উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল – প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর সাজেশন 2023-2024 | দ্বাদশ শ্রেণী ভূগোল – ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া থেকে প্রশ্ন উত্তর 2023

By

আজকে তোমাদের সাথে উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল এর প্রথম অধ্যায় ভূমিরুপ গঠনকারী প্রক্রিয়া থেকে প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করছি। এখানে সমস্থ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আলোচনা করা হয়েছে। এখানে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য 5,3, ও 2 নম্বর এর প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এখান থেকে তোমার প্রয়োজনের প্রশ্ন গুলি সংগ্রহ করে তোমরা অনুশীলন করতে পারো। 
image_title_here
ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া থেকে প্রশ্ন উত্তর 2023 

প্রশ্ন: বহির্জাত প্রক্রিয়া কাকে বলে। এই প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ? বহির্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যম গুলি কি কি ? বহির্জাত ও আন্তর্জাত প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য লেখ।

বহির্জাত প্রক্রিয়া: নদী হিমবাহ বায়ু সমুদ্র তরঙ্গ জোয়ার ভাটা প্রকৃতি প্রাকৃতিক শক্তি এর দ্বারা প্রতিনিয়ত ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠের উপরের বিভিন্ন ভূমিরূপকে ক্ষয় করে পরিবহন ও সঞ্চয় করে পরিবর্তন করে ভূপৃষ্ঠে আবার নতুন করে নানা ধরনের ভূমিরূপ করে ওঠে। আর ভূপৃষ্ঠের বাইরে প্রাকৃতিক শক্তি সমূহের দ্বারা এরকমভাবে ভূমিরূপ এর পরিবর্তন ও ভাস্কর্য সৃষ্টি করে এবং তাদের মধ্যে সমতা এনে একটি সাধারণ তল গঠন করাকেই, বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে। 

বহির্জাত প্রক্রিয়ার ইংরেজি ‘Exogenous’ প্রতিশব্দটির উৎপত্তি দুটি গ্রিক শব্দ Exo (বহির্ভাগ) ও Genesis (উৎপত্তি) থেকে এসেছে। 

বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:

বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

(ক) এটি ভূপৃষ্ঠের উপরে ক্রিয়াশীল  ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়া। 

(খ) বহির্জাত প্রক্রিয়ার প্রাকৃতিক শক্তি গুলি হল জলবায়ুর উপাদান, নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রস্রোত, জোয়ার – ভাটা প্রভৃতি। এই প্রাকৃতিক শক্তি গুলির দ্বারা বহির্জাত প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়ে থাকে। 

(গ) বহির্জাত প্রক্রিয়া একটি ধীর প্রক্রিয়া। 

(ঘ) বহির্জাত প্রক্রিয়া এর মাধ্যমে ভূমিরূপ গঠন হতে অনেক সময় লাগে। 

(ঙ) বহির্জাত প্রক্রিয়ার প্রধান শক্তি উৎস হল সৌরশক্তি। 

(চ) বহির্জাত প্রক্রিয়ায় নগ্নীভবন তথা অবরোহন দ্বারা  ভূমিভাগ নিচু হয় এবং সঞ্চয় তথা আরোহন দ্বারা ভূমিভাগ উচু স্থানে পরিণত হয়। 

(ছ) এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদি বা প্রাথমিক ভূমিরূপ এর ওপর নানা ধরনের নতুন নতুন ও ছোট ছোট ভূমিরূপ গঠিত হয়। 

বহির্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যম সমূহ: বহির্জিত প্রক্রিয়ার মাধ্যম গুলি দুই ধরনের। যথা:- স্থিতিশীল ও গতিশীল প্রাকৃতিক শক্তি। 

(ক) স্থিতিশীল প্রাকৃতিক শক্তি:- এই প্রাকৃতিক শক্তির মধ্যে যেসব আবহাওয়া ও জলবায়ু উপাদান রয়েছে সেগুলি হল উষ্ণতা, বায়ুর চাপ, আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা বৃষ্টিপাত, শিশির ইত্যাদি। 

(খ) গতিশীল প্রাকৃতিক শক্তি:- এই প্রাকৃতিক বা গতিশীল প্রাকৃতিক শক্তির মধ্যে যেগুলি রয়েছে সেগুলি হল – নদনদী, বায়ুপ্রবাহ, ভৌমজল, হিমবাহ, সমুদ্রস্রোত ও তরঙ্গ, সুনামি, জোয়ার – ভাটা ইত্যাদি। 

বহির্জাত ও আন্তর্জাত প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য বা তুলনামূলক আলোচনা:-

বিষয়বহির্জাত প্রক্রিয়াআন্তর্জাত প্রক্রিয়া
প্রকৃতি
বহির্জাত প্রক্রিয়া 
হল এটি ভূপৃষ্ঠের 
মধ্যে সৃষ্ট 
ভূমিরূপ 
পরিবর্তনকারী 
প্রক্রিয়া।
আন্তর্জাতক প্রক্রিয়া
 হল ভু – অভ্যন্তরে 
সৃষ্ট ভূমিরূপ 
গঠনকারী প্রক্রিয়া।
উৎপত্তির
কারণ
বহির্জাত প্রক্রিয়া 
বিভিন্ন প্রাকৃতিক 
শক্তি(যেমন – 
জলবায়ুর 
উপাদান, নদী,
বায়ু, হিমবাহ, 
সমুদ্রস্রোত, 
জোয়ার-ভাটা 
প্রভৃতি)দ্বারা 
সংঘটিত হয়।
ভু – অভ্যন্তরে 
গলিত ও ম্যাগমার,
তাপ ও চাপের 
পরিবর্তন,
রাসায়নিক 
বিক্রিয়ার ফলে 
অন্তর্জাত প্রক্রিয়া 
সংগঠিত হয়।
প্রভাব
বিস্তার
বহির্জাত প্রক্রিয়ার
 প্রভাব বিস্তার 
সমগ্র বিশ্বে ও 
ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র।
আন্তর্জাত্ত প্রক্রিয়ার 
প্রভাব বিস্তার 
শুধুমাত্র স্থানীয় ও 
আঞ্চলিক স্থান।
গতি ও
সময়
বহির্জাত প্রক্রিয়া 
হল একটি ধীর 
প্রক্রিয়া।
বহির্জাত প্রক্রিয়ার 
মাধ্যমে ভূমিরূপ 
গঠনে খুব বেশি 
সময় লাগে।
এটি ধীর বা 
আকস্মিক
 প্রক্রিয়া।অন্তর্জাত 
প্রক্রিয়ায় ভূমিরূপ 
গঠনে সময় খুব 
কম লাগে।
উদাহারণঅবরোহণ,
আরোহণ ও
জৈবিক প্রক্রিয়া।
অগ্নুৎপাত,
 ভূমিকম্প
প্রভৃতি।

প্রশ্ন:  নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির সচিত্র বিবরণ দাও। ‘রিয়া’ ও ‘ফিয়র্ড’ উপকূলের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো। (4+3=7)

উঃ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন হলে বা কোন প্রাকৃতিক কারণের ফলে ভূপৃষ্ঠ হঠাৎ উত্থিত হলে, নদীর ক্ষয় কাজের শক্তি বেড়ে ওঠে, যার ফলে নদী পুনরায় ক্ষয় কাজ করতে থাকে। এইভাবে নদীর বার্ধক্য পর্যায় থেকে আবার নতুন ভাবে ক্ষয় কাজ করাকে নদীর পুনর্যৌবন লাভ বলে। নদীর পুনর্যৌবন ঘটার ফলে মাঝে মাঝে পুরনো উপত্যকার মধ্যে নতুন ভূমিরূপ গড়ে উঠতে দেখা যায়।

        নদীর পুনে যৌবন লাভ সাধারণত ভূমির ঢালের পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে। এর ফলে ওই অঞ্চলে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি লক্ষ্য করা যায়।

 নদী তার পুনর্যৌবন সম্পন্ন করার ফলে যেসব ভূমিরূপ গঠিত হয় সেগুলি হল –

i) নিকবিন্দু (Knick Point) : নদীর পুনর্যৌবন লাভের কারণে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর গতিপথের যে বিন্দুতে উচ্চ উপত্যকার পুরনো মৃদু ঢালের সাথে নিন্ম উপত্যকার নতুন খাড়া ঢালের সংযোগ ঘটে নদীবক্ষ উচু হয়ে অবস্থান করলে, তাকে নিকবিন্দু বলে। 

উদাহরণ: রাঁচি মালভূমির পূর্ব প্রান্তে কাঁচি নদীর নিক বিন্দুতে দশমঘাঘ জলপ্রপাত গঠিত হয়েছে।

ii) উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা (Valley – in – Valley) : নদী পুনর্যৌবন  লাভ করলে পূর্বতম নদী উপত্যকা প্রশস্ত হয় এবং এক খাড়া ঢালের সৃষ্টি করে, ফলে পুরনো নদী উপত্যকার ওপর যে সংকীর্ণ খাড়া ঢালু উপত্যকার সৃষ্টি হয়, এরকম নদী উপত্যকাকে, উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বলা হয় । 

উদাহরণ: হাজারীবাগ জেলার রাজারাপ্পায় দামোদর নদে উপত্যকায় গঠিত উপত্যকা দেখা যায় ।

iii) নদীমঞ্চ (River Terrace ) : বার্ধক্য পর্যায়ের চওড়া উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পুনর্যৌবন  প্রাপ্ত নদী লম্বভাবে ক্ষয়সাধন এর ফলে নিচু হয়ে অবস্থান করে পুরোনো প্রশস্ত প্লাবনভূমির দুপাশে বিভিন্ন আয়তনযুক্ত সিড়ির ন্যায় বা একাধিক ধাপ যুক্ত ভূমিরুপ সৃষ্টি করলে তাকে, নদী মঞ্চ বলে। 

উদাহরণ: মধ্যপ্রদেশের ভেরাঘাটে নর্মদা নদীতে যুগল নদীমঞ্চ সৃষ্টি হয়েছে।

iv) কর্তিত বা খোদিত নদীবাঁক (Incised meander) : নদী পুনর্যৌবন লাভ করলে তার পুরোনো প্রবাহ পথকে দ্রুত নিন্মক্ষয়ের মাধ্যমে নিচু হয়ে অবস্থান করে এবং দুপাশে খাড়া দেওয়াল বেষ্টিত যে নতুন গভীর ও সংকীর্ণ বাঁক এর সৃষ্টি হয় তাকে কর্তিত নদী বাঁক বলে। 

উদাহরণ:  ছোটনাগপুর মালভূমির দামোদর ও কারো নদীতে দেখা যায় এরূপ ভূমিরুপ। 

v) প্রাকৃতিক সেতু : নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে সৃষ্ট কার্তিত নদী এর পার্শ্বভাগে ক্ষয়ের ফলে গুহার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর পরবর্তী সময়ে এই গুহা ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে পরস্পর একই রূপ দুটি গুহা যুক্ত হলে গুহার উপরি অংশটি সেতুর আকার ধারণ করে একে প্রাকৃতিক সেতু বা খিলান সেতু বলে।

উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রেইনবো ব্রিজ প্রাকৃতিক সেতুর উদাহরণ। 

➯‘রিয়া’ ও ‘ফিয়র্ড’ উপকূলের মধ্যে পার্থক্য গুলি হলো –

বিষয়রিয়া উপকূলফিয়র্ড উপকূল
সৃষ্টির কারণ
ভূ – আন্দোলনের ফলে
উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বা
উচ্চ ভূমির উপর দিয়ে
প্রবাহিত নদী উপত্যকা
 নিমজ্জন এর ফলে রিয়া
 উপত্যকা সৃষ্টি হয়।
ভূ – আলোড়ন এর ফলে 
বরফ – মুক্ত উপত্যকা
আংশিক ভাবে নিমজ্জন
হলে ফিয়র্ড উপকূল 
এর সৃষ্টি হয়। 
আকৃতি 
রিয়া উপকূল দেখতে
‘ফানেল’ এর মতো হয়। 
এই উপকূল ইংরেজি  ‘U’
আকৃতির  হয়ে থাকে। 
ঢাল 
এই উপকূল মৃদু ঢাল
 সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।
এই উপকূল খাড়া ঢাল 
সম্পূর্ণহয়ে  থাকে। 
উদাহরণ 
আয়ারল্যান্ড এর দক্ষিণ
পশ্চিম উপকূল।
নরওয়ে, সুইডেন, 
আলাস্কা এইউপকূল 
এর উদাহরণ।

প্রশ্ন:  অবরোহন ও
আরোহন প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝো? অবরোহন ও আরোহন প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য লিখো

➤অবরোহন:- যে বহির্জাত
প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উপাদান বা প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা আবহবিকার, ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্জিত
ক্ষয় এর মাধ্যমে যখন কোনো উচু ভূমিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিচু হয়ে অবস্থান করলে তাকে
অবরোহন বা 
অবরোহন প্রক্রিয়া বলে। অবরোহন প্রক্রিয়া প্রধানত তিনটি পদ্ধতির মাধ্যমে তার কার্য সাধন করে থাকে। যথা – (ক) আবহবিকার,  (খ) পুঞ্জিত ক্ষয়,  (গ)ক্ষয়ীভবন। 


যেমন:- এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন সুউচ্চ পর্বত ভূমি ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে প্রথমে ক্ষয়জাত পর্বত, এরপর ক্ষয়জাত মালভূমিতে এবং সর্বশেষে সমভূমিতে পরিণত হয়। 


➤আরোহন:- যে বহির্জাত
প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উপাদান বা প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা যখন কোন নিচু ভূমিভাগ সঞ্চয় সাধন
করে উচু হয়ে অবস্তান করে তখন তাকে আরোহন বলে

➥যেমন:- নদীর দ্বারা বাহিত ক্ষয়ীভূত পদার্থ নদীর নিন্মপ্রবাহে এসে সঞ্চিত হয়ে বদ্বীপ, বালুচর, প্লাবনভূমি প্রভৃতি ভূমিরুপ গড়ে ওঠে। আর এই ভূমিরুপ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গঙ্গা বদ্বীপ। 

অবরোহন
ও আরোহন প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য :-

বিষয়

অবরোহন প্রক্রিয়া

আরোহন প্রক্রিয়া

উচ্চতা

এই প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে ভূমিভাগের উচ্চতা হ্রাস পায়

এই প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়

কাজ

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিভাগ ক্ষয় সাধন হয় এবং ভূমিভাগের
নিন্মস্থ শিলা উন্মুক্ত হয়
। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ার প্রধান কাজ ক্ষয় সাধন করা।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষয়জাত পদার্থ ভূপৃষ্টয়ের নিচু স্থানে
সঞ্চিত হয়
। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ার
প্রধান কাজ সঞ্চয় সাধন করা।

নিয়ন্ত্রক

এই প্রক্রিয়ার
নিয়ন্ত্রক গুলি হলো – আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবনের শক্তিসমূহ

এই প্রক্রিয়ার
নিয়ন্ত্রক গুলি হলো – প্রধানত ক্ষয়ীভবনের শক্তি সমূহ
। অর্থাৎ নদী, বাযু,
হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ।  

ফলাফল

এই প্রক্রিয়ার ফলে ক্ষয়জাত ভূমিরুপের সৃষ্টি হয় থাকে।  

এই প্রক্রিয়ার ফলে সাধারনত সঞ্চয়জাত ভূমিরুপের সৃষ্টি হয়

ভাস্কর্য

এই প্রক্রিয়ার
ফলে ভূমিরুপের ভাস্কর্য সৃষ্টি হয়

এই প্রক্রিয়ার
ফলে ভূমিরুপের ভাস্কর্য সৃষ্টি হয় না

প্রশ্ন:  ‘অ্যাকুইফার’
ও ‘
অ্যাকুইক্লুড’ -এর পার্থক্য নির্দেশ করো

 অ্যাকুইফার (Aquifer) :-  ইংরেজি Aquifer শব্দটি ল্যাটিন
শব্দ
aqua(জল) ও fero(বহনকারী)শব্দ
থেকে এসেছে
ভূ-অভ্যন্তরের মধ্যে যদি প্রবেশ্য শিলাস্তর এর নিচে অপ্রবেশ্য
শিলাস্তর এর অবস্থান থাকে তবে বৃষ্টিপাতের জল সেই প্রবেশ্য শিলাস্তর এর মধ্য দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের
মধ্যে প্রবেশ করে এবং অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে বাধা প্রাপ্ত হয়ে এক স্থায়ী ভৌমজল
ভান্ডার গড়ে তলে, আর যাকে
অ্যাকুইফার বলে। অর্থাৎ, ভূ-অভ্যন্তরের মধ্যে
প্রবেশ্য ও অপ্রবেশ্য শিলাস্তর এর মধ্যে সৃষ্ট ভৌমজল ভান্ডারকে অ্যাকুইফার বলে অ্যাকুইফার স্তরটি জলবহন করে বলে একে জলবাহী স্তরও বলা হয়

অ্যাকুইক্লুড (Aquiclude) :- অ্যাকুইফারের নিচে
ও ওপরে শেল ও কাদা গঠিত অপ্রবেশ্য শিলাস্তর এর মধ্যে জল ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে পারে
যার কারণে এই স্তর খুব কম পরিমাণে জলধারণ করতে পারে, কিন্তু জল চলাচল করতে পারে না,
তাই এই স্তরকে
অ্যাকুইক্লুড বলে। অর্থাৎ, যে শিলাস্তর জল
ধারণ করতে পারে কিন্তু ক্ষরণ বা চলকল করতে পারে না তাকে
অ্যাকুইক্লুড বলে। এই স্তর থেকে কূপ ও নলকূপের
মাধ্যমে জল পাওয়া যায় না।

অ্যাকুইফার
ও অ্যাকুইক্লুডের মধ্যে পার্থক্য:-

বিষয়

অ্যাকুইফার

অ্যাকুইক্লুড

সংজ্ঞা

ভূ-অভ্যন্তরে
যে শিলাস্তর জল বহন ও জলধারণ করতে সক্ষম তাকে অ্যাকুইফার বলে

ভূ-অভ্যন্তরে
যে শিলাস্তর জল বহন ও জলধারণ করতে অক্ষম তাকে
অ্যাকুইক্লুড বলে

অবস্থান

এই স্তর দুটি অপ্রবেশ্য
শিলাস্তর এর মাঝে বা অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের উপরে অবস্থান করে
 

এই স্তর সাধারনত অ্যাকুইফারকে কেন্দ্র
করে অবস্থান করে

জল সঞ্চয়

এই স্তর জল
সঞ্চয় করতে পারে

এই স্তর অত্যধিক
মাত্রায় জল সঞ্চয় করতে পারে না

জল প্রবাহ

এই স্তরে জল চলাচলের একটি
নির্দিষ্ট প্রবাহ আছে

এই স্তর জলরোধক হওয়ায় জল
চলাচলের কোনো নির্দিষ্ট প্রবাহ নেই

জলধারণ ক্ষমতা

এই স্তরটি হল
জলবাহী স্তর

এই স্তরটি হল
জলরোধক স্তর

শিলাস্তরের

প্রবেশ্যতা

এই স্তরের শিলাস্তর হল প্রবেশ্য
শিলাস্তর

এই স্তর এর শিলাস্তর হল
অপ্রবেশ্য প্রকৃতির

গুরুত্ব

পান করার উদ্দেশ্যে
বা সেপ কাজের জন্য এই স্তরের জল উত্তোলন করা হয়

এই স্তর থেকে
কোনো ভাবে জল উত্তোলন করা যায় না

আরও পড়ুন:  ভারতের হুগলি নদীর দুই তীরে পাট শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ আলোচনা করো | হুগলি নদীর দুই তীরে পাট শিল্পের বিকাশ লাভের কারণ আলোচনা করো।

প্রশ্ন: ভৌম জলস্তর এর শ্রেণীবিভাগ করে চিত্র সহ আলোচনা করো

আথবা, ভৌমজলের স্তররায়ণ চিত্র সহ বর্ণনা
করো।

উত্তর : বৃষ্টিপাতের জল বা তুষার গলা জল ভূপৃষ্টয়ের নিচের প্রবেশ্য
শিলা স্তর দ্বারা ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করে যে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর এর মধ্যে বাধা প্রাপ্ত
হয়ে যে সম্পৃক্ত জলভান্ডার এর সৃষ্টি করে বা ভুত্বকের মধ্যে মাটি রেগোলিথ ও শিলারন্ধ্রে
অবস্থিত জল যে জলভান্ডার সৃষ্টি করে, তাকে ভৌমজল বলে।
ভূ-অভ্যন্তরের
জল ও বায়ুর অবস্থান ও সঞ্চালনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেই ভৌম জল এর সঞ্চয়কে সাধারনত
দুইটি স্তরে ভাগ করা যায়
। যথা –

(ক) অসম্পৃক্ত স্তর:- অসম্পৃক্ত
স্তর বলতে বোঝায়, যে স্তর এর মধ্যে জল সঞ্চয় হতে পারে না বা যে স্তর এর জল ধারণ ক্ষমতা
নেই।
জলধারণ ক্ষমতার ওপর ভিত্তি
করে এই স্তরকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়
যথা

(a) মৃত্তিকা জলস্তর:- ভূপৃষ্টয়ের সবচেয়ে কাছের ও অসম্পৃক্ত
স্তর এর সবচেয়ে উপরের স্তরকে মৃত্তিকা জলস্তর বলে।
অর্থাৎ,
উদ্ভিদের শিকড় মাটির যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং উদ্ভিদ টার প্রয়োজন মত জল সংগ্রহ
করতে পারে
সেই স্তরকে মৃত্তিকা জলস্তর
বলে

(b) মধ্যবর্তী স্তর:- মৃত্তিকা ও কৈশিক স্তর এর মাঝে যে
স্তরের মধ্যে বাযু ও জল আবদ্ধ থাকে তাকে মধ্যবর্তী স্তর বলে।

Screenshot%202023 04 08%20202022
চিত্র : ‘ভৌম জলস্তর’

(c) কৈশিক স্তর:- এই স্তর হল অসম্পৃক্ত স্তর এর সবচেয়ে নিচের
স্তর।
এই স্তর এর মধ্যে বহু সরু সরু ছিদ্র পথ থাকেআর এই সরু ছিদ্র পথ বা নলের মধ্যে বাষ্পিভবনের পরিমাণ
বৃদ্ধি পেলে মাটির পৃষ্টটান বাড়লে ভৌমজল ওই নলের মাধ্যমে উপরের দিকে বেড়িয়ে আসে বা
কৈশিক উথান ঘটে, আর একেই কৈশিক স্তর বলে


(খ)সম্পৃক্ত স্তর:- অসম্পৃক্ত
স্তরের নিচে ভূ-অভ্যন্তরের য অংশ সারাবছর ধরে জল দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে তাকে সম্পৃক্ত
স্তর বা ফ্রিয়েটিক স্তর বলে। সম্পৃক্ত স্তর বা ফ্রিয়েটিক স্তর হল ভৌমজল এর প্রকৃত আধার।
জলতলের স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করে এই স্তরকে দুটি ভাগে
ভাগ করা যায়
যথা –

(a) অস্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর:- কৈশিক স্তর
এর নিচে যে অংশে ভৌমজল শুধুমাত্র আদ্র ঋতুতে পাওয়া যায় আথবা ভূঅভ্যন্তরে যে অংশে ভৌমজল
ঋতু ভেদে  ওঠানামা করে তাকে অস্থায়ী সম্পৃক্ত
স্তর বলে
আর এই স্তরে ক্রমাগত জল ওঠানামা
করে বলে একে পরিবর্তনশীল সম্পৃক্ত স্তরও বলা হয়ে থাকে

(b) স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর:- ভূ-অভ্যন্তরের
অপ্রবেশ্য শিলাস্তর এর উপরে যে অংশে সাধারনত সারবছর ধরে ভৌমজল তল পরিবর্তন না হয়ে স্থায়ীভাবে
ভৌমজল অবস্থান করে সেই স্থানকে বা অংশকে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর বলে
এই স্তর ভূ-অভ্যন্তরের ৭০০-১০০০ মিটার গভীরতায় অবস্থান
করে

প্রশ্ন: ভৌমজল সঞ্চয়ের নিয়ন্ত্রক গুলি আলোচনা
করো

উত্তর : ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বৃষ্টিপাতের জল ও তুষার গলা
জল ভূমি ভাগের প্রবেশ্য শিলা স্তর দ্বারা 
নিচের দিকে প্রবাহিত হয় এবং ভূগর্ভের অপ্রবেশ্য শিলা স্তর এর মধ্যে বাধা
প্রাপ্ত হয়ে অপ্রবেশ্য শিলা স্তর এর উপরে যে জল সঞ্চিত হয় তাকে ভৌম জল বলে।
ভূ-অভ্যন্তরের মধ্যে এই জল যে রেখা পর্যন্ত বা স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে সঞ্চিত
হয় সেই রেখা বা স্তর ভৌম জলস্তর বলে।

➥ ভৌমজলের
নিয়ন্ত্রকসমুহ :-

যেসব প্রাকৃতিক অবস্থা ও মানবীয়
কার্যাবলীর ভিত্তিতে ভূ- অভ্যন্তরের জলের অনুস্রবণ, সঞ্চয়, চলন ও পরিবর্তনকে
নিয়ন্ত্রণ করে ভৌম জলস্তর গড়ে তোলে
, তাদের ভৌমজলের নিয়ন্ত্রক বলে। ভৌম জলের নিয়ন্ত্রক গুলি
সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

(i)  অধঃক্ষেপণের
প্রকৃতি
, পরিমাণ
ও স্থায়িত্ব :- 
ভৌম জল সঞ্চয় এর ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, তুহিন প্রভৃতি এর
পরিমাণ ও স্থায়িত্ব ভৌম জলের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। এক্ষেত্রে যে সমস্ত অঞ্চলে
বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের পরিমাণ অত্যাধিক হারে থাকে সেই সমস্ত অঞ্চলে ভৌমজল
সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি থাকে। আবার যে সমস্ত অঞ্চলে অধঃক্ষেপণের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব
কম হয় সেই স্থানে ভৌম জল সঞ্চয় এর পরিমাণ কম লক্ষ্য করা যায়। যেমন- বর্ষাকালে
ভৌম জল-এর সঞ্চয় বেশি হয় এবং ভৌম জলতল উপরে উঠে আসে। আবার, শুষ্ক ঋতুতে ভৌমজল এর
সঞ্চয় কম হয় যার কারণে ভৌম জলতল খুব নিচে অবস্থান করে।

(ii) ভূমির ঢাল :- ভৌমজল
সঞ্চয়ের বা
ভৌমজল এর
নিয়ন্ত্রক গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ভুমির ঢাল। যেসব অঞ্চল অত্যাধিক ঢাল যুক্ত হয়ে
থাকে সেইসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও তুষার গলা জল খুব সহজে ঢাল বরাবর বয়ে যায়, যার কারণে
ভূপৃষ্ঠের নিচে প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে অত্যাধিক ঢাল যুক্ত অঞ্চলে খুব কম
পরিমাণে ভৌম জল সঞ্চয় হয় এবং ভৌম জলতল খুব নিচে অবস্থান করে। আবার যেসব অঞ্চল
মৃদু ঢাল যুক্ত বা সমভূমি প্রকৃতির সেই সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের জল খুব সহজে
ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং সেই জল সঞ্চিত হয়ে এক জলভন্ডার গড়ে তুলতে
সক্ষম হয়।

(iii) প্রবেশ্য শিলা স্তরের নিচে
অপ্রবেশ্য শিলা স্তরের অবস্থান :- 
ভু-অভ্যন্তরের মধ্যে ভৌম জলভান্ডার গড়ে ওঠার জন্য
একটি প্রবেশ্য শিলার নিচে অপ্রবেশ্য শিলার অবস্থান থাকা প্রয়োজন। কারণ প্রবেশ
শিলা স্তর দ্বারা জল প্রবেশ করে অপ্রবেশ্য শিলা স্তরে বাধা প্রাপ্ত হয়ে ভৌম জল
সঞ্চয় ভান্ডার গড়ে তুলবে।

(iv) শিলার প্রবেশ্যতা ও সছিদ্রতা :- বেলেপাথর, চুনাপাথর, চক
প্রভৃতি শিলা পর্যাপ্ত পরিমাণে সছিদ্রতা ও প্রবেশ্য প্রকৃতির হয়। আর এই সমস্ত
প্রবেশ্য শিলা যে সমস্ত অঞ্চলে অবস্থান করে সেই সমস্ত অঞ্চলে খুব সহজে ভূপৃষ্ঠীয়
জল ভূ- অভ্যন্তর সঞ্চিত হয়ে এক ভৌম জলভান্ডার তৈরি করতে সক্ষম হয়। আবার, যে
সমস্ত অঞ্চলে শ্লেট, ব্যাসল্ট, শেল প্রভৃতি অপ্রবেশ্য শিলার অবস্থান থাকে সেই
সমস্ত অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠীয় জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না।

(v) বাষ্পীভবনের মাত্রা :- যে সমস্ত অঞ্চলে সাধারণত বাষ্পীভবনের মাত্রা অত্যাধিক হারে হয় সেই সমস্ত অঞ্চলে সহজে ভৌম
জলভান্ডার গড়ে উঠতে দেখা যায় না। যেমন- মরুভূমি অঞ্চল।

(vi) ভূমি ব্যবহারের ধরন :- ভৌমজল সঞ্চয় এর একটি অন্যতম নিয়ন্ত্রক হলো ভূমি
ব্যবহারের  ধরন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে
পারে যে,
গ্রামাঅঞ্চল গুলিতে  ক্রমাগত
কৃষিকাজ ও পশুচারণ করা হয়ে থাকে যার ফলে মাটি উন্মুক্ত ও আলগা প্রকৃতির হয়ে পড়ে
আর ফলস্বরূপ ভূ অভ্যন্তরে অধিক পরিমাণে জলের অনুপ্রবেশ ঘটে। কিন্তু শহর বা নগর
গুলিতে পাকা বাড়ি রাস্তা প্রভৃতি ভৌমজলকে ভূ- অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়
যার ফলে সেখানে ভৌম জলের পরিমাণও কম হয়।

(vii) অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সমূহ :- উপরিক্ত ভৌমজল এর নিয়ন্ত্রক গুলি ছাড়াও আরো কিছু
নিয়ন্ত্রক রয়েছে। যথা

ভূপৃষ্ঠের আচ্ছাদন
,
শিলার ঢাল
,
উন্মুক্ত ভূমিভাগ প্রভৃতি।

প্রশ্ন : আর্তেজীয় কূপ এর গঠন চিত্রসহ আলোচনা কর। অর্তেজীয় কূপ সৃষ্টির শর্ত আলোচনা করো। 
আথবা, আর্টেজীয় কূপ কীভাবে সৃষ্টি হয় তা চিত্রসহযােগে বর্ণনা করাে । 

➥ অর্তেজীয় কূপ : যে কূপ থেকে পাম্পের সাহায্য ছাড়াই ভু অভ্যন্তরের জল বা আবদ্ধ অ্যাকুইফারে অবস্থিত ভৌম জল যদি তার নিজস্ব চাপে স্বাভাবিকভাবে ভূপৃষ্ঠের দুর্বল অংশ বা ফাটল দিয়ে অথবা কূপ ও নলকূপ খনন করলে, ফোয়ারার ন্যায় বেরিয়ে আসে তবে তাকে আর্তেজীয় কুপ বলে। উত্তর ফ্রান্সের আর্তোয়েস প্রদেশে সর্বপ্রথম এই ধরনের কূপ খনন করা হয় বলে সেই অঞ্চলের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় আর্তেজীয় কূপ।

➥ আর্তেজীয় কূপের উৎপত্তি বা গঠন : আর্তেজীয় কূপ গঠনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিশেষভাবে শিলার গঠনে লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

 (i) অধভঙ্গের আকারে শিলার অবস্থান : কোনো ভাজ যুক্ত অঞ্চলে যদি অধভঙ্গের আকারে একটি প্রবেশ্য শিলাস্তর এর উপরে ও নিচে দুটি অপ্রবেশ্য শিলার অবস্থান থাকে এবং যদি তাদের প্রান্তদেশ ভূপৃষ্টে উন্মুক্ত হয়, তবে তখন আর্তেজীয় কূপ বা প্রশ্রবণ গঠন হয়। 

(ii) অ্যাকুইফার গঠন : প্রবেশ্য শিলার দুই প্রান্তভাগ ভূপৃষ্টের বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে উন্মুক্ত হওয়ার কারণে, বৃষ্টিপাতের জল খুব সহজে প্রবেশ্য শিলার দ্বারা ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং অ্যাকুইফার এর উৎপত্তি ঘটায়। 

(iii) আর্তেজীয় অবস্থা সৃষ্টি : অ্যাকুইফারটি সাধারনত অপ্রবেশ্য শিলা দ্বারা আবদ্ধ থাকে যার ফলে ভৌমজল প্রচন্ড চাপে অবস্থান করে। আর জলচাপ তল ভূপৃষ্টের অনেকটা উপরে অবস্থান করে থাকলে ভৌমজলে এক উর্ধমুখী চাপের সৃষ্টি হয়। জলবাহী স্তরে এরূপ অবস্থাকে আর্তেজীয় অবস্থা বলে। 

%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%95%E0%A7%82%E0%A6%AA%20(Small)
চিত্র : আর্তেজীয় কূপ

(iv) ভৌমজলের বহিগমন : ক্রমাগত আবদ্ধ অ্যাকুইফার এর ভৌম জল এর উর্ধমুখী চাপের জন্য অ্যাকুইফার এর ওপর অবস্থিত অপ্রবেশ্য শিলা স্তরে কোন দুর্বল স্থান বা ফটলের সৃষ্টি হলে, আথবা কূপ বা নলকূপ খনন করলে সাধারনত পাম্প এর সাহায্য ছাড়াই ভূ-অভ্যন্তরের জল ভূ-পৃষ্টের বাইরে ফোয়ারার ন্যায় বেড়িয়ে আসে এবং অর্তেজীয় কূপের সৃষ্টি করে। 

অর্তেজীয় কূপ সৃষ্টির শর্ত : অর্তেজীয় কূপ সৃষ্টির পিছনে কিছু শর্ত বর্তমান রয়েছে। যেগুলি হল –
(i) ভাজ যুক্ত অধোভঙ্গ প্রকৃতির একটি প্রবেশ্য শিলা স্তর ও দুটি অপ্রবেশ্য শিলা স্তর এর অবস্থান থাকা  দরকার। 
(ii)  প্রবেশ্য শিলাস্তর এর অন্ততপক্ষে একটি দিক ভূপৃষ্টের মধ্যে উন্মুক্ত থাকা প্রয়োজন, যাতে ভৌম জলস্তর পরিপূর্ণ থাকতে পারে। 
(iii)  আবদ্ধ প্রবেশ্য শিলা স্তরটির মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পৃক্ত অ্যাকুইফার থাকতে  হবে, যাতে ভৌম জলের যোগান নিয়মিত হয়। 
(iv) প্রবেশ্য শিলাস্তরের দুই ধর যত উচুতে অবস্থান করবে তত ভৌমজলের চাপতল প্রশ্রবণ ছিদ্রমুখের উপরে অবস্থান করবে। যার ফলস্বরূপ জল ফোয়ারার ন্যায় বাইরে বেড়িয়ে আসবে। 

 প্রশ্ন :  প্রস্রবনের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা। 
আথবা, প্রস্রবণ কাকে বলে? প্রস্রবণের শ্রেণীবিভাগ করে আলোচনা করো। 
আথবা, চিত্রসহ প্রস্রবণ এর শ্রেণীবিভাগ করো। 

উত্তর : 

প্রস্রবণ : সাধারণ ভাবে বলা যায় যে, ভূপৃষ্টের কোন ছিদ্রপথ দ্বারা ভৌমজল স্বাভাবিক ভাবে ভূপৃষ্টের বাইরে বেড়িয়ে আসে, তাকে প্রস্রবণ বলে। আবার, ভূবিজ্ঞানী মঙ্কহাউস বলেছেন “কিছুটা বেগের সাথে ভূগর্ভের জল স্বাভাবিক ভাবে ভূপৃষ্টে  নির্গত হলে, তাকে প্রস্রবণ বলে।” 

প্রস্রবণকে সাধারনত বিভিন্ন ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। যেমন – (ক) জলের স্থায়িত্বের ভিত্তিতে প্রস্রবণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।  (খ) জলের উষ্নতার ভিত্তিতে প্রস্রবণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।  (গ) জলের উপাদানের ভিত্তিতে প্রস্রবণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।   (ঘ) শিলাস্তরের গঠন ও প্রকৃতি অনুসারে প্রস্রবণকে ৮ ভাগে ভাগ করা যায়। 

প্রশ্ন অনুযায়ী প্রস্রবণ এর শ্রেণীবিভাগ গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –

(ক) জলের স্থায়িত্বের ভিত্তিতে প্রস্রবণ : –

১) অবিরাম প্রস্রবণ : সাধারনত যে প্রস্রবণ দ্বারা সারা বছর ধরে নিয়মিত ভাবে ভৌমজল ভূপৃষ্টে  নির্গত হতে থাকে সেই প্রস্রবণকে অবিরাম প্রস্রবণ বলে। ভূঅভ্যন্তরে যদি অপ্রবেশ্য শিলাস্তর এর উপর প্রবেশ্য শিলাস্তর অবস্থান করে তবে প্রবেশ্য ও অপ্রবেশ্য শিলার সংযোগ স্থান আথবা সম্পৃক্ত স্তরের কোন অংশ উন্মুক্ত হয়ে পরে তবে সেই স্থানে এই প্রস্রবণ এর সৃষ্টি হয়। 
উদাহরণ : অবিরাম প্রস্রবণ এর উদাহরণ হল শোন নদীর উৎস স্থল সোনামুড়া  প্রস্রবণ। 
২) সবিরাম প্রস্রবণ : যে সব প্রস্রবণ গুলিতে সারাবছর ধরে ভৌমজল ভূপৃষ্টে  নির্গত হয় না, শুধুমাত্র কোন এক নির্দিষ্ট ঋতুতে বা সম্পৃক্ত স্তরের ভৌম জলতল এর উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেই ভৌমজল নির্গত হয়, সেইসব প্রস্রবণ গুলিকে সবিরাম প্রস্রবণ বলে। এইসব প্রস্রবণ গুলিতে সাধারনত আদ্র ঋতুতে বা বর্ষাকালে জল নির্গত হয়, এছাড়া শুষ্ক ঋতুতে ভৌম জলতল নিচে নামার কারণে এই প্রস্রবণ থেকে জল নির্গত হয় না। 
উদাহরণ : সবিরাম প্রস্রবণ এর উদাহরণ হল ঝাড়খন্ডের লুপুঙগুটু প্রস্রবণ । 

(খ) জলের উষ্ণতার ভিত্তিতে প্রস্রবণ : 

১) শীতল প্রস্রবণ : যে সব প্রস্রবণ দিয়ে ভূ-গর্ভের শীতল জল স্বাভাবিক ভাবে ভূপৃষ্টে নির্গত হয়, সেই সব  প্রস্রবণকে শীতল প্রস্রবণ বলে। এক্ষেত্রে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের তুষারগলা শীতল জলরাশি প্রবেশ্য শিলা দ্বারা ভূ-গর্ভে প্রবেশ করে অপ্রবেশ্য শিলা দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে ভূর ঢাল বরাবর বয়ে এসে ভূপৃষ্টে  নির্গত হয়ে থাকে। বিশ্বের অধিকাংশ প্রস্রবণ শীতল প্রস্রবণ এর মতো হয়ে থাকে। 
উদাহরণ :  ভারতের দুটি শীতল প্রস্রবণ এর উদাহরণ হল উত্তরাখণ্ডের  দেরদুনের সহস্রধারা ও মুসৌরির প্রস্রবণ। 
২) উষ্ণ প্রস্রবণ : যে প্রস্রবণ দ্বারা সাধারনত উষ্ণ জলরাশি স্বাভাবিক ভাবে ভূপৃষ্টে  নির্গত হয়, তাকে উষ্ণ প্রস্রবণ বলে। ভূ-গর্ভের মধ্যে সঞ্চিত ভৌমজল ভূ-তাপীয় শক্তি দ্বারা উত্তপ্ত হয়ে খনিজ সমৃদ্ধ হয় এবং ছিদ্র পথ দ্বারা নির্গত হয়ে এই প্রস্রবণ গড়ে তলে। আবার, ভূ-গর্ভের কোন উষ্ণ স্থান এর উপর দিয়ে ভৌমজল প্রবাহিত হওয়ার সময় জল উষ্ণ হয়ে এই প্রস্রবণ সৃষ্টি করে। 
উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর হল উষ্ণ প্রস্রবণের উদাহরণ।  

(গ) জলের উপাদানের ভিত্তিতে প্রস্রবণ :

আরও পড়ুন:  শ্বেত বিপ্লব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

১) স্বাদু জলের প্রস্রবণ : যে প্রস্রবণে ভূ-গর্ভ থেকে নির্গত জলের মধ্যে দ্রবীভূত খনিজ পদার্থ এর পরিমাণ প্রতি লিটারে ১ গ্রাম বা তার কম হলে, তাকে স্বাদু জলের প্রস্রবণ বলে। 

২) খনিজ জলের প্রস্রবণ : যে প্রস্রবণে ভূ-গর্ভ থেকে নির্গত জলের মধ্যে খনিজ দ্রব্য (লৌহ যৌগ, সালফার, সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতি) এর পরিমাণ অত্যাধিক হারে থাকলে, সেই প্রস্রবণকে  খনিজ জলের প্রস্রবণ বলে। 

(ঘ) শিলাস্তরের গঠন ও প্রকৃতি অনুসারে প্রস্রবণ : 

১) ভৃগুতট-পাদদেশ প্রস্রবণ :  কোন কোন সময় উচ্চভূমির একদিকের ঢাল খুব খাড়া প্রকৃতির হয়ে থাকে আবার আর এক দিক মৃদুঢাল সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর সাধারনত সেই খাড়া প্রকৃতির ঢালকে ভৃগুঢাল বা ভৃগুতট বলে। খাড়া ঢালের পাদদেশে বা ভৃগুতটে প্রবেশ্য ও অপ্রবেশ্য শিলার সংযোগ স্থল ভূপৃষ্টে উন্মুক্ত হয়ে যে প্রস্রবণ গড়ে ওঠে, তাকে ভৃগুতট-পাদদেশ প্রস্রবণ বলে। 
উদাহরণ : দেরাদুনের সহস্রধারা। 

2) নতিঢাল প্রস্রবণ : উচ্চভূমির যে দিকের ঢাল মৃদু প্রকৃতির হয় তাকে নতিঢাল বলে। আর নতিঢাল বরাবর প্রবেশ্য ও অপ্রবেশ্য শিলার সংযোগ স্থল ভূপৃষ্টে উন্মুক্ত হয়ে যে প্রস্রবণ গড়ে ওঠে, তাকে নতিঢাল প্রস্রবণ বলে। 

৩) অবনত জলপীঠ প্রস্রবণ : ভূপৃষ্টে জলপীঠ অবনত হলে ভূ-গর্ভের জল বাইরে বেরিয়ে এসে যে প্রস্রবণ গঠিত করে, তাকে অবনত জলপীঠ প্রস্রবণ বলে। 

৪) চ্যুতি প্রস্রবণ : যখন কোনো চ্যুতির ফলে প্রবেশ্য শিলাস্তর অপ্রবেশ্য শিলাস্তর এর উপর অবস্থান করে, তখন ভৌমজল আর নিচের দিকে বা ভূ-অভ্যন্তরে প্রবাহিত হতে পারে না এবং চ্যুতিতল বরাবর ভৌমজল বাইরের দিকে বেরিয়ে আসলে যে প্রস্রবণ সৃষ্টি হয়, তাকে চ্যুতি প্রস্রবণ বলে। 
উদাহরণ : হিমাচল প্রদেশের মণিকরণ প্রস্রবণ। 

৫) বিদার ও দারণ প্রস্রবণ : যেসব শিলা এর মধ্যে অসংখ্য ফাটল বা বিদার ও দারণ থাকে সেইসব শিলা দ্বারা জল ভূ-গর্ভে প্রবেশ করে ও পরবর্তী সময়ে সেই জল ভূপৃষ্টের উন্মুক্ত অংশ দ্বারা বাইরে বেরিয়ে আসে যে প্রস্রবণ এর সৃষ্টি হয়, তাকে বিদার ও দারণ প্রস্রবণ বলে। 

৬) ডাইক ও সিল প্রস্রবণ : সম্পৃক্ত প্রবেশ্য শিলাস্তরকে ডাইক ও সিলের আগ্নেয় উদবেধ উল্লম্ব বা তির্যকভাবে ছেদ করলে তার পেছনে ভৌমজল আটকে পড়লে জলতল উপরে উঠে ভূপৃষ্টে সদ্ভেদ স্থলে যে প্রস্রবণ গড়ে ওঠে, তাকে ডাইক ও সিল প্রস্রবণ বলে। 

৭) সমান্তরাল প্রস্রবণ : ভুত্বকে অনেকগুলো সমান্তরাল শিলাস্তর এর মাঝে একটি প্রবেশ্য শিলাস্তর থাকলে তাতে সঞ্চিত ভৌমজল থেকে যেসব প্রস্রবণ সৃষ্টি হয়, আর সেগুলো সমান্তরাল প্রকৃতির হওয়ায় সমান্তরাল প্রকৃতির প্রস্রবণ বলা হয়। 

৮) দ্রবন বা ভ্যক্লুসিয়ন প্রস্রবণ : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের জল শিলা দারণ ও ফাটল দ্বারা ভূ-গর্ভে প্রবেশ করে চুনাপাথর এর সাথে দ্রবীভূত হয়ে শিলার ফাটল গুলিকে ক্রমাগত প্রসারিত ও সুগভীর করে তলে। অন্যদিকে সেই জল ভূ-গর্ভে প্রবাহিত হতে হতে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর এর মধ্যে বাধা প্রাপ্ত হয়ে  অপ্রবেশ্য শিলার ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়ে চুনাপাথর স্তর এর পাদদেশে যে প্রস্রবণ গড়ে তলে তাকে দ্রবন বা ভ্যক্লুসিয়ন প্রস্রবণ বলে। ফ্রান্সের রোন্  নদীর উপত্যকায় অবস্থিত ‘ফনটেন দ্য ভ্যক্লুস প্রস্রবণ’ নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।
উদাহরণ : মুসৌরির কেম্পটি জলপ্রপাতের উৎস্ প্রস্রবণ হল দ্রবন বা ভ্যক্লুসিয়ন প্রস্রবণ এর উদাহরণ। 

 প্রশ্ন : গিজার কাকে বলে ? গিজার এর উৎপত্তি আলোচনা করো। 

➲ গিজার : এক ধরনের উষ্ণ প্রস্রবণ এই হল গিজার বা গাইজার। আইসল্যান্ডীয় শব্দ “Geysir” থেকে ‘গিজার’ শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ হল ‘গর্জন’। আগ্নেয়গিরি সংকলিত অঞ্চলের যে উষ্ণ প্রস্রবণ এর মধ্য থেকে ভূ-অভ্যন্তরের অত্যন্ত উষ্ণ জল ও বাষ্প নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফোয়ারার মতো সশব্দে প্রবল বেগে বাইরে বেরিয়ে আসলে,  তখন তাকে গিজার বা গাইজার বলে। আইসল্যান্ডের Great Geysir  এর নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে গিজার এর সংখ্যা প্রায় ৪১৫ টি। 

➲ উদাহরণ : যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োলোস্টোন পার্কের ওল্ড ফেথফুল গিজার হল গিজার এর উদাহরণ। 

➲ উৎপত্তি : যেসব উষ্ণ প্রস্রবণ এর ছিদ্রপথ সংকীর্ণ ও ছিদ্রপথটি ভূ-অভ্যন্তরের অনেক গভীরে বা আগ্নেয় শিলা আথবা ম্যাগমা অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত সাধারনত সেইসব প্রস্রবণ গিজার এ পরিণত হয়। উষ্ণ প্রস্রবণ এর ছিদ্রপথ দ্বারা প্রবেশ করা জল ভূ-অভ্যন্তরে উষ্ণ অঞ্চলের সাথে সংস্পর্শে আসলে সেই জল বাষ্পে পরিণত হয়। জল বাষ্পে পরিণত  হওয়ার ফলে তার আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং উওরিভাগের জলরাশিকে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে। ফলস্বরূপ সেই ভিষণ চাপ সেই জলরাশি সহ্য না করতে পেরে সশব্দে ও প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে সেই জল শীতল হয়ে পড়লে পুনরায় সেই সংকীর্ণ ছিদ্রপথ দ্বারা ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আর কিছুটা সময় পর সেই জল পুনরায় উৎতপ্ত হলে একই ভাবে সশব্দে ও প্রবল বেগে ফোয়ারার ন্যায় বাইরে বেরিয়ে আসে। এই ভাবেই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে, আর এই জন্যই গিজার এর থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর উষ্ণ জল বেরিয়ে আসে। এই ভাবে গিজার এর উৎপত্তি ঘটে থাকে। 

➲ গিজার এর বৈশিষ্ট্য :  গিজার এর বৈশিষ্ট গুলি নিচে আলোচনা করা হল – 

(i) গিজার হল এক ধরনের উষ্ণ প্রস্রবণ। 
(ii) গিজার এর থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর উষ্ণ জল বেরিয়ে আসে। 
(iii) গিজার থেকে উষ্ণ জল সশব্দে ও পবল বেগে ফোয়ারার ন্যায় বেরিয়ে আসে। 
(iv) আইসল্যান্ডের Great Geysir  এর নাম অনুসারে গিজারের নামকরণ করা হয়। 
(v) উষ্ণ প্রস্রবণ গুলি ভূ-অভ্যন্তরের উষ্ণ অঞ্চলের সাথে সংস্পর্শে আসার কারণে গিজার এর সৃষ্টি হয়। 

 প্রশ্ন : বিভিন্ন প্রকার তটভূমি সম্পর্কে আলোচনা করো ।
আথবা, তটভূমি কাকে বলে? তটভূমির বিভিন্ন অংশের বিবরণ দাও ?

তটভূমি : মরা কোটাল এর সময় সমুদ্র জলের নিম্নসীমা বিশিষ্ট স্থান থেকে সমুদ্র জলের উচ্চ সীমা বা জোয়ারের উচ্চ জলসীমা পর্যন্ত, যা সমুদ্রবির পাদদেশ অবধি বিস্তারিত।  এই বিস্তারিত অংশটিকে বলা হয় তটভূমি। 

অবস্থান অনুযায়ী তটভূমির চারটি অংশ রয়েছে।  যথা –  (i) পশ্চাৎ তটভূমি, (ii) সম্মুখ তটভূমি, (iii) পুরোদেশীয় তটভূমি, (iv) পশ্চাৎদেশীয় তটভূমিতটভূমির এই চারটি অংশ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। 

(i) পশ্চাৎ তটভূমি : সমুদ্র জলের উচ্চ সীমা থেকে ভৃগুতট বা খাড়া পাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত তটভূমির সবচেয়ে পেছনের যে অংশে ঝটিকা তরঙ্গের জল আসতে পারে সেই অংশটিকে বলা হয় পশ্চাৎ তটভূমি। 

(ii) সম্মুখ তটভূমি : সমুদ্র জলের নিম্ন সীমা অর্থাৎ বাটার সময় কার জল যতদূর পর্যন্ত নেমে যায় সেই নিম্ন সীমা থেকে সমুদ্র জলের উচ্চ সীমা অর্থাৎ জোয়ারের সময় জল যতদূর পর্যন্ত উপরে উঠে সেই উচ্চ সীমা পর্যন্ত বিস্তারিত অংশটি বা তার মধ্যবর্তী অংশটিকে বলা হয় সম্মুখ তটভূমি। 

(iii) পুরোদেশীয় তটভূমি : সমুদ্র জলের নিম্ন সীমা থেকে মহিষোপানের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তটভূমির সবথেকে সামনের যে অংশে সর্বদা জলমগ্ন থাকে তাকে পুরোদেশীয় তটভূমি বলে।  এই অংশটি সর্বদা জলমগ্ন থাকে কখনো উন্মুক্ত হয় না।
Screenshot%202023 04 16%20094107
চিত্র :  তটভূমি অঞ্চল 

(iv) পশ্চাৎদেশীয় তটভূমি : সম্মুখ তটভূমি ও পুরোদেশীয় তটভূমি এর মধ্যবর্তী যে স্থানে তরঙ্গ ভঙ্গ বা উর্মী ভঙ্গ এর সৃষ্টি হয় তাকে পশ্চাৎদেশীয় তটভূমি  বলে।  তট ভূমির এই অংশটি সম্মুখ তটভূমির সামনে ও পুরোদেশীয় তটভূমির পেছনে অবস্থান করে।

প্রশ্ন : সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো। 

উত্তর : সমুদ্র তরঙ্গের ক্ষয় কার্যের ফল এই সৃষ্ট শিলাচূর্ণ নুড়ি  বালি কাকোর পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে উপকূল ভাগ ও অগভীর সমুদ্রের যেসব ভূমিরূপ গঠন করে সেই সব ভূমিরূপকে সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ বলে চিহ্নিত করা হয়। সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভূমিরূপ হল – সৈকত ভূমি, সৈকত শিরা, সামুদ্রিক বাঁধ, লবণাক্তক জলভূমি প্রভৃতি।  সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।


১) সৈকত ভূমি : সমুদ্র তরঙ্গ দ্বারা ক্ষয়জাত পদার্থ যেমন নুরী বালি কাকোর শিলাখন্ড প্রকৃতি উপকূল অঞ্চলে বা উপকূল ভাগে সঞ্চিত হয়ে সামান্য ঢাল যুক্ত যে সমতল ভূমি ভাগের সৃষ্টি করে তাকে সৈকত  ভুমি বলে। 

 বৈশিষ্ট্য : 

(i) সৈকত ভূমি সাধারণত দীর্ঘ ও বিস্তীর্ণ হয়ে থাকে। 

(ii) সৈকত ভূমি সমতল প্রকৃতির হয়ে থাকে। 

(iii) ছোট আকৃতির সৈকত ভূমি পকেট সৈকত নামে পরিচিত। 

উদাহরণ : ভারতের দীঘা উপকূল ও গোয়া উপকূল এর মধ্যে সৈকত ভূমি লক্ষ করা যায়।


২) সৈকত শিরা : সমুদ্র তরঙ্গের দ্বারা ক্ষয়ীভূত পদার্থ সৈকত ভূমির উপর সঞ্চিত হয়ে যে স্বল্প উচ্চতা যুক্ত আঁকাবাঁকা ভূমিরূপ এর সৃষ্টি করে থাকে তাকে সৈকত শিরা বলে।

 বৈশিষ্ট্য : 

(i) সৈকত  সিরাপ সাধারণত সৈকত ভূমি এর ওপর গড়ে ওঠে। 

(ii) এই ভূমিরূপটি স্বল্প উচ্চতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। 

(iii) এই ভূমিরূপটি কম প্রস্থ যুক্ত দীর্ঘাকার হয়ে থাকে। 

উদাহরণ : ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু উপকূলে সৈকতশীরা ভূমিরূপটি লক্ষ্য করা যায়। 


৩) সামুদ্রিক বাঁধ : সমুদ্র তরঙ্গ তারা ক্ষয়ীভূত পদার্থ যেমন  নুরি বালি শিলা চূর্ণ পলি কাকর প্রভৃতি সমুদ্র বক্ষে সঞ্চিত হয়ে উপকূলের সমান্তরালে জলের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে যে বাঁধের ন্যায় ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে সামুদ্রিক বাঁধ বলে। 

আরও পড়ুন:  প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠার অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উদাহরণ : ভারতের পূর্ব উপকূলে মহানদীর মোহনায় সামুদ্রিক বাঁধ লক্ষ্য করা যায়। 


সামুদ্রিক বাঁধ এর আকৃতি ও অবস্থান অনুসারে আরো ৫ টি  ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – পুরোদেশীয় বাঁধ, টম্বোলো,  প্রতিবন্ধক প্রাচীর, অনুতটীয় বাঁধ, স্পিট। 


(ক) পুরোদেশীয় বাঁধ : সমুদ্র তরঙ্গের দ্বারা ক্ষয়ীভূত পদার্থ সঞ্চিত হয়ে উপকূল ভাগের সমান্তরালে অগভীর সমুদ্রে যে বাঁধ গড়ে ওঠে তাকে পুরোদেশীয় বাঁধ বলে।

যেমন – চিলকা হ্রদের কাছে এরকম অনেক পুরোদেশীয় বাঁধ  লক্ষ্য করা যায়। 


(খ) প্রতিবন্ধক প্রাচীর : অগভীর সমুদ্রে সামুদ্রিক বাঁধ সৃষ্টি হওয়ার কারণে সামুদ্রিক লবণাক্ত জল সেই বাঁধের  মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে উপহ্রদ গঠন করে। আর যে সব বাঁধকে কেন্দ্র করে উপহ্রদ সৃষ্টি হয় সেইসব বাঁধকে প্রতিবন্ধক প্রাচীর বলে। 

যেমন – কৃষ্ণ নদীর মোহনায় এরকম প্রতিবন্ধক প্রাচীর লক্ষ্য করা যায়। 


(গ) অনুতটীয় বাঁধ :  উপকূল থেকে সামান্য দূরে সৈকতের উপর উপকূল ভাগের  সমান্তরালে  গঠিত জোয়ারের সময় সম্পূর্ণভাবে জলের মধ্যে নিমজ্জিত বালির বাঁধকে অনুতটীয় বাঁধ বলে। এই বাঁধ সাধারণত জোয়ারের জলে নিমজ্জিত হয় এবং ভাটার সময় উন্মুক্ত হয়। 


(ঘ)  টম্বোলো : যে সামুদ্রিক বাঁধ একটি দ্বীপকে মূল ভূখণ্ড  এর সাথে যুক্ত করে বা পরস্পর দুটি দ্বীপকে যুক্ত করে একটি সেতুর নয় ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে টম্বোলো বলে। 

যেমন – ভারতের কঙ্কন উপকূল অঞ্চলে টম্বোলো  দেখা যায়। 


(ঙ)   স্পিট : সমুদ্র তরঙ্গ দ্বারা ক্ষয়ভূত  পদার্থ উপকূল ভাগে সঞ্চিত হয়ে সমুদ্রের দিকে অবক্ষিপ্ত হয়ে এবং রেখার আকারে অবস্থান   করে, যে ভূমিরূপ গঠন করেতাকে স্পিট বলে। 

স্পিটকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – হুক স্পিট, যৌগিক হুক স্পিট প্রভৃতি। 

যেমন – ভারতের কলিঙ্গ পত্যনামের কাছে এরকম স্পিট  লক্ষ্য করা যায়। 


৪) লবণাক্ত জলাভূমি :  সমুদ্র তরঙ্গ দ্বারা ক্ষয়ীভূত পদার্থ সমুদ্র বক্ষে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন বাঁধ এর সৃষ্টি করে থাকে।  আর পরবর্তী সময়ে এই বাঁধ দ্বারা সমুদ্রের লবণাক্ত জল উপকূল বাঁধে বা বাঁধের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যে জলাভূমি সৃষ্টি করে তাকে লবণাক্ত জলাভূমি বলে। 

বৈশিষ্ট্য :

(i) অনেক সময় এটি সম্পূর্ণভাবে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

(ii) এই জলাভূমিতে উদ্ভিদ ও প্রাণী সেরকম ভাবে লক্ষ্য করা যায় না। 

উদাহরণ : ভারতের কচ্ছের রণ অঞ্চল হল একটি লবণাক্ত জলভূমির উদাহরণ। 

প্রশ্ন: কাস্ট অঞ্চলের ক্ষয়জাত ভূমিরুপগুলি সম্পর্কে চিত্র সহ আলোচনা করো।

কাস্ট অঞ্চল : ‘কাস্ট’ হল একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ হল ‘উন্মুক্ত প্রস্তর ময় ভূমি’। চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে জলের দ্রবণ প্রক্রিয়ার ফলে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভূমিরুপ গড়ে ওঠে। ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরুপগুলি দ্রবণ, কার্বনেশন প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। 

উদাহরণ : পূর্বতম যুগোস্লাভিয়ার অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের ডালমেশিয়ান উপকূল হল কাস্ট অঞ্চলের উদাহরণ। 

কাস্ট অঞ্চলের ক্ষয়জাত ভূমিরুপ : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বা কাস্ট অঞ্চলে দ্রবণ ও কার্বনেশন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ভূমিরুপগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল। 

(১) ল্যাপিস বা কারেন্টস : কাস্ট অঞ্চলে চুনাপাথরের স্তরে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্রবনের ফলে সৃষ্ট খাদগুলির মধ্যবর্তী অংশে সংকীর্ণ ও সুচোলো উচ্চ ভূমি ল্যাপিস নামে পরিচিত। চুনাপাথর যুক্ত খাড়া ঢাল সম্পন্ন অঞ্চলে এই ভূমিরুপ লক্ষ্য করা যায়। 

উদাহরণ : অন্ধ্রপ্রদেশের বোরাগুহাতে এরূপ ভূমিরুপ লক্ষ্য করা যায়। 

(২) ক্লিন্ট ও গ্রাইকস : কাস্ট অঞ্চলের কোন উন্মুক্ত চুনাপাথরের স্তর যদি দরন বা ফাটল যুক্ত হয় তবে সেই ফাটল যুক্ত স্থানে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্বারা দ্রুত দ্রবণ প্রক্রিয়া ঘটে বা বিক্রিয়া ঘটে সেই ফাটল অংশটি আরো প্রসস্থ হয়ে পড়ে এবং খাতের ন্যায় অবস্থান করে। আর এই খাতগুলিকে গ্রাইকস বলে ও দুটি খাতের মধ্যবর্তী উঁচু অংশকে ক্লিন্ট বলে। 

উদাহরণ : ক্লিন্ট ও গ্রাইকস লক্ষ্য করা যায় মধ্যপ্রদেশের নন্দিনী খনি অঞ্চলে।

(৩) সিঙ্ক হোল : কাস্ট অঞ্চলে বা চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড যুক্ত ক্ল দ্বারা দ্রবণ ক্ষয় কার্যের ফলে ভূপৃষ্টে যে অবনমিত স্থানের বা ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে সিঙ্ক হোল বলে। সিঙ্ক হোল গুলি সাধারণত কয়েক সেমি থেকে ২ মিটার পর্যন্ত গভীর হয় এবং এগুলি ফানেল আকৃতির হয়ে থাকে। 

উদাহরণ : একটি বিখ্যাত সিঙ্ক হোল হল ছত্রিশগড়ে রায়পুরের ধামতারি সিঙ্ক হোল। 

(৪) ডোলাইন ও উভালা : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে ক্রমাগত বহু সময় ধয়ে ক্ষয় সাধন হওয়ার ফলে সিঙ্ক হোল গুলির আকার বড়ো হয় এবং কোন কোন সময় ছোট ছোট সিঙ্ক হোল গুলি একসাথে জুড়ে একটি বড়ো আকৃতির অবনিমিত স্থানের সৃষ্টি করে থাকে, যা ডোলাইন নামে পরিচিত। আর একাধিক ডোলাইন পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে যে বৃহৎ আকৃতির অবনমিত স্থানের সৃষ্টি করে তাকে উভালা বলে। আবার ছোট আকারের উভালাকে জামা বলে। 

উদাহরণ : অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপকূল অঞ্চলে অসংখ্য ডোলাইন এবং বসস্নিয়া অঞ্চলে উভালা লক্ষ্য করা যায়। 

(৫) পোলজি : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে উভালা আপেক্ষাকৃত বৃহৎ, দীর্ঘায়িত ও সমতল তলদেশ বিশিষ্ট খাড়া ঢাল যুক্ত গর্তকে পোলজি বলে। পোলজির ওপরের অংশ পলি দ্বারা আবৃত থাকে। পোলজির মধ্যে ছোট ছোট ঢিবি দেখা যায় যা হামস নামে পরিচিত। 

উদাহরণ : পূর্বতম যুগোস্লাভিয়র লিভেনো পোলজি বিখ্যাত। 

(৬) চুনাপাথর গুহা : চুনাপাথর অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে চুনাপাথর স্তর ধসে পড়ে যে বিশাল আকারের গহ্বরের সৃষ্টি করে তাকে চুনাপাথর গুহ বলে। দ্রবণ ও অবঘর্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই গুহার সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

উদাহরণ : সুইজারল্যন্ডের হলোক গুহ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যমথ গুহা হল চুনাপাথর গুহার উদাহরণ। 

অন্যান্য ভূমিরুপ : উপরিক্ত অংশে আলোচিত ভূমিরুপ গুলি ছাড়াও, সোয়ালো হোল, গিরিখাত, শুষ্ক উপত্যকা, অন্ধ উপত্যকা প্রভৃতি ভূমিরুপের সৃষ্টি হয়ে থাকে কার্স্ট অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে। 

প্রশ্ন: কাস্ট অঞ্চলে সৃষ্ট সঞ্চয়জাত ভূমিরুপ গুলি চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তর : চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্বারা চুন দ্রবীভূত হয়। আর এই দ্রবীভূত চুন মিশ্রিত জল গুহার মধ্যে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন আকৃতির সঞ্চয়জাত ভূমিরুপের সৃষ্টি করে। চুনাপাথরের গুহায় সৃষ্ট সঞ্চয়জাত ভূমিরুপকে একত্রে স্পেলিয়ো-থেম বলে। 

কাস্ট অঞ্চলের সঞ্চয়জাত ভূমিরুপ : কাস্ট অঞ্চলের সঞ্চয়জাত ভূমিরুপকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – 

(১) পাতন পাথর : চুনাপাথরের জলীয় দ্রবনে বা দ্রবণ ফোটার আকারে নিচে পড়ে যেসব ভূমিরুপ এর সৃষ্টি হয়, তাদের একত্রে পাতন পাথর বা Drip Stone বলে। গঠনের তারতম্য অনুসারে পাতন পাথর বিভিন্ন প্রকার হয়। যেমন –

(ক) স্ট্যালাকটাইট : চুনাপাথর গুহার ছাদ থেকে চুনাপাথর মিশ্রিত জলীয় দ্রবণ যখন নিচের দিকে পড়ে, তখন গুহার ছাদ এর মধ্যে শুকিয়ে লম্ব ভাবে চুন দন্ডের আকারে ঝুলন্ত ভাবে অবস্থান করে যে ভূমিরুপের গঠন করে, তাকে স্ট্যালাকটাইট বলে। 

উদাহরণ : স্ট্যালাকটাইট দেরাদুনের তপকেশ্বর গুহায় দেখা যায়। 

(খ) স্ট্যালাকমাইট : চুনাপাথর মিশ্রিত জলীয় দ্রবণ গুহার মেঝেতে সঞ্চিত হয়ে যে ক্যালসাইট দন্ডের ন্যায় ভূমিরুপ সৃষ্টি করে, তাকে স্ট্যালাকমাইট বলে। 

উদাহরণ : মেঘালয়ের চেরা মালভূমি অঞ্চলে চুনাপাথর গুহায় এরূপ ভূমিরুপ লক্ষ্য করা যায়। 

(গ) স্তম্ভ : চুনাপাথরের গুহায় ক্রমাগত চুন মিশ্রিত জলীয় দ্রবণ সঞ্চিত হয়ে স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাকমাইট অধিক বিস্তার লাভ করলে পরস্পরে মিলিত হয়ে স্তম্ভের ন্যায় যে ভূমিরুপ সৃষ্টি করে, তাকে স্তম্ভ বলে। 

(ঘ) হেলিকটাইট : চুনাপাথরের গুহায় চুন মিশ্রিত জলীয় দ্রবণ সঞ্চিত হয়ে যে বিভিন্ন আকৃতির বিচিত্র মূর্তি সৃষ্টি করে, তাদের হেলিকটাইট বলে। 

(ঙ) ড্রেপ : স্ট্যালাকটাইটের আকারে সঞ্চিত জলীয় দ্রবণ চুনাপাথরের গুহায় পর্দার ন্যায় খাঁচ কাটা আকারে অবস্থান করলে তাকে ড্রেপ বলে। 

(চ) গ্লেব্লুলাইট : গুহার ছাদে জলীয় দ্রবণ সঞ্চিত হয়ে ছোট গোলাকার আকৃতি ধরণ করলে তাকে গ্লেব্লুলাইট বলে। 

image_title_here
‘পাতন পাথর’

(২) প্রবাহ পাথর : চুনাপাথরের গুহায় প্রবাহিত জলধারার দ্বারা যেসব ভূমিরুপ গঠিত হয়, সেইসব ভূমিরুপকে প্রবাহপাথর বলে। 

(৩) প্রান্ত পাথর : চুনাপাথরের গুহায় প্রবাহিত জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে প্রবাহিত জলধারার দ্বারা দুই পাশে যে ভূমিরুপের সৃষ্টি হয়, তাকে প্রান্ত পাথর বলে। 

প্রশ্ন: কাস্ট অঞ্চলের ভূমিরূপ সৃষ্টির অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো।

কাস্ট অঞ্চল : ‘কাস্ট’ হল একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ হল ‘উন্মুক্ত প্রস্তর ময় ভূমি’। চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে জলের দ্রবণ প্রক্রিয়ার ফলে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভূমিরুপ গড়ে ওঠে। ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরুপগুলি দ্রবণ, কার্বনেশন প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। 

উদাহরণ : পূর্বতম যুগোস্লাভিয়ার অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের ডালমেশিয়ান উপকূল হল কাস্ট অঞ্চলের উদাহরণ। 

ভূমিরুপ সৃষ্টির অনুকূল ভৌগলিক পরিবেশ : আদর্শ কাস্ট অঞ্চল গড়ে ওঠার জন্য কতগুলি বিশেষ ভৌগলিক পরিবেশ বা শর্তাবলীর প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেসব পরিবেশ বা শর্তবলীগুলি নিন্মরূপ আলোচনা করা হল। 

(১) অঞ্চলের বিশালতা : কাস্ট অঞ্চল গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অঞ্চলের বিশালতা এক বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। কার্স্ট অঞ্চলটি সুবিশাল বা অধিক বিস্তরিত হলে জলের দ্রবণ কার্য সঠিক ভাবে পরিপূর্ণতা পায় এবং শিলার ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন ভূমিরুপের সৃষ্টি করে। 

(২) পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত : কাস্ট অঞ্চলে গড়ে ওঠার জন্য সাধারণত ৩০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যদি অত্যাধিক হয় তবে খুব সহজে সেই বৃষ্টিপাতের জল নিন্মগামী হয়ে তার দ্রবণ কার্য বা ক্ষয় কার্য সিদ্ধি করে এবনহ বিভিন্ন ভূমিরুপ গড়ে ওঠে। 

(৩) উষ্ণতার হার : কাস্ট অঞ্চল গড়ে ওঠার জন্য সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেট উষ্ণতা থাকা উচিত। এর কারণ হল, এই অঞ্চলের উষ্ণতা যদি অত্যাধিক হয় তবে জল বাষ্পিভূত হয়ে যাবে এবং জল ভূঅভ্যন্তরে কম প্রবেশ করে। ফলস্বরূপ জলের দ্রবণ কার্য সম্পন্ন হয় না এবং ভূমিরুপ গড়ে উঠবে না। অর্থাৎ এই অঞ্চলের উষ্ণতা সমান্য থাকলে কার্স্ট অঞ্চল গড়ে উঠতে উপযোগী। 

(৪) শিলার গভীরতা : কাস্ট অঞ্চল গড়ে ওঠার জন্য শিলার গভীরতা এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চুনাপাথর স্তর বা শিলা ভূ-অভ্যন্তরে যতদূর বা গভীর পর্যন্ত বিস্তরিত হয়, তত বেশি জলে অনুশ্রাবন ঘটে এবং জলের দ্রবণ কার্য সিদ্ধি হয় ও বিভিন্ন ভূমিরুপ গড়ে ওঠে। 

(৫) দ্রব্য শিলার উপস্থিতি : কাস্ট অঞ্চলগুলিতে সাধারণ দ্রব্য কার্বনেট সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ চুনাপাথরের অবস্থান থাক দরকার, ফলে জলের দ্রবণ প্রক্রিয়া হবে এবং বিভিন্ন ভূমিরুপ সৃষ্টি করবে। এছাড়াও শিলার মধ্যে চক, ডলোমাইট, জিপসাম প্রভৃতি সহজ দ্রব্য থাকা দরকার। 

(৬) সমুদ্রপৃষ্ট থেকে উচ্চতা : কাস্ট অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থান করলে ভৌমজল একটি স্থানীয় ক্ষয় সীমা সৃষ্টি করে এবং দ্রবণ ক্ষয়কে আরও দ্রুত করে তুলে। যার ফলে খুব সহজেই বিভিন্ন ভূমিরুপ গড়ে উঠে। 

অন্যান্য পরিবেশ : উপরিক্ত অংশে আলোচিত পরিবেশ গুলি ছাড়াও, প্রবেশ্য শিলা স্তরের অবস্থান, অপ্রবেশ্য স্তরের অবস্থান প্রভৃতি ভৌগলিক পরিবেশের ফলে গড়ে ওঠে কাস্ট অঞ্চলের ভূমিরুপ। 

Leave a Comment