কাস্ট অঞ্চল : ‘কাস্ট’ হল একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ হল ‘উন্মুক্ত প্রস্তর ময় ভূমি’। চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে জলের দ্রবণ প্রক্রিয়ার ফলে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভূমিরুপ গড়ে ওঠে। ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরুপগুলি দ্রবণ, কার্বনেশন প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ : পূর্বতম যুগোস্লাভিয়ার অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের ডালমেশিয়ান উপকূল হল কাস্ট অঞ্চলের উদাহরণ।
কাস্ট অঞ্চলের ক্ষয়জাত ভূমিরুপ : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বা কাস্ট অঞ্চলে দ্রবণ ও কার্বনেশন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ভূমিরুপগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল।
(১) ল্যাপিস বা কারেন্টস : কাস্ট অঞ্চলে চুনাপাথরের স্তরে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্রবনের ফলে সৃষ্ট খাদগুলির মধ্যবর্তী অংশে সংকীর্ণ ও সুচোলো উচ্চ ভূমি ল্যাপিস নামে পরিচিত। চুনাপাথর যুক্ত খাড়া ঢাল সম্পন্ন অঞ্চলে এই ভূমিরুপ লক্ষ্য করা যায়।
উদাহরণ : অন্ধ্রপ্রদেশের বোরাগুহাতে এরূপ ভূমিরুপ লক্ষ্য করা যায়।
(২) ক্লিন্ট ও গ্রাইকস : কাস্ট অঞ্চলের কোন উন্মুক্ত চুনাপাথরের স্তর যদি দরন বা ফাটল যুক্ত হয় তবে সেই ফাটল যুক্ত স্থানে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্বারা দ্রুত দ্রবণ প্রক্রিয়া ঘটে বা বিক্রিয়া ঘটে সেই ফাটল অংশটি আরো প্রসস্থ হয়ে পড়ে এবং খাতের ন্যায় অবস্থান করে। আর এই খাতগুলিকে গ্রাইকস বলে ও দুটি খাতের মধ্যবর্তী উঁচু অংশকে ক্লিন্ট বলে।
উদাহরণ : ক্লিন্ট ও গ্রাইকস লক্ষ্য করা যায় মধ্যপ্রদেশের নন্দিনী খনি অঞ্চলে।
(৩) সিঙ্ক হোল : কাস্ট অঞ্চলে বা চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড যুক্ত ক্ল দ্বারা দ্রবণ ক্ষয় কার্যের ফলে ভূপৃষ্টে যে অবনমিত স্থানের বা ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে সিঙ্ক হোল বলে। সিঙ্ক হোল গুলি সাধারণত কয়েক সেমি থেকে ২ মিটার পর্যন্ত গভীর হয় এবং এগুলি ফানেল আকৃতির হয়ে থাকে।
উদাহরণ : একটি বিখ্যাত সিঙ্ক হোল হল ছত্রিশগড়ে রায়পুরের ধামতারি সিঙ্ক হোল।
(৪) ডোলাইন ও উভালা : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে ক্রমাগত বহু সময় ধয়ে ক্ষয় সাধন হওয়ার ফলে সিঙ্ক হোল গুলির আকার বড়ো হয় এবং কোন কোন সময় ছোট ছোট সিঙ্ক হোল গুলি একসাথে জুড়ে একটি বড়ো আকৃতির অবনিমিত স্থানের সৃষ্টি করে থাকে, যা ডোলাইন নামে পরিচিত। আর একাধিক ডোলাইন পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে যে বৃহৎ আকৃতির অবনমিত স্থানের সৃষ্টি করে তাকে উভালা বলে। আবার ছোট আকারের উভালাকে জামা বলে।
উদাহরণ : অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপকূল অঞ্চলে অসংখ্য ডোলাইন এবং বসস্নিয়া অঞ্চলে উভালা লক্ষ্য করা যায়।
(৫) পোলজি : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে উভালা আপেক্ষাকৃত বৃহৎ, দীর্ঘায়িত ও সমতল তলদেশ বিশিষ্ট খাড়া ঢাল যুক্ত গর্তকে পোলজি বলে। পোলজির ওপরের অংশ পলি দ্বারা আবৃত থাকে। পোলজির মধ্যে ছোট ছোট ঢিবি দেখা যায় যা হামস নামে পরিচিত।
উদাহরণ : পূর্বতম যুগোস্লাভিয়র লিভেনো পোলজি বিখ্যাত।
(৬) চুনাপাথর গুহা : চুনাপাথর অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে চুনাপাথর স্তর ধসে পড়ে যে বিশাল আকারের গহ্বরের সৃষ্টি করে তাকে চুনাপাথর গুহ বলে। দ্রবণ ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই গুহার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
উদাহরণ : সুইজারল্যন্ডের হলোক গুহ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যমথ গুহা হল চুনাপাথর গুহার উদাহরণ।
অন্যান্য ভূমিরুপ : উপরিক্ত অংশে আলোচিত ভূমিরুপ গুলি ছাড়াও, সোয়ালো হোল, গিরিখাত, শুষ্ক উপত্যকা, অন্ধ উপত্যকা প্রভৃতি ভূমিরুপের সৃষ্টি হয়ে থাকে কার্স্ট অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে।