আজকে আমি তোমাদের সাথে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া চন্দ্র মিশন Chandrayaan 3 এর উপর একটি প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করব। এই প্রবন্ধ রচনাটি শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণে বিশেষ ভাবে সাহায্য করবে। অতএব আর অপেক্ষা না করে মনোযোগ সহকারে প্রবন্ধটি একবার পড়ে নাও।
প্রবন্ধ রচনা – চন্দ্রযান 3
ভূমিকা : চন্দ্রযান ৩ হল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) -এর দ্বারা পরিচালিত অন্যতম বিখ্যাত একটি চন্দ্র অভিযান। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এর বিজ্ঞানীগণ চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণস্থল হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে বেছে নিয়েছে। এর অত্যাধুনিক যন্ত্রগুলি চন্দ্রের মাটি তদন্ত করার জন্য এবং মূল তথ্য চাঁদ থেকে প্রথিবীতে পাঠানোর জন্য সেট করা হয়েছে। এই চন্দ্র অভিযান মিশনের তিনটি প্রধান উপাদান রয়েছে। যথা – একটি অরবিটার, বিক্রম নামক একটি ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভার। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্বারা চন্দ্র অভিযান এর তৃতীয় মিশন করার পিছনে মূলত তিনটি উদ্দেশ্য ছিল, চাঁদের মাটিতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত অবতরণ, রোভারের নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানোর সক্ষমতা যাচাই এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
পটভূমি : ভারতের প্রথম চন্দ্র অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল চন্দ্রযান ১ মহাকাশযান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। যেটি 2008 সালে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করেছিল এবং ভারতকে চাঁদের আশেপাশে প্রদক্ষিণ করার জন্য চতুর্থ দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। এরপর চন্দ্রযান ২ মহাকাশযান কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল, এর সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জের পর, 14 জুলাই, 2023-এ চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানকে চন্দ্র অনুসন্ধানের জন্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড করার উদ্যেশ্যে ভারতের একটি বিশিষ্ট মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র সতীশ ধবন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
চন্দ্র অভিযানের লক্ষ্য : এই মিশনের উদ্দেশ্য হল চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল এবং নিরাপদ অবতরণ করা, চাঁদে রোভার ঘোরাফেরা করা এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
চন্দ্রযানের উপাদান : চন্দ্রযান মিশনের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য, ল্যান্ডারে বেশ কিছু উন্নত প্রযুক্তি বা উপাদান রয়েছে যেমন লেজার এবং আরএফ-লিডি অল্টিমিটার, ভেলোসিমিটার, প্রপালশন সিস্টেম ইত্যাদি।
চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ : 2023 সালের 14 জুলাই ভারতের সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ভারতীয় সময় ২ টো ৩৫ মিনিটে চন্দ্রযান-৩ সফল ভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এই মহাকাশযানকে সফল ভাবে উৎক্ষেপণ করা জন্য L.V.M 3 রকেটের ব্যবহার করা হয়েছিল।
চন্দ্রযানের অবতরণ : মহাকাশের মধ্য দিয়ে এক মাসব্যাপী সমুদ্রযাত্রার পর, মহাকাশযানটি 2023 সালের 23ই আগস্ট তার গতিপথ অতিক্রম করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড বা অবতরণ করেছিল। এই সময় মহাকাশযানটি চাঁদের 164 কিমি X 18074 কিমি কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ করে। এই অবতরণ প্রায় 19 মিনিট ধরে চলেছিল।
অভিযানের আর্থিক ব্যয় : এই চন্দ্র অভিযানটি প্রায় 615 কোটি টাকা খরচে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর অভিযানের এই আর্থিক ব্যয় অন্যান্য দেশের থেকে অনেক কম।
ল্যান্ডিং পয়েন্টের নামকরণ : চন্দ্রযানটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যে জায়গায় অবতরণ করেছে সেই জায়গাটির নামকরণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘শিব শক্তি’।
ভারতের স্থান : এই মিশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, ভারতবর্ষ একমাত্র প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে, সর্বপ্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার দেশ হিসাবে এবং চাঁদে অবতরণ করা চতুর্থ তম দেশ হিসাবে ভারত বর্তমানে স্থান পেয়েছে।
চন্দ্রযান-3 বিশিষ্ট বিজ্ঞানীগণ : চন্দ্রযান ৩-এর ধারণাটি বাস্তবায়নে বেশ কিছু বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যেমন – এস সোমনাথ (ইসরো চেয়ারম্যান), পি ভিরামুথুভেল (চন্দ্রযান-৩ এর প্রকল্প পরিচালক), এস উন্নিকৃষ্ণান নায়ার (বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের পরিচালক), এ রাজারাজন (লঞ্চ অথরাইজেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান), এম শঙ্করণ (ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারের পরিচালক)প্রভৃতি।
উপসংহার : 2023 সালের 23 শে আগস্ট দিনটি ভারতবর্ষের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, কারণ চন্দ্রযান মিশনটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ এবং চন্দ্র অবতরণ অর্জনের জন্য চতুর্থ দেশ হিসাবে ভারতকে মুকুট দিয়েছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে খুব কম বাজেট 615 কোটি টাকার মধ্যে সফল ভাবে এই চন্দ্র অভিযানটি সম্পন্ন হয়েছে।
good study