প্রশ্ন : ক্রেতা সুরক্ষা আদালত একটি টীকা লেখো।
উত্তর : ক্রেতা সুরক্ষা আদালতকে বিশেষ উদ্দেশ্যসাধক আদালত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ক্রেতা আদালত উপভোক্তাদের অভাব-অভিযোগ প্রতিকারের জন্য গঠিত হয়েছে। তিনটি স্তর বিশিষ্ট ক্রেতা আদালতের বিবরণ হল নিন্মরূপ –
(1) জেলাস্তর : ত্রিস্তরবিশিষ্ট ক্রেতা আদালতের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে জেলা আদালত। জেলা আদালতগুলি গঠিত হয় একজন বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারক অথবা বিচারক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি যিনি জেলা আদালতের সভাপতি হিসাবে কাজ করবেন এবং একজন মহিলা সহ আরোও দুজন সদস্য থাকবেন। জেলা আদালতের সদস্য হতে গেলে যোগ্যতা হল- ব্যক্তিকে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে-স্নাতক হতে হবে- অর্থনীতি, আইন, বানিজ্য, সরকারি বিষয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। রাজ্যসরকার কর্তৃক গঠিত একটি নির্বাচন কমিটি সংশ্লিষ্ট আদালতের সদস্যদের ও সভাপতিকে নিয়োগ করে। সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর অথবা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত (যেটি আগে ছিল)।
জেলা আদালতের এক্তিয়ার : ভোগ্যপণ্যের মূল্য এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সর্বমোট অনধিক ২০ লক্ষ টাকা দাবি নিয়ে ক্রেতারা জেলা আদালতে যেসব অভিযোগ দায়ের করেন সেগুলি এই আদালত বিচার করে থাকে।
(2) রাজ্যস্তর : ক্রেতা আদালতের মধ্যবর্তী স্তর হল রাজ্যস্তর। যা রাজ্য কমিশন নামে পরিচিত। নির্দিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতের একজন বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া দুই বা ততোধিক সদস্য (অবশ্যই একজন মহিলা সহ) রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন। এখানেও সদস্য জেলাস্তরের বিচারকদের ন্যায় যোগ্যতা সম্পন্ন হবেন এবং ৫ বছর বা ৬৭ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন (যেটি আগে শেষ হবে)।
এক্তিয়ার : ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী সেইসব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে পারবে যে পরিষেবার মূল্য ২০ লক্ষ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকার কম; রাজ্যে অবস্থিত জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়।
(3) জাতীয় ক্রেতা আদালত : ক্রেতা আদালতের সর্বোচ্চ স্তরটি হল জাতীয়স্তর। যাকে ‘জাতীয় কমিশন’ বলা হয়। সমগ্র দেশের জন্য জাতীয় কমিশন রয়েছে।
জাতীয় কমিশনের গঠন : সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে আদালতের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক জাতীয় কমিশনের সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত হন। এছাড়া কমপক্ষে ৪ জন বা ততোধিক সদস্য (একজন মহিলা সহ) নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক কমিশনের বাকী সদস্যরা নিযুক্ত হন। যোগ্যতা জেলা ও রাজ্যস্তরের সদস্যদের ন্যায় আবশ্যিক। জাতীয় আদালতের সদস্যগণ ৫ বছর বা ৭০ বছর (যেটি আগে হবে)।
এক্তিয়ার : ‘ক্রেতা সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী কমিশনের এক্তিয়ার হল – ভোগ্যপণ্যের মূল্য ও ক্ষতিপূরণের দাবি যদি ২০ লক্ষ টাকার বেশি হয় এবং রাজকমিশনের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়।
ক্রেতা আদালতের বৈশিষ্ট্য : ক্রেতা আদালতের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
(i) ক্রেতা আদালত শুধুমাত্র ক্রেতাবর্গের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিত ১৯৮৬ সালে যে আত্ম ইনের দ্বারা এই আদালতের সৃষ্টি সেখানে স্পষ্ট বলা আছে এই আইনের লক্ষ্য ক্রেতার সুরক্ষা।
(ii) ক্রেতা আদালত তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। এখানে শুধুমাত্র ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযোগ গ্রহণ করা হয়।
(iii) ক্রেতা আদালতে ক্রেতাদের ক্রয় করা জিনিস নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে যে সব পরিষেবা গ্রহণ করেন তাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। চিকিৎসা পরিষেবা ও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের অন্তর্ভুক্ত।
(iv) ক্রেতা আদালতে উপভোক্তারা স্পল্প ব্যয়ে সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন।
(v) এই আদালতে অভিযোগ জানানোর জন্য কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন হয় না। তবে ক্রেতা চাইলে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেন।
(vi) ক্রেতা আদালতের তিনটি স্তরের আদেশই আপিল যোগ্য। জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যস্তরে। রাজ্যস্তরের রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় ক্রেতা আদালতে এবং জাতীয় ক্রেতা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়।
(vii) ক্রেতা আদালতে কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা চলাকালীন প্রয়োজনে দেওয়ানি কার্যবিধি ফৌজদারি কার্যবিধি ও ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা যায়।
উপসংহার : ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইন ও তার সংশোধনী পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, ভারতসরকার বা রাজ্যসরকারগুলি ক্রেতা সাধারণের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ক্রেতাদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়ে উঠেছে। কিন্তু ক্রেতাদের সচেতনতার অভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামের ক্রেতা সাধারণের মধ্যে সচেতনতা ও উদাসীনতা বেশি লক্ষ করা যায়। অতএব ক্রেতা সুরক্ষা আন্দোলনকে ব্যাপক গণআন্দোলনে পরিণত করে সর্বস্তরের গ্রাহক ও ক্রেতাকে আরোও সচেতন করে তোলাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।