থর্নডাইকের শিখনের মূল সূত্রগুলি কী কী? শিক্ষাক্ষেত্রে যে কোনো দুটি মূল সূত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো।

By

প্রশ্ন : থর্নডাইকের শিখনের মূল সূত্রগুলি কী কী? শিক্ষাক্ষেত্রে যে কোনো দুটি মূল সূত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো। 
অনুরূপ প্রশ্ন : থর্নডাইকের শিখনের সূত্রগুলি লেখো। শিক্ষাক্ষেত্রে যেকোনো একটি সূত্রের গুরুত্ব লেখো।

ভূমিকা : আমেরিকান মনোবিদ থর্নডাইক ১৮৯৯ সালে ‘Animal Intelligence’ নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলের ধারণাটি প্রকাশ করেন। তার মতে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আচরণধারা নিয়ন্ত্রণ করাই হল শিক্ষা, আর তার এই তত্বটিকে প্রচেষ্টা ও ভুলের কৌশল তত্ব বলা হয়। সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রাণী কী ধরনের প্রতিক্রিয়া করবে এবং কীভাবে শিখন লাভ করবে সে সংক্রান্ত তিনটি মুখ্যসূত্র ও পাঁচটি গৌন সূত্রের কথা বলেছেন তিনি। যথা –

মুখ্য সুত্র : থর্নডাইকের দেওয়া শিখনের মুখ্য বা মূল সুত্র গুলি হল – (ক) অনুশীলনের সুত্র, (খ) ফললাভের সুত্র, (গ) প্রস্তুতির সুত্র। 

গৌণ সুত্র : থর্নডাইকের দেওয়া শিখনের গৌণ সুত্র গুলি হল – (ক) মানসিক প্রস্তুতির সুত্র, (খ) বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সুত্র, (গ) আংশিক প্রতিক্রিয়ার সুত্র, (ঘ) উপমানের সুত্র, (ঙ) অনুষঙ্গমূলক সুত্র। 

আরও পড়ুন:  জনার্দন রেড্ডি কমিটির সুপারিশ গুলি আলোচনা করো |
Screenshot%202023 05 14%20121853
থর্নডাইকের শিখন সূত্রের শ্রেণীবিভাগ
প্রশ্ন অনুযায়ী দুটি মুখ্য সূত্রের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্ব নিন্মরূপ আলোচনা করা হল –

অনুশীলন সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য :

(1) শ্রেণীকক্ষের অনুশীলন : শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেনিকক্ষে শিক্ষনীয় বিষয় শিক্ষার্থীদের বারবার অনুশীলন করার উপর জোর দিবেন, যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে বার বার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে বুঝে উঠতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষককে লক্ষ রাখতে হবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই অনুশীলন যাতে মুখস্ত নির্ভর বা যান্ত্রিক হয়ে না পড়ে।

(2) বারবার চর্চা : পূর্বে শেখা বিষয়বস্তু দীর্ঘদিন চর্চা না করলে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তা ভুলে যায়। তাই  শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে পূর্বের শেখা বিষয়বস্তু মাঝে মাঝে অনুশীলনের জন্য শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ফেলবেন বা উত্সাহিত করবেন। 

(3) শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়ার প্রাধান্য : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের যাতে প্রতিক্রিয়া করতে পারে তার জন্য তাদের বেশি করে সুযোগ প্রদান করত হবে। প্রথম প্রথম তারা ভুল প্রতিক্রিয়া করতে পারে। কিন্তু ক্রমাগত ভুল প্রতিক্রিয়া করতে করতে একসময় তারা সঠিক প্রতিক্রিয়াও করতে শিখে যাবে।
(4) একাধিকবার উপস্থাপনা : শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা নতুন ও জটিল বিষয়গুলি একাধিকবার উপস্থাপন করবে শিক্ষার্থীদের সামনে। এরফলে তার খুব সহজে সেই নতুন ও জটিল বিষয়গুলি আয়ত্ত করতে পারবে। 

(5) জানা থেকে অজানা বিষয়ে শিক্ষাদান : শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় জানা থেকে অজানা বিষয়ের দিকে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করবেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই নীতি অনুসরণ করে শিক্ষাদান করলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণের প্রতি বেশি করে আগ্রহী হয়ে উঠবে। 

(6) ভুল পরিত্যাগ : শিক্ষার্থীরা যাতে পাঠের অপ্রয়োজনীয় বা ভুল অংশগুলি প্রথমেই বাদ দেয় সেদিকে শিক্ষক সচেতন থাকবেন।

প্রস্তুতি সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য :

(1) শিক্ষার্থী যদি শিক্ষাগ্রহণের প্রতি দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকে, তবে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক দ্বারা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য সফলতা পাবে না।
(2) শিক্ষার্থী যদি প্রস্তুত না থাকে তবে শিক্ষাগ্রহণে অমনোযোগী হয়ে পড়বে শিক্ষার্থী।
(3) শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন উপায় অবলম্বন করে ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষাগ্রহনের প্রতি প্রস্তুত করে তুলবেন।
(4) প্রয়োজনে শিক্ষক নীতি, আদর্শ মূল্যবোধ দ্বারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে তুলবেন কারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গ্রহণের প্রতি প্রস্তুতি ছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা কোন ভাবেই তার বিকাশের জন্য কাজে লাগবে না। 

উপসংহার : সর্বশেষে বলা যায় যে, থর্নডাইকের শিখনের মূল সূত্রগুলির শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্ব অপরিসীম। তার এই তত্বটি সমালোচনার উর্দ্ধে ছিল। তার এই তত্বটির মধ্যে পরিণমনকে গুরুত্ব কম দিয়েছে। সমস্যা ও সমাধান মূলক শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলটিই বেশি ব্যবহার করে থাকে প্রাণীর। 

Leave a Comment