে পরিণত বা বার্ধক্য পর্যায় এবং তলদেশের দিকে যৌবন পর্যায়কে নির্দেশ করে। এইরূপ সমগ্র উপত্যকাটিকে ভূপ্রাকৃতিক অসংগতি (Topographic Unconformity) বা দ্বিতল উপত্যকা (Two Storeyed Valley) বা উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বা দ্বিচক্র উপত্যকা বলে।

আরও পড়ুন:  আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গম বলয় স্থানান্তরের কারণ আলোচনা করো।

নদী মঞ্চ (River Terrace):

বার্ধক্য পর্যায়ের চওড়া উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পুনর্যৌবন প্রাপ্ত নদী লম্বভাবে কেটে বসে গিয়ে পুরানো পরিত্যক্ত প্রশস্ত প্লাবনভূমির দুপাশে বিভিন্ন আয়তনযুক্ত সিঁড়ির মতো এক বা একাধিক ধাপ পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি হয়। একে নদী মঞ্চ বলে।

বৈশিষ্ট্য: ১. নদীর দুপাশে এটি সিঁড়ি বা ধাপের মতো দেখতে হয়। ২. নীচের মঞ্চটি ওপরের মধ্যের তুলনায় অপেক্ষাকৃত নবীনতর হয়। ৩. নদী মঞ্চে পলল আবৃত থাকলে পলল নদী মন্ত। (Alluvial Terrace) এবং ভিত্তি শিলা উন্মুক্ত থাকলে প্রস্তরময় নদীমন্ত্র (Bod Rock Terrace) বলা হয়।

কর্তিত নদী বাঁক (Incised Meander):

প্রথম ক্ষয়চক্রের পরিণত বা বার্ধক্য পর্যায়ে বড়ো বড়ো নদী বাঁকে প্রবাহিত নদী পুনর্যৌবন লাভ করলে দ্রুত নিম্নক্ষনা করে লম্বভাবে কেটে বসে যায় এবং দুপাশে খাড়া দেওয়াল বেষ্টিত যে নতুন গভীর ও সংর্কীর্ণ বাঁক সৃষ্টি হয়, তাকে কর্তিত নদী বাঁক বলে। যেমন – ছোটোনাগপুর মালভূমির দামোদর ও কারো নদীতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন:  অন্তক্ষেত্রীয় ও বহিঃক্ষেত্রীয় সংরক্ষণ এর মধ্যে পার্থক্য লিখো।

সমোচ্চ শীর্ষ সমন্বিত ভূমি (Accordant Summit Level):

যে উত্থিত সমপ্রায়ভূমি পুনর্যৌবন লাভ ও নদীর নিম্নক্ষয়ের জন্য একাধিক সমান উচ্চতা যুক্ত সমতল শীর্ষবিশিষ্ট উচ্চভূমিতে পরিণত হয়, তাকে সমোচ্চ শীর্ষ সমন্বিত ভূমি বলে।

উৎপত্তি: পূর্বতন ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্বের সমপ্রায়ভূমি ভূ-উত্থানকালে সমভাবে উঁচু হয়ে উত্থিত সমপ্রায়ভূমি গঠিত হয়। নতুন ক্ষয়চক্রে এর ওপর পুনর্যৌবনপ্রাপ্ত নদীর নিম্নক্ষয়ের ফলে সমপ্রায়ভূমিটি ব্যবচ্ছিন্ন হয় এবং ব্যবচ্ছিন্ন অংশগুলি একই উচ্চতায় সদৃশ শীর্ষদেশরূপে অবস্থান করে। উদাহরণ: রাঁচি মালভূমির পাট অঞ্চল।

উত্থিত সৈকত ও সমুদ্র মঞ্চ (Raised Beach & Marine Terrace):

পুনর্যৌবন লাভের ফলে উপকূল উত্থিত হয়ে বা সমুদ্রতলের অবনমনে পূবর্তন সৈকত বর্তমান সমুদ্র তলের ওপর মঞ্চ বা ধাপের মতো অবস্থান করে। এর উচ্চতা ৪৫ মিটারের কম হলে উত্থিত সৈকত এবং এর বেশি হলে সমুদ্র মঞ্চ বলে। উদা: যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ও ভারতের মালাবার উপকূলে দেখা যায়।

Leave a Comment