জাপানের অগ্ন্যুৎপাত প্রকল্প | উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল প্রকল্প – ‘জাপানের অগ্নুৎপাতের ঘটনা’ (Volcanic Activity in Japan)

By

আজকে আমি তোমাদের সাথে উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল বিষয় এর একটি প্রজেক্ট কর্ম শেয়ার করব। ‘জাপানের অগ্নুৎপাতের ঘটনা’ টপিকটির ওপর একটি প্রকল্প তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম। এই টপিকটি থেকে যেসমস্থ ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় থেকে প্রজেক্ট করতে দিয়েছে সেইসমস্থ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই এখান থেকে তথ্যগুলি সংগ্রহ করে তাদের প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে পারবে। 
image_title_here

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল প্রকল্প – ‘জাপানের অগ্নুৎপাতের ঘটনা’ (Volcanic Activity in Japan) :

ভূমিকা : জাপান
পৃথিবীর অন্যতম আগ্নেয়গিরি-সমৃদ্ধ অগ্ন্যুৎপাতপ্রবণ দেশ। প্রশান্ত মহাসাগরীয়
পাত ক্রমাগত পশ্চিমদিকে ইউরোপীয়
পাতের বিপরীতে সংঘর্ষ করে। ফলস্বরূপ এখানে অভিসারী পাতসীমান্ত বা ধ্বংসাত্মক
পাতসীমান্তের সৃষ্টি হয়েছে। জাপান ও সন্নিহিত অঞ্চলের এই বিশেষ ভূগঠন এই অঞ্চলে
আগ্নেয় মেখলারও সৃষ্টি করেছে। বস্তুত প্রশান্ত মহাসাগরকে একটি আগ্নেয় মেখলা ঘিরে
রেখেছে – যাকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলা হয়ে থাকে।

তথ্য সংগ্রহ ও প্রাপ্ত তথ্য : জাপানের হোক্কাইডো, হনসু, কিউসু,
ইজু, নানসাই প্রভৃতি দ্বীপে বহু সক্রিয়, সবিরাম এবং মৃত আগ্নেয়গিরি অবস্থান
রয়েছে। দেশে মোট বড়ো আগ্নেয়গিরির সংখ্যা
118টি। এর মধ্যে হোক্কাইডো
দ্বীপে রয়েছে
20 টি, হনসু দ্বীপে 47 টি, কিউসু দ্বীপে 9 টি, ইজু দ্বীপে 17 টি, রিয়ুকু দ্বীপে 10টি। এছাড়া 15 টি আগ্নেয় দ্বীপ আছে, যার প্রত্যেকটি এক-একটি
আগ্নেয়গিরিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট তালিকায় জাপানের বিভিন্ন
আগ্নেয়গিরি থেকে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাতের তথ্য দেওয়া হল। এই তালিকা থেকে
আগ্নেয়গিরিগুলির সুপ্ত বা জাগ্রত অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারা যায়। 

আরও পড়ুন :  উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল প্রকল্প – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প ও ধস

❑ জাপানের যেসমস্থ আগ্নেয়গিরি থেকে 1880 সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত শেষ
অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে :

আগ্নেয়গিরির

নাম

উচ্চতা
(মিটার)

দ্বীপীয় অবস্থান

সর্বশেষ
অগ্নুৎপাত

(খ্রিস্টাব্দ)

মাউন্ট রউসু1,660হোক্কাইড1880
ইওয়াকি1,625হনসু1863
মাউন্ট বানদাই1,819হনসু1888
নিপেসৎসু-মারুয়ামা2,013হোক্কাইডো1899
মাউন্ট ইয়ো1,563হোক্কাইডো1936
শোয়া শিনজান731হোক্কাইডো1945
মাউন্ট নাসু1,917হনসু1963
বেয়নেস রকস11ইজু1970
মাউন্ট ওনটাকি879হনসু1980
ওসিমা758ইজু1990
কুচিনোয়েরাবু-জিমা649নানসেই1999
তোরি-সিমা403ইজু2002
মাউন্ট আসো1,592কিউসু2004
সুয়ানোসিজিমা799নানসেই2007
মাউন্ট মিকান1,499হোক্কাইডো2008
নিসিনোসিমা38আগ্নেয় দ্বীপ2014
আরও পড়ুন:  সবুজ বিপ্লবে গৃহীত পদক্ষেপগুলি লিখো।

❑ জাপানের যেসমস্থ আগ্নেয়গিরি থেকে 1500-1800 সালের পড়ে অগ্নুৎপাত ঘটেনি :

আগ্নেয়গিরির

নাম

উচ্চতা
(মিটার)

দ্বীপীয় অবস্থান

সর্বশেষ
অগ্নুৎপাত

(খ্রিস্টাব্দ)

মাউন্ট আসাহি

2,290

হোক্কাইডো

1739

ওসিমা

737

হোক্কাইডো

1790

মাউন্ট ফুজি

3,776

হনসু

1707

মাউন্ট হাকু

2,702

হনসু

1659

হিউচি

2,346

হনসু

1544

মাউন্ট ওসোরি

873

হনসু

1787

আওগাসিমা

423

ইজু

1785

হাচিজো-জিমা

854

ইজু

1707

❑ জাপানের যেসমস্থ আগ্নেয়গিরি থেকে খ্রীষ্টপূর্ব কালে শেষ অগ্নুৎপাত ঘটেছে :

আগ্নেয়গিরির

নাম

উচ্চতা
(মিটার)

দ্বীপীয় অবস্থান

সর্বশেষ
অগ্নুৎপাত

(খ্রিস্টাব্দ)

নিসেকো

1,154

হোক্কাইডো

4050 খ্রী. পূ.

মাউন্ট রিসিরি

1721

হোক্কাইডো

5830 খ্রী. পূ.

মাউন্ট শিরিটোকো

1,254

হোক্কাইডো

2000 খ্রী. পূ.

মাউন্ট ইয়োতেই

1898

হোক্কাইডো

1050 খ্রী. পূ.

হিজোরি

516

হনসু

8300-9300 খ্রী. পূ.

মিগাটা

291

হনসু

2050 খ্রী. পূ.

তাকাহারা

1795

হনসু

4570 খ্রী. পূ.

মিকুরা-জিমা

851

ইজু

3450 খ্রী. পূ.

তো-সিমা

508

ইজু

4050 খ্রী. পূ.

ফুকু-জিমা

317

ইজু

550 খ্রী. পূ.

তথ্য বিশ্লেষণ :

অগ্ন্যুৎপাতের কারণ :
ভূবিজ্ঞানীরা অগ্ন্যুৎপাতের একাধিক কারণ আছে বলে মনে করেন।
যেমন –

(i) ভূত্বকে দুর্বল স্থানের
অস্তিত্ব :
ভূত্বক যে সমস্ত শিলা দিয়ে তৈরি তার সব জায়গা সমান পুরু নয়। তেমনি
তাদের চাপ ও টান সহ্য করার ক্ষমতাও আলাদা। ফলে ভূত্বকের বিভিন্ন জায়গা অপেক্ষাকৃত
দুর্বল। বিশেষত শিলায় ফাটল
,
চ্যুতি, ছিদ্রপথ থাকলে ভূপৃষ্ঠ দুর্বল হয়।
ভূত্বকের এই দুর্বল জায়গাগুলি বহির্মুখী ম্যাগমার চাপ সহ্য করতে পারে না।
ফলস্বরূপ সেই জয়গুলিতে অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন:  সমুদ্রতরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো।

(ii) ভূগর্ভে চাপ ও তাপের
পরিবর্তন :
ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূগর্ভে যত প্রবেশ করা যায়
, চাপ ও তাপ তত বাড়ে। যেমন—100 কিলোমিটার গভীরতায় তাপমাত্রা প্রায়
1000° সেলসিয়াস, 1000 কিলোমিটার গভীরে প্রায় 2000° সেলসিয়াস ইত্যাদি। ভূগর্ভে প্রচণ্ড
চাপের জন্য শিলার গলনাঙ্ক বেশি
,
যেমন—
ভূপৃষ্ঠে ব্যাসল্ট শিলার গলনাঙ্ক হল
1150°
সেলসিয়াস
কিন্তু
100 কিলোমিটার গভীরতায়
ব্যাসল্টের গলনাঙ্ক হল
1400°
সেলসিয়াস।
ভূ-আলোড়নের কারণে ভূগর্ভে চাপ ও তাপের বৈষম্য হলেই গলিত শিলা বা ম্যাগমা ভূপৃষ্টে
বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। অবস্থা অনুকূল প্রকৃতির হলে ম্যাগমা ভূপৃষ্টে নির্গত হয়
এবং অগ্নুৎপাত ঘটে থাকে।

(iii) পাত সঞ্চালন বা প্লেট
সঞ্চালন :
ভূত্বক যে-সমস্ত কঠিন শিলা চাদর দিয়ে তৈরি তাদের পাত বা প্লেট (
plate) বলে। পাতগুলি স্থির নয়। ফলে পাতের
চলন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের পাত সীমান্ত বা প্লেট সীমান্ত সৃষ্টি হয় এবং
অগ্ন্যুৎপাতের কারণ হয়
, যেমন— (a) প্রতিসারী প্লেট সীমান্তে
অগ্ন্যুৎপাত ঃ প্রতিসারী প্লেট সীমান্তে অ্যাসথেনোস্ফিয়ার থেকে ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে
নির্গত হয়। এখানে শান্ত ধরনের বিদার অগ্ন্যুৎপাত (
fissure eruption) হয় ও ব্যাসল্ট শিলার জন্ম হয় (চিত্র 4.16)

(b) অভিসারী প্লেট সীমান্তে
অগ্ন্যুৎপাত
:

অভিসারী প্লেট সীমান্তগুলি হল ধ্বংসাত্মক সীমান্ত। এখানে দুটি প্লেট-এর মুখোমুখি
সংঘর্ষ হয়ে থাকে। এর ফলে ম্যাগমা উৎপন্ন হয় ও অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে। যেমন—
প্রশান্ত মহাসাগরের চারদিকে অভিসারী প্লেট সীমান্ত থাকার প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে
অনেকগুলি আগ্নেয়গিরির অবস্থান আছে। তাই একে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা (
Fiery Ring of the Pacific) বলে। জাপানে
অগ্ন্যুৎপাতের প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, যা পাত সঞ্চালনের কারণে বিশেষভাবে
প্রভাবিত হয়েছে। আল্পস ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে
অগ্ন্যুৎপাতের কারণকেও একইভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এখানে আফ্রিকা প্লেট ও
ইউরেশীয় প্লেট-এর মিলন ঘটেছে।

আরও পড়ুন:  বিভিন্ন প্রকার তটভূমি সম্পর্কে আলোচনা করো।

(iii) নিরপেক্ষ প্লেট সীমান্তে
অগ্ন্যুৎপাতের কারণ :
নিরপেক্ষ প্লেট সীমান্ত বরাবর একটি প্লেট অন্য একটি প্লেটকে
অনুভূমিকভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এখানে ট্রান্সকম চ্যুতি দেখা যায় এবং বিদার
অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

(iv) হট স্পট এবং গ্রস্ত
উপত্যকার অগ্ন্যুৎপাত :
কোনো কোনো প্লেট-এর মধ্যে অর্থাৎ অন্তঃপ্লেট অঞ্চলে
তাপমাত্রা আশপাশে এলাকার তুলনায় বেশি। এই অঞ্চলগুলিকে তপ্ত অঞ্চল বা হট স্পট বলে।
বিজ্ঞানীদের মতে ভূপৃষ্ঠে প্রায়
21টি তপ্ত অঞ্চল বা হটস্পট
আছে। গ্রস্ত উপত্যকা (
rift
valley) অঞ্চলেও
অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলতে গেলে পূর্ব আফ্রিকার গ্রস্ত
উপত্যকা অঞ্চল।

(v) ভূ-সংকোচন : ভূবিজ্ঞানী
হ্যারল্ড জেফ্রি-র ভূ-সংকোচন তত্ত্ব অনুসারে ভূত্বক তাপ-বিকিরণের ফলে শীতল ও
সংকুচিত হয়। সংকোচনের কারণে ভূত্বকে যে-সমস্ত ফাটল সৃষ্টি হয়
, সেখানে ম্যগমার ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ
অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে পারে।

(vi) ভূগর্ভে গ্যাসীয় চাপ
বৃদ্ধি :
ভূগর্ভে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে অনেক সময় বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
উৎপন্ন গ্যাস ভূত্বকের দুর্বল অংশ দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে ও অগ্ন্যুৎপাত এর
সৃষ্টি করে।

4. সিদ্ধান্ত : জাপানে
অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা সুদূর প্রাচীনকালে থেকে ঘটে চলেছে। বস্তুত ভূপৃষ্ঠে পাত
সঞ্চালনের সঙ্গে এই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। ফলে অগ্ন্যুৎপাতের
মতো বিপর্যয় বা দুর্যোগ থেকে স্থায়ীভাবে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো উপায় জাপানের
কাছে নেই। এই কারণে জাপানে আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন এলাকায় জমি ব্যবহারের প্রণালী
সম্পর্কে গবেষণা করা হয় এবং অগ্ন্যুদ্‌গমের কোনো ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব কিনা
, সেবিষয়েও গবেষণা ও অনুসন্ধানের কাজ
চালানোর জন্য জাপানে আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন এলাকায় বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : আমাদের বিদ্যালয়ের ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকা বৃন্দ প্রত্যেকে এই প্রকল্পটি তৈরি করতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন। এর পাশাপাশি বিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষক এই কাজে সাহায্য করেছেন এবং উৎসাহ প্রদান করেছেন। 

Leave a Comment