ভূমিকা : যে কোন দেশের প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার দ্বিতীয় পর্যায়ে সামগ্রিক কমরসূচীকে বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষার স্তর আধুনিক মনবিদগণ স্বীকার করেন যে, এই স্তরের শিশুকে যে-সমস্থ অভিজ্ঞতার সন্মুখীন করা হয় সেগুলি তার দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, ইত্যাদি জীবনের বিভিন্ন দিকের বিকাশের ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল—
প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য :
(১) জাতীয় চেতনার বিকাশ : প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে তার জীবন বিকাশের পরিবেশ ও কৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আগ্রহী হয় এবং সেগুলিকে উপলব্ধির মাধ্যমে তাদের মনে জাতীয় চেতনাবোধ জাগ্রত হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়াও প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।
(২) আদর্শ নাগরিক তৈরি : প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে আদর্শ নাগরিকের বৈশিষ্ট্যগুলি সংযোজিত করাও প্রাথমিক শিক্ষার একটি প্রধান উদ্দেশ্য।
(৩) বাচনিক বিকাশ : প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে কমিশন শিক্ষার্থীদের বাচনিক বিকাশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
(৪) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ : জীবন বিকাশের ধারার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে তার মধ্যে কতগুলি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যাবলির উন্মেষ ঘটানোও প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে কমিশন বিবেচনা করেছে।
(৫) বিমূর্ত চিন্তন ক্ষমতার বিকাশ : কমিশন প্রাথমিক স্তরে শিশুর মানসিক বিভিন্ন গুণাবলি বিকাশের সঙ্গে বিমূর্ত চিন্তন ক্ষমতার বিকাশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
(৬) দৈহিক বিকাশ : শিশুর দেহকে সুগঠিত ও সুস্থ করতে হলে দৈহিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কারণ দৈহিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে মানসিক সুস্থতা। তাই প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল দৈহিক বিকাশ ঘটানো।
(৭) জ্ঞানমূলক বিকাশ : শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশ যদি সঠিকভাবে না হয় তাহলে শিক্ষার্থী বা শিশু শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়বে। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশ ঘটানো।
(৮) সামাজিক বিকাশ : প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক বোধের বিকাশ ঘটানো। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীকে সামাজিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ, প্রথা, লোকাচার, লোকনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে পরিচিতি করানো।
(৯ ) সু-অভ্যাস গঠন : প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্ব পূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সু-অভ্যাস গঠন করা। কারণ শিশুর যদি এই বয়স থেকেই সু-অভ্যাস গঠন করা হয় তবে সেইসব শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে এক সুনাগরিক হিসাবে প্রতিস্থাপিত হবে।
(১০) সৃজনশীল শক্তির বিকাশ : শিশুর মধ্যে যে সুপ্ত সৃজনশীল শক্তি রয়েছে তার পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে শিশু যেমন আনন্দলাভ করে তেমনি তার চাহিদার পূরণ ঘটে।
উপরিক্ত অংশে আলোচিত উদ্দেশ্য গুলি ছাড়াও শিশুর মধ্যে গণতান্ত্রিকবোধের বিকাশ, প্রক্ষোভিক বিকাশ, সেবামূলক মনোভাবের বিকাশ, কর্মসম্পাদন ক্ষমতার বিকাশ প্রভৃতি দিকের বিকাশ ঘটানো প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।