ভূমিকা : প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার মধ্যবর্তী স্তর হল মাধ্যমিক শিক্ষা। সাধারণ ভাবে বললে মাধ্যমিক শিক্ষা বলতে বোঝায় নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষা। আবার, অনেকের মতে, ষষ্ট শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে মাধ্যমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার কোঠারি কমিশনের মতে অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সময়কাল হল মাধ্যমিক শিক্ষা।
কোঠারি কমিশন দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য বহুমুখী সুপারিশ করে। তার মধ্যে একটি সুপারিশ হল মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন। সেই জন্য কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছেন যে, শিক্ষার্থীকে গণতান্ত্রিক ধারণায় এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে নির্দেশদানে উপযুক্ত ধারণা জাগ্রত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা পূর্ণগঠিত করা উচিত।
মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো : কোঠারি কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষা হবে ৪ বছরের। এক্ষেত্রে কমিশন দুটি স্তরের সুপারিশ করে। যথা- (i) নিম্ন মাধ্যমিক (ii) উচ্চ মাধ্যমিক স্তর। কমিশন প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম নিচে দেওয়া হল –
শিক্ষার স্তর | শ্রেণীর নাম | বয়স (বছর) |
নিন্ম মাধ্যমিক শিক্ষা | নবম শ্রেণী | ১৪ + বছর |
দশম শ্রেণী | ১৫ + বছর | |
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা | একাদশ শ্রেণী | ১৬ + বছর |
দ্বাদশ শ্রেণী | ১৭ + বছর |
অর্থাৎ নিন্ম মাধ্যমিক শিক্ষা ২ বছর এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ৩ বছর। কমিশনে এটিও বলা হয়েছে যে নিম্ন মাধ্যমিক এরপর একটি বহিঃ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েই শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভরতি হওয়ার সুযোগ পাবে। আবার, আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে নবম ও দশম শ্রেণিকে অর্থাৎ নিম্ন মাধ্যমিক স্তরকে মাধ্যমিক শিক্ষা বলে গণ্য করা হয় এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বলে অভিহিত করা হয়।
এরকম আরও পড়ুন
মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম : কোঠারি কমিশন এর মতে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে এমন এক ধরনের জ্ঞানমূলক, সমাজমূলক ও আদর্শমূলক শিক্ষা দিতে হবে যাতে সেই শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যাক্তি ও সমাজ উভয় সত্তার পরিস্ফুটন ঘটতে পারে। মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত কমিশনের সুপারিশগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল –
(1) ভাষা : কমিশনের মতে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ত্রিভাষা সূত্রের মাধ্যমে শিক্ষা দান করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা (ক) মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষা, (খ) হিন্দি বা ইংরাজী, (গ) অতিরিক্ত যে কোনো একটি প্রাচীন বা আধুনিক ভাষা এর দ্বারা শিক্ষা দান করা হবে।
(2) গণিত : মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে অন্তর্ভুক্ত থাকবে গণিতের বিভিন্ন বিষয়। যেমন – পাটিগণিত, জ্যামিতি, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, রাশিবিজ্ঞান, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, ইত্যাদি বিষয়।
(3) বিজ্ঞান : বিজ্ঞানের পাঠক্রমের বিষয় বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে গণিতের মতই অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিজ্ঞান এর বিভিন্ন ভাগ। যেমন – পর্দার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞান প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
(4) সমাজ বিজ্ঞান : এই বিভাগে ইতিহাস, ভূগোল, পৌরবিজ্ঞান এর মোত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বর্তমান সমস্যার সঙ্গে সামজ্ঞস্য রেখে বিষয়গুলিকে পড়াতে পারবে এবং শিক্ষার্থীরা সামাজিক, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক জ্ঞান লাভ করতে পারবে।
(5) চারুকলা : মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার্থীদের সৃজনমূলক ও উৎপাদন মূলক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। চারুকলা বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে হতের কাজ, চিত্রকলা, অংকন, ভাস্কর্য প্রভৃতি।
(6) কর্মশিক্ষা : বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ যেমন—কাঠের জিনিস তৈরি, ধাতুর জিনিস তৈরি, বই বাঁধানো, কার্পেট তৈরি, ইলেকট্রিকাল রিপেয়ারিং, সাবান তৈরি, খেলনা প্রস্তুত ইত্যাদি শেখাতে হবে।
(7) সমাজসেবা : বছরে নির্দিষ্ট সময় সমাজসেবামূলক কাজ করতে হবে। বছরে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের জন্য নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৩০দিন নির্দিষ্ট করতে হবে বছরের মোট দিনের মধ্যে।
(৪) শারীরশিক্ষা : শিক্ষার্থীদের সঠিক শারীরশিক্ষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন games, sports ইত্যাদি ব্যবস্থা রাখতে হবে স্কুলগুলিতে।
(9) নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা : সপ্তাহে ১ বা ২ পিরিয়ড রাখা দরকার নৈতিক ও আধ্যত্মিক শিক্ষার জন্য। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব তৈরি হয়।
উপসংহার : উপরিক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে কোঠারি কমিশনের গুরুত্ব অপরিসীম। কোঠারি কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে এক বিশেষে ভূমিকা পালন করেছেন। কোঠারি কমিশন উল্লেখ করেছেন নবম ও দশম শ্রেণী হল নিন্ম মাধ্যমিক শিক্ষা ও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী হল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা। মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নে কোঠারি কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হল সুনাগরিক গঠন, শিক্ষায় সমসুযোগ প্রভৃতি।