কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য, সাংগঠনিক কাঠামো এবং পাঠ্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করো।

By

ভূমিকা : যে কোন দেশের প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার দ্বিতীয় পর্যায়ে সামগ্রিক কমরসূচীকে বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষার স্তর আধুনিক মনবিদগণ স্বীকার করেন যে, এই স্তরের শিশুকে যে-সমস্থ অভিজ্ঞতার সন্মুখীন করা হয় সেগুলি তার দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক, ইত্যাদি জীবনের বিভিন্ন দিকের বিকাশের ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য : প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি নিন্মরূপ আলোচনা করা হল –

  1. শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা হল প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য। 
  2. শিক্ষার্থীদের বাচনিক বিকাশ হল প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। 
  3. শিশুর দেহকে সুগঠিত ও সুস্থ রাখতে, শিশুদের দৈহিক বিকাশ সাধন করা হল প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য। 
  4. শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক বিকাশসাধন করাও প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। 
  5. প্রাথমিক শিক্ষার একটি গুরুত্ব পূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সু-অভ্যাস গঠন করা।
  6. প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক বোধের বিকাশ ঘটানো। 
প্রাথমিক শিক্ষার সাংগঠনিক কাঠামো : কোঠারি কমিশনের মতে, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হবে সাত বা আট বছরের। প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্থবিত এই কাঠামো দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। 

শিক্ষার স্তর

শিক্ষার প্রকৃতি

সময়কাল

শ্রেণীর নাম

বয়স (বছর)

প্রাথমিক শিক্ষা

নিন্ম প্রাথমিক স্তর

৪/৫ বছর

প্রথম-চতুর্থ/পঞ্চম শ্রেণী

৬+ থেকে ১০/১২ বছর

উচ্চ প্রাথমিক স্তর

৪/৩ বছর

পঞ্চম/ ষষ্ঠ – অষ্টম শ্রেণী

১১/১২ থেকে ১৪ বছর

আরও পড়ুন:  স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশনের লক্ষ্যগুলি লেখো।
প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম : প্রাথমিক শিক্ষার স্তরের পাঠ্যক্রমে যেসকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলি নিন্ম রূপ আলোচনা করা হল। 
(ক) ভাষা : কোঠারি কমিশন শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা তিনটি ভাষার মাধ্যমে দেওয়ার কোঠা বলা হয়েছে। সেই তিনটি ভাষা হল – (১) মাতৃ ভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, (২) হিন্দি, এবং (৩) ইংরেজি। 
(খ) গণিত : কমিশনের মতে শিক্ষার্থীদের সর্বপ্রথম গণিতের প্রাথমিক শিক্ষা দান করতে হবে এবং এর পর শিশুদের গণিতের বিভিন্ন ভাগ যেমন পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি পড়াতে হবে। 
(গ) বিজ্ঞান : পরিবেশ সমন্ধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিজ্ঞান পাঠ করবে। এরপর পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে যথাক্রমে শিক্ষার্থীরা পদার্থবিদ্যা, ভূবিদ্যা, জীববিদ্যা, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে। 
(ঘ) সমাজবিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে থাকবে ইতিহাস, ভূগোল ও পৌরবিজ্ঞান। 
(ঙ) শারীরশিক্ষা : স্বাস্থ্যই সম্পদ। শিশুরদের যাতে দেহ সুস্থ সবল থাকে সেদিক নজর রেখে স্কুলে শারীরশিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং মাঠের মধ্যে বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা এর ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন – ফুটবল, হকি, কবাডি, ক্রিকেট প্রভৃতি। 
(চ) সৃজনশীল কাজ : সংগীত, নাটক এবং বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে শিশুরা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে। 
(ছ) কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা : কাগজ কাটা, মাটি বা প্লাসটিসিন দিয়ে মডেল তৈরি, সুতো কাতার কাজ, বাঁশের কাজ, সেলাই, বাগানের কাজ প্রভৃতি কর্মশিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও এই শিক্ষা স্তরে সমাজসেবামূলক কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বোধএর বিকাশ ঘটবে। তাই সমাজসেবা মূলক কাজের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার, বিদ্যালয় সাজানো প্রভৃতি কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 
(জ) চারুকলা : চারুকলা পাঠ্যক্রমের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ, যেমন – গান, অংকন, সুচের কাজ প্রভৃতি। 
উপসংহার : উপরিক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, প্রথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য কমিশন যেসব পাঠ্যক্রম এর সুপারিশ করেছে সেগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। কোঠারি কমিশন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুটি শিক্ষা স্তরে  বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন। যথা – (১) নিন্ম প্রাথমিক স্তর যা শিক্ষার্থীদের ৪ থেকে ৫ বছরের শিক্ষাকাল হয়ে থাকে। (২) উচ্চ প্রাথমিক স্তর যা শিক্ষার্থীদের ৩ থেকে ৪ বছরের শিক্ষাকাল হয়ে থাকে। কোঠারি কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমে শারীরশিক্ষা, সমাজশিক্ষা, কর্ম শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষাও অন্তর্ভুক্ত করেছে। 

Leave a Comment