কাস্ট অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।

By

কার্স্ট অঞ্চলে দ্রবণ কাজের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে ও ভূগর্ভে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয়। টেরারোসা, গ্রাইকস ও ক্লিন্ট, সিঙ্কু হোল ও সোয়ালো হোল, ডোলাইন, উভালা, পোলজি, কার্স্ট জানালা, শুযূ ও অন্ধ উপত্যকা, স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট প্রভৃতি। এগুলির মধ্যে প্রধান চারটি ভূমিরূপের সচিত্র বিবরণ দেওয়া হল –

(i) গ্রাইক ও ক্লিন্ট : কার্বোলিক অ্যাসিড মিশ্রিত বৃষ্টির জলের দ্রবণের ফলে কার্স্ট অঞ্চলের দারণ বা সংযুক্তিগুলি ক্ষয় পেয়ে ক্রমশ গভীর হতে থাকে এবং আয়তনে বৃদ্ধি পায়। পরস্পর ছেদী এরূপ দারণগুলি সম্প্রসারিত হয়ে সংকীর্ণ লম্বা খাত এবং তার মধ্যবর্তী অংশে সংকীর্ণ সূচালো উচ্চভূমি সৃষ্টি করে। দীর্ঘ ও গভীর খাতগুলিকে ইংল্যান্ডে গ্রাইক, ফ্রান্সে ল্যাপিয়ে এবং জার্মানিতে কারেন বলে। গ্রাহকের মধ্যবর্তী সমতল সূচালো উচ্চভূমিকে ক্লিন্ট বলা হয়। ভারতের দ্রুগ জেলায় গ্রাইক ও ক্লিন্ট দেখা যায়।

আরও পড়ুন:  কাস্ট অঞ্চলে সৃষ্ট সঞ্চয়জাত ভূমিরুপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো।

(ii) সিঙ্ক হোল ও সোয়ালো হোল : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে অসংখ্য ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয়। এগুলিকে সিঙ্ক হোল বলে।যে অঞ্চলে চুনাপাথরের কারণ বেশি থাকে, সেখানে সিঙ্ক হোলের ওপরের দিকে বেশি ক্ষয় হয় এবং ক্ষয় প্রাপ্ত পদার্থসমূহ নীচের দিকে অপসারিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠের ওপর দিকে দ্রবণ ক্ষয় বেশি এবং নীচের দিকে কম হয় বলে সিঙ্ক হোলের আকৃতি ফানেলের মতো হয়।

সিঙ্ক হোলের ওপরে যদি মাটির আবরণ না থাকে এবং জল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সরাসরি দারণ দিয়ে ভূ-গর্ভে চলে যায়, তখন তাকে সোয়ালো হোল বলে। সোয়ালো হোলের মুখ থেকে ভূ-অভ্যন্তরে বিস্তৃত সুরঙ্গ পথটিকে পোনর বলে। ইংল্যান্ডের গ্যাপিং মাইল সোয়ালো হোলের উদাহরণ।

আরও পড়ুন:  স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র তত্ত্বটি আলোচনা করো।

(iii) ডোলাইন : বেশি দারণযুক্ত বিশুদ্ধ চুনাপাথর দ্বারা গঠিত সমতল বা শুষ্ক নদী উপত্যকায় দ্রবণজনিত নিম্নমুখী ক্ষয়ের ফলে সিঙ্ক হোলগুলি ক্রমশ বড়ো হতে থাকে। এরূপ বড়ো বড়ো সিঙ্ক হোলগুলিকে পূর্বতন যুগোস্লাভিয়ায় ডোলাইন বলে। এদের গভীরতা 10-100 মিটার এবং আয়তন 60-1000 বর্গ মিটার পর্যন্ত হয়। সময় যত বাড়তে থাকে, ততোই ডোলাইনের সংখ্যা এবং ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়। ডোলাইনগুলি দুভাবে গঠিত হয়— (ক) দ্রবণজনিত নিম্নমুখী ক্ষয়ের ফলে একাধিক সিঙ্ক হোল মিলিত হয়ে এবং (খ) থর্নবেরীর মতে গুহার ছাদ ধ্বসে গিয়ে। অন্ধ্রপ্রদেশের বোরা গুহার ফানেল আকৃতির গর্তটি একটি আদর্শ ডোলাইন।

আরও পড়ুন:  ছত্রিশগড়ের খনিজ সম্পদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

(iv) স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট : চুনাপাথরের ফাটলের মধ্যে দিয়ে জল চুঁইয়ে বিন্দুর আকারে পড়তে থাকে। বাষ্পীভবনের জন্য ক্যালশিয়াম কার্বোনেট সঞ্চিত হয় এবং স্তম্ভের আকারে বটগাছের ঝুরির মত চুনাপাথরের ছাদ থেকে ঝুলতে থাকে। এগুলিকে স্ট্যালাকটাইট বলে। ফাটলের নীচে গর্তের মেঝেতে চুনমিশ্রিত জল পড়ে এবং বাষ্পীভবনের ফলে ওই স্থানে চুনের সঞ্জয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। কালক্রমে স্তম্ভের আকারে মেঝে থেকে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এগুলিকে স্ট্যালাগমাইট বলে। অনেক সময় স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট যুক্ত হয়ে স্তম্ভের সৃষ্টি করে। ভারতের মেঘালয়ে চেরা মালভূ মিতে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বোরা গুহায় এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।

Leave a Comment