কারিগরি শিক্ষা : ‘টেকনিক্যাল’ বা ‘কারিগরি’ কথাটির অর্থ হল – শিল্প প্রনালীর দক্ষতা – সম্পর্কিত। যে বিশেষ শিক্ষার দ্বারা এই প্রনালীগত দক্ষতার বিকাশ ঘটানো হয় তাকে বলে কারিগরি শিক্ষা। অর্থাৎ যে শিক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীকে শিল্প বাণিজ্য, কৃষি ও কলকারখানায় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেই শিক্ষাকে বলে কারিগরি শিক্ষা। কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি হল-জুনিয়র টেকনিক্যাল স্কুল, মেডিক্যাল কলেজ, চিত্রকলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক কলেজ ইত্যাদি।
বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : আধুনিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করা। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।
(1) উৎপাদনশীলতা : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের একটি উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত করে সমাজ ও দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(2) স্বনির্ভরতা : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করে। এই শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থী হয় কোনো চাকুরির সুযোগ পায় নয়তো স্বনিযুক্ত কাজে যুক্ত হতে পারে।
(3) জাতীয় আয় বৃদ্ধি : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা যেহেতু উৎপাদনভিত্তিক শিক্ষা, তাই এটি জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়নে সহায়তা করে।
(4) বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি : এই শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য হল বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি করা। এই শিক্ষার অর্জিত জ্ঞান বা দক্ষতা, শিক্ষার্থীকে তার ভবিষ্যৎ জীবনের নির্দিষ্ট বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করে।
(5) শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা : শিক্ষার্থী তার নিজের চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষালাভ করতে পারে, ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন মানসিক তৃপ্তি পায় তেমনি শান্তি বজায় থাকে।
(6) শ্রমের প্রতি মর্যাদা : সবশেষে এই শিক্ষা শিক্ষার্থীরা যেহেতু কায়িক শ্রমের মাধ্যমে অর্জন করে থাকে। সেহেতু এর মাধ্যমে তাদের শ্রমের প্রতি এক মর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়।
(7) জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ : বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের উপায় তৈরি হয়। ব্যতিক্রমী শিশুদের জন্য এই ধরনের বৃত্তিমূলক শিক্ষা খুবই প্রয়োজন যার ফলে তারা কিছু উৎপাদনমূলক কাজে নিজেদেরকে নিয়োগ করতে পারে এবং অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়।
(৪) শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী : পুঁথিগত নীরস শিক্ষার একঘেয়েমি থেকে দূর করে ব্যবহারিক ও হাতেকলমে শিক্ষা। এই শিক্ষায় তাদের উৎসাহ বৃদ্ধি একপ্রকার ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে।
(9) শ্রমের প্রতি উৎসাহ : বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের শ্রমের মর্যাদা দিতে শেখায়। নৈতিক চরিত্র গঠনেও সাহায্য করে।
(10) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি : বৃত্তিমূখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কাছে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ঘটায়। যার ফলে এই শিক্ষা গ্রহণ করে কোন না কোন কলকারখানায় যোগদান করতে পারে এবং তারা বেকারত্ব থেকে মুক্তি পায়।
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা হল ব্যক্তিনির্ভর নির্বাচনধর্মী বৈচিত্র্যপূর্ণ, ব্যবহারিক, স্বনির্ভর শিক্ষা যা শিক্ষার্থীকে সকল দিক থেকে পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে থাকে।